গুরুত্বপূর্ণ নথি নিরাপদে সংরক্ষণের নির্দেশ

প্রকাশ : 2025-01-05 14:55:36১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

গুরুত্বপূর্ণ নথি নিরাপদে সংরক্ষণের নির্দেশ

সচিবালয়ে গভীর রাতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীদের টহল আরও জোরদার, অফিস থেকে বের হওয়ার আগে সব বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুন লাগে। এ ঘটনায় ষষ্ঠ থেকে নবম তলায় থাকা পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর পুড়ে যায়। আগুনে পুড়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ নথি। আগুন নির্বাপণ করতে গিয়ে পানির সরবরাহ লাইন সংযোগ দেওয়ার সময় ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী ট্রাকচাপায় নিহত হন।

এ ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। প্রাথমিক প্রতিবেদনও দিয়েছে কমিটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগুনের ঘটনায় কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ মেলেনি। বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশনের কারণে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত।

গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি বলেন, সরকার যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল সেখানে বুয়েট, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, সেনাবাহিনীর বোমা ও ডগ স্কোয়াড এবং পুলিশ বাহিনী থেকে সিআইডির টিম কাজ করেছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে সবাই এক মত হয়েছি যে, বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশনের কারণে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। এর সঙ্গে নাশকতা কিংবা অন্য কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ভয়াবহ ওই আগুনের ঘটনার পর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আওতাধীন দপ্তর-সংস্থায় চিঠি পাঠিয়ে অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।

সচিবালয়ে আগুন লাগার পরিপ্রেক্ষিতে সতর্ক থাকার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৯ ডিসেম্বর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর, পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ড, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই), সরকারি আবাসন পরিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের প্রশাসনিক কেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়সহ সারা দেশে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দপ্তর ও সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় পাঁচটি নির্দেশনা প্রতিপালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হলো।

গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের ৫ নির্দেশনা

১. দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীদের টহল অধিকতর জোরদার করতে হবে। সন্দেহজনক কিছু পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তার দায়িত্বে কর্মরতদের অবগত করতে হবে।

২. অফিসপ্রধানরা অফিস ত্যাগের আগে আবশ্যিকভাবে দপ্তরের সব বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যথাসময়ে অফিস ত্যাগ করবেন।

৩. কর্মরত নৈশপ্রহরীরা ভবনের মধ্যে ও ভবনের চারপাশে সার্বক্ষণিক টহলে থাকবেন।

৪. সব অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

৫. কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর গাফিলতির কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তা ব্যক্তিগত দায় হিসেবে বিবেচিত হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের নির্দেশনা

আগুনের ইস্যুতে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (মাউশি)। এ বিষয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ), বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস), প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য বোর্ডকেও এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব দপ্তর ও সংস্থা প্রধানকে জানানো যাচ্ছে যে, অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও নির্বাপণ বিষয়ে আপনার দপ্তরে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা জরুরি। আপনার সংস্থায় অনতিবিলম্বে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং ভবনের জন্য জনচলাচল স্থান উন্মুক্ত করা, সিঁড়িগুলো চলাচল উপযোগী করা এবং অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদির সুষ্ঠু ব্যবহারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া এসব কাজে নিয়োজিত সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশনা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

বৈদ্যুতিক সুইচ যথাসময়ে বন্ধ করার নির্দেশ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের

সব ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার এবং অফিস থেকে বের হওয়ার আগে নিজ নিজ অফিস কক্ষের সব বৈদ্যুতিক সুইচ যথাসময়ে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। গত ২৬ ডিসেম্বর এ বিশেষ চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়।

খাদ্য অধিদপ্তর, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সব অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটজনিত অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে এ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাপ্তরিক কাজে ব্যবহৃত সব ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির যথাযথ ব্যবহার এবং অফিস থেকে বের হওয়ার সময় নিজ নিজ কক্ষের সব বৈদ্যুতিক সুইচ, সকেট প্লাগগুলো বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।

স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিরাপদে সংরক্ষণের নির্দেশ

বৈদ্যুতিক সুইচ বন্ধ করাসহ অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিরাপদে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। মন্ত্রণালয়ের সব অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, সহকারী সচিব, প্রোগ্রামার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের বিভিন্ন অনুবিভাগ, অধিশাখা ও শাখা পর্যায়ের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম যেমন— এসি, ওভেন, কেটলি, হিটার, কম্পিউটার, ফ্যান, লাইট, মোবাইল চার্জার ইত্যাদি ব্যবহারের পর অফিস কক্ষের বৈদ্যুতিক সুইচগুলো বন্ধ করাসহ অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিরাপদে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সচিবালয়ের মতো জায়গায় এত বড় আগুন অকল্পনীয়। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।

 

সা/ই