গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তাল গাছ কাউনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে

প্রকাশ : 2024-11-25 17:09:43১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তাল গাছ কাউনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে

ঐ দেখা যায় তাল গাছ ঐ আমাদের গাঁ, কবির সেই কবিতা এখন আর শিশুরা পড়ে না। প্রাকৃতির বৈদ্যুতিক আর্থিং নামে খ্যাত তালগাছ ও তাল বাঙ্গালির ঐতিহ্যের সাথে জড়িত, শিতে তাল পিঁঠা খেতে কতই না সুস্বাদু, নতুন প্রজন্মের শিশুরাও আজ তা থেকে বঞ্চিত। কাউনিয়ায় বিভিন্ন গ্রাম গুলোতে এক সময়ে তাল গাছের ছড়াছড়ি ছিল। কৃষি বিভাগের উদাসিনতায় সেই তাল গাছ দিন দিন বিলুপ্তির পথে। 

সরেজমিনে উপজেলা বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, একসময়ের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় বৈদ্যুতিক আর্থিং হিসেবে পরিচিত তাল গাছ আগের মতো আর দেখা যায় না। একসময় তালের কাঠ দিয়ে তৈরি হতো মজবুত ঘর। আধুনিক নগর সভ্যতার যুগে ক্রমবর্ধমান মানুষের আবাসন চাহিদা পূরণের জন্য বনভূমির গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলছে। কৃষি বিভাগের উদাসিনতায় তাল গাছও ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাউনিয়ায় আশপাশের এলাকায় বিলুপ্ত প্রায় বজ্র প্রতিরোধক তাল গাছ। বিগত বছর গুলোতে আকাশ থেকে বিদ্যুৎ (চরক) পড়ে মানুষের মৃত্যুর মিছিল বাড়তে থাকায় বিশেজ্ঞদের মতামত নিয়ে সরকার তালগাছ রোপনের উদ্বোগ গ্রহন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাল ও নারিকেল এবং খেজুর গাছ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও বজ্রপাত প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য রক্ষা ও শোভাবর্ধনেও তাল ও নারিকেল এবং খেজুর গাছের জুড়ি মেলা ভার। একটা সময় বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের পাশে সারি-সারি তাল গাছ শোভা পেতো। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় তাল গাছের জুড়ি মেলা ভার। আকাশ থেকে বিদ্যুৎ পড়লে তা শোষনকারী গাছ হিসেবে তালগাছ গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন কারে। বিগত বছর গুলোতে কাউনিয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধিন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসের মাধ্যেমে বিপুল পরিমান অর্থ বরাদ্দ প্রদান করে উপজেলায় প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেনা তালের বীজ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখাগেছে সরবরাহকৃত তালের বীজের একটি চারাও গজায় নাই। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে তালের বিচি রোপণ করতে হয়। প্রবাদ আছে বারো বছরে ফলে তাল, যদি না লাগে গরুর পাল। তালের লম্বা জট পুড়ে দাঁতের মাজন হয়, তাল পাতার পাখা হয়, ঘরের ছাউনি হয়, তাল গাছে বাবুই পাখি বাসা বানায়, সবুজের সমারোহ ছড়ায়, তালের রসে বলকারক ঔষধ হয়, তাল গাছে কোন্দা (নৌকা) হয়। তালের কাঠ খুবই মজবুত বিধায় ঘরের খুঁটি কিংবা আড়া খুব ভালো হয়। তাল গাছ দীর্ঘজীবী, মজবুত ও লম্বা হয়, এত গুণাগুণের গাছ দেশে খুব কমই আছে। বাবুই পাখির কিচি মিচি শব্দে প্রাণ জুড়াত গ্রামের মানুষের। এখন আর আগের মত বাবুই পাখির কিচির মিচির শব্দ ও দৃষ্টি নন্দন বাসা তাল গাছে চোখে পরে না। গ্রাম গুলোতে বিগত সময়ে বাবুই পাখির বাসা দেখা গেলেও পরিবেশ বিপর্যয় ও সচেতনতার অভাবে তাল গাছ বিলুপ্তির ফলে বাবুই পাখির বাসা আর চোখে পড়ে না। তাল গাছের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পী স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখিও। তাল গাছ লাগানোর ব্যাপারে সামাজিক বনায়ন কর্মকর্তা ও কৃষি বিভাগের কোন ভুমি কা নাই। কৃষি কর্মকর্তা জানান, তালগাছ ধীরে বাড়ে তাই অনেকে লাগাতে চায় না, তবে আমরা চেষ্টা করছি তাল গাছ লাগাতে। নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিদুল হক জানান বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তালুকশাহবাজ গ্রামের প্রয়াত মনছুর আলী ও মরহুম নুর হোসেন মাষ্টার বেচে থাকা কালিন পরিবেশের কথা চিন্তা করেই তারা নিজ উদ্যোগে বেশ কিছু তালগাছ লাগিয়েছেন। স্থানীয় পরিবেশ প্রেমিরা বলেন সরকারের অর্থ অপচয় রোধ করে তাল গাছ ও বাবুই পাখির সংরক্ষনের দাবী জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট।