গাজীপুরে টানা দুই দিন সড়ক অবরোধ, দীর্ঘ ৩৫ কিলোমিটার যানজট
প্রকাশ : 2024-11-11 12:29:05১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বকেয়া বেতনের দাবিতে শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া টিএনজেড অ্যাপারেলস পোশাক কারখানার শ্রমিকদের অবরোধে অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি), ক্রাইম ডিভিশন, ট্রাফিক ডিভিশন, শিল্প পুলিশ ও যৌথ বাহিনীসহ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরও তাদের কথা একটাই, বেতন না দিলে সড়ক ছাড়বো না।
সোমবার (১১ নভেম্বর) সকাল থেকেই মালেকের বাড়ি এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বেতনের দাবিতে তারা বিক্ষোভ করছে। কোনোরকম বিশৃঙ্খলা এবং ভাঙচুর এড়াতে আশপাশের ১২টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পালাক্রমে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধে অংশ নিচ্ছেন। যেসব শ্রমিক রাতে সড়কে অবস্থান করেছেন, তারা ফিরে যাচ্ছেন সকালে, যারা রাতে বাসায় ছিলেন তারা সকাল থেকে মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন।
গাজীপুর ভোগরা বাইপাস হয়ে জয়দেবপুর, বনমালা, টঙ্গী দিয়ে অল্প সংখ্যক যানবাহন চলাচল করছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রীরা গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তায় নেমে হেঁটে এবং বিকল্প পথে তাদের গন্তব্য যাত্রা করছে। যেসব যাত্রী উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে যাচ্ছেন তারা গাজীপুর চৌরাস্তা ও চন্দ্রা হয়ে তাদের গন্তব্য যাচ্ছেন।
শিল্প পুলিশ জানায়, টিএনজেড অ্যাপারেলসের লিমিটেড, বেসিক ক্লোথিং লিমিটেড, অ্যাপারেলস প্লাস ইকো, বেসিক নিটওয়্যার লিমিটেড, অ্যাপারেল আর্ট লিমিটেড কারখানার প্রায় চার হাজার শ্রমিক গত তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। কয়েক দফায় বেতন পরিশোধের দিন ও সময় নির্ধারিত হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ কথা রাখেনি। টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে আছেন। আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরও বেতন হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কোনও কথাই শুনতে তাদের ভালো লাগছে না বলে জানান শ্রমিকরা।
৪৮ ঘণ্টা ধরে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও চালকরা। অনেকে ট্রেনে এবং বিকল্প সড়ক দিয়ে যাতায়াতের চেষ্টা করছেন। কোনও যানবাহন যাওয়ার চেষ্টা করলেই শ্রমিকেরা লাঠি হাতে নিয়ে তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। সেগুলো আটকানোর চেষ্টা করছেন। মহাসড়কের উভয় পাশে দক্ষিণে টঙ্গী পর্যন্ত এবং উত্তরে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত সর্বমোট ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট লেগে আছে। সড়ক অবরোধের কথা না জেনে বাসা থেকে বের হওয়ায় অনেক যাত্রীকে হেঁটে তাদের গন্তব্য যাত্রা করতে দেখা গেছে। তবে তিন দিন ধরে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করলেও কোনও শ্রমিককে যানবাহন ভাঙচুর করতে দেখা যায়নি। তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানান।
এদিকে, গতকাল থেকেই গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বিকল্প সড়ক ব্যবহারে অনুরোধে করে একটি ট্রাফিক আপডেট দেওয়া হয়েছে। ওই আপডেটে বলা হয়েছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ব্যবহারকারী যাত্রীদের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে, বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে গার্মেন্টসের শ্রমিকরা ভোগড়া বাইপাস ও মালেকের বাড়ির মাঝামাঝি কলম্বিয়া গার্মেন্টসের সামনে (শনিবার) সকাল থেকে অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন। তাই সম্মানিত যাত্রীদেরকে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকেই শ্রমিকদের বারবার বলেছি, সড়ক ছেড়ে দিয়ে সরে যাওয়ার জন্য। তাদের একটাই কথা, আমরা বেতন না পাওয়া পর্যন্ত সড়ক থেকে উঠবে না।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার (এসপি) সারোয়ার আলম বলেন, একাধিকবার মালিক পক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে বেতন দিতে পারেননি। তারা এখন আর কারও কথা বিশ্বাস করছে না। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তাদের কথা বেতন হাতে না পেয়ে মহাসড়ক ছাড়বো না। শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের বিষয়টি বিজিএমইএসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করছি, খুব দ্রুত সমাধান হবে।
কা/আ