গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতির লালসার শিকার বাংলার মালালা

প্রকাশ : 2022-05-07 13:04:48১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতির লালসার শিকার বাংলার মালালা

গাজীপুরের শ্রীপুরে এক মানবাধিকার কর্মী ও নারী উদ্যোক্তাকে বিয়ের প্রলোভনে দেড় বছর যাবত ধর্ষণ করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্ত শাহীন আলম (৩২) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধনুয়া (নগর হাওলা) গ্রামের ওয়াহিদ মিলিটারীর ছেলে।

ভিকতটিম তৃণমূলে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ, শিশু ও নারী অধিকার বিষয়ক বিভিন্ন কর্মকান্ডে দেশী বিদেশী অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। নরওয়ে সরকারের আমন্ত্রণে সেদেশ ভ্রমণ করেও তিনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছেন। এসব কাজের পাশাপাশি তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে এলাকায় কনজ্যুমার ফুড আইটেম ও কসমেটিক্সের ব্যবসা করছেন।

ওই নারী অভিযুক্ত শাহীন আলমের বিরুদ্ধে বৃহষ্পতিবার (৫ মে) শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একই সাথে তার ফেইসবুক ওয়ালে সুবিচার না পেলে আত্মাহুতির তথ্য দিয়ে জানান, অভিযুক্ত শাহীন আলম গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। ওই পোস্টে তিনি অভিযুক্তের ছবিও যুক্ত করছেন।

ভিকটিমের সাথে কথা বলে ও থানায় দেওয়া তার অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, ২০২১ সনের প্রথম দিকে শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় তার বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক নানা কর্মসুচীতে অভিযুক্ত শাহীন আলম তাকে ফলো করতে থাকে। গত  বছরের ৮ জুলাই মধ্য রাত আনুমাণিক ১টার দিকে ভিকটিমের সাথে ফেইসবুক মেসেঞ্জারে ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে বার্তা আদান প্রদান ও পন্য নিয়ে অভিযুক্তের সাথে দেখা করতে বলে। পরদিন বিকেল ৪টার দিকে অভিযুক্তের সাথে দেখা করতে রওয়ানা হলে ভিকটিমকে সন্ধ্যায় যেতে বলে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে শ্রীপুরের জৈনাবাজার এলাকায় ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে গেলে শাহীন আলম ফোনে ভিকটিমকে তার অফিসে ডেকে নেয়। সেখানে আপ্যায়নের পণ্য দেখানোর সময় এক পর্যায়ে ভিকটিমকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে।

ভিকটিম জানায়, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধে মামলা থেকে বিরত থাকে। অভিযুক্ত শাহীন আলম গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের পদ-পদবী প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কাবিন একটি বাঁধা হতে পারে বলে কাবিন রেজিস্ট্রী পরে করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এরপর থেকে অভিযুক্ত ভিকটিমকে ডেকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় মেলামেশা করে। ইতোমধ্যে কৌশলে ভিকটিমের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অতি সম্প্রতি অভিযুক্ত ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং বুধবার (৪ মে) আনুষ্ঠানিক বিয়ে করে।

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আইনজীবি মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, ভিকটিম তার প্রতিবেশী ভাতিজি। ঘটনার কিছু সময় পর ভিকটিম শাহীন আলমের মাধ্যমে অপমানিত এবং লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ করে। পরে দুই পক্ষকে ডেকে আনলে শাহীন আলম অভিযোগ অস্বীকার করে। বয়সে ছোট হওয়ায় তারাও কোনো বিষয় আমাকে খুলে বলেনি এবং দুজনেই পূর্ণ বয়স্ক হওয়ায় আমিও তাদের গোপনীয়তার বিষয়ে আগ্রহী হইনি। পরে ভিকটিম জানায় তাদের মধ্যে মীমাংসা হয়ে গেছে। কিন্তু কী কারণে বা কার প্ররোচনায় অভিযোগের বর্ণনায় আমাকে আনা হল তা বুঝতে পারছি না।

সদ্য বিলুপ্ত গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিন বলেন, অভিযুক্ত শাহীন আলম তাঁর কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। বিষয়টি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছেন। এরকম হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষী প্রমাণিত হলে আইনগত উপায়ে তার শস্তি হওয়া দরকার।

শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজ ইমিতিয়াজ ভুঁইয়া অভিযোগ প্রাপ্তির তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ভিকটিমকে নারী ও শিশু আদালতের মাধ্যমে আইনের আশ্রয়ে যাওয়ার পরার্মশ দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্তের পরিবারে সাথে এবং অভিযুক্তের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।