গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত করবে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ

প্রকাশ : 2021-05-28 09:01:09১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত করবে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের হামাসের মধ্যে ১১ দিনের সংঘাতের ঘটনার তদন্ত করতে যাচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ। ওই সংঘাত তদন্তের দাবি নিয়ে তোলা একটি প্রস্তাবের বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ওই ভোটাভুটি হয়। এতে তদন্তের পক্ষে মত দেয় পরিষদের ফোরামের বেশির ভাগ সদস্য।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি ও জাতিসংঘের ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি ইসরায়েল–হামাস সংঘাতের তদন্তের জন্য ওই প্রস্তাব আনে। বৃহস্পতিবার পুরোদিন দিন ওই প্রস্তাবের ওপর অধিবেশন চলে। এরপর হয় ভোটাভুটি। এতে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৪৭ সদস্যের ফোরামের মধ্যে ২৪টি দেশ পক্ষে এবং নয়টি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়। আর ১৪টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।

ওই প্রস্তাবে ইসরায়েল–হামাস সংঘাত তদন্তের জন্য একটি স্থানীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়। এই কমিশন ইসরায়েল, গাজা, দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেবে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, গাজায় ব্যাপক মাত্রায় হতাহতের ঘটনায় তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি সতর্ক করেন, ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করতে পারে। ইসরায়েলের দিকে হামাসের নির্বিচারে রকেট নিক্ষেপকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মিশেল ব্যাশেলেট আরও বলেন, সামরিক কাজে ব্যবহৃত ইসরায়েলি জঙ্গিবিমান গাজার বেসামরিক ভবনে হামলা চালিয়েছিল এমন কোনো প্রমাণ তিনি দেখতে পাননি। তিনি বলেন, ‘হামলা যদি সমানুপাতিক হারে না হয় , তাহলে সেটা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।’ ইসরায়েলে নির্বিচারে রকেট হামলার জন্য গাজার সরকার হামাসের সমালোচনাও করেন বাচেলেট।

গত ১০ মে শুরু হওয়া গাজায় ইসরায়েলের ১১ দিনের অভিযানে অন্তত ২৫৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। যাদের মধ্যে ৬৬ জনই শিশু। আহত হন ১ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

হামাস ইসরায়েলের দিকে কয়কে হাজার রকেট ছোড়ে, যার বেশির ভাগই আয়রন ডোম পদ্ধতি দিয়ে মাঝ আকাশেই ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েল। তবে হামাসের হামলায় দুই শিশুসহ ১২ জন নিহত হন।

গাজায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রার প্রকাশ করতে গিয়ে ব্যাশেলেট, ‘যদিও ইসরায়েলি হামলাগুলো ছিল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সদস্য ও তাঁদের স্থাপনাকে লক্ষ্য করে কিন্তু এর ফলে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক লোক নিহত ও নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেসামরিক স্থাপনাও।’

এর মাধ্যমে জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা গাজায় সরকারি ভবন, আবাসিক ভবন, আন্তর্জাতিক সহায়তা কেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও সংবাদমাধ্যমের অফিসে আঘাত হানার ব্যাপারে ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, ধ্বংস হওয়া অনেক ভবন গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো তাদের সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করত বলে ইসরায়েল যে দাবি করেছে, আমরা কিন্তু এর এমন কোনো প্রমাণ দেখেনি।’


ব্যাশেলেট আরও বলেন, নিজের নাগরিক ও তাঁদের ঘরবাড়ি রক্ষা করা ইসরায়েল অধিকার, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ফিলিস্তিনিদেরও সেই অধিকার আছে। একই অধিকার।

এই সংঘাতের তদন্তের বিরোধিতা করেছে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলেছে, ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে অগ্রগতি এসেছে, তা ব্যাহত করবে এই তদন্তের সিদ্ধান্ত।

ইসরায়েল বলেছে, ওই তদন্তের ব্যাপারে কোনো ধরনের সহযোগিতা তারা করবে না। গতকাল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আজকের লজ্জাজনক সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ইসরায়েলবিরোধী মনোভাবের আরেকটি উদাহরণ।’

তবে হামাস জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের এই পদক্ষেপেরর স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের নিজেদের ‘বৈধ প্রতিরোধ’ চলবে। ইসরায়েলকে যত দ্রুত সম্ভব শাস্তি দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।