গাজার ক্ষুধার্তদের পাশে দাঁড়ালেন ক্রিকেটার বিথী
প্রকাশ : 2024-04-25 13:39:14১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ইসরায়েলি আগ্রাসনে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় খাদ্যাভাবে দিনদিন বাড়ছে হাহাকার। খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়া গাজায় একবেলা খাবার পাওয়া এখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। গাজার ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা প্রদানে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থা। সেই তালিকায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ, আছে ব্যক্তি উদ্যোগও। তেমন একটি নাম আরিফা জাহান বিথী। গত চার মাস ধরে গাজায় আর্থিক সহায়তা পাঠাচ্ছেন সাবেক এই নারী ক্রিকেটার। সহায়তার অর্থে খাবারসহ প্রয়োজনীয় পোশাক ও শিশুসামগ্রী কিনছেন গাজার বাস্তুচ্যুত অসহায় মানুষের জন্য। বিথীর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি অ্যান্ড হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন মনে করছে গাজার বিভিন্নস্থানে মানবিক সহায়তা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গাজার এতিম শিশুসহ অসহায় মানুষের জন্য সহায়তা চাইছেন আরিফা জাহান বিথী। এই সাবেক নারী ক্রিকেটার ইতোমধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে ৩ বারসহ গত চার মাসে বিভিন্নজনের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তার অর্থ স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে গাজার নিপীড়িত মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
এ কার্যক্রম প্রসঙ্গে আরিফা জাহান বিথী জানান, মানবিক এই সহায়তা গাজায় পৌঁছে দিতে ফিলিস্তিনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক মিস্টার নাওয়াল এবং বাংলাদেশের মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম তাকে সহযোগিতা করছেন। তাদের মাধ্যমে গত চার মাসে কয়েক দফায় আর্থিক সহায়তা পাঠানোর মাধ্যমে গাজার এতিম শিশু ও বাস্তুচ্যুত অসহায় মানুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে রান্না করে খাবার পরিবেশন, পোশাক ও ওষুধের ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবক।
তিনি বলেন, আমি এবং আমার সংগঠন থেকে আমরা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। সেই ধারাবাহিকতায় গাজার মানুষের জন্য আমরা এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছি। গাজার বেশিরভাগ মানুষ বর্তমানে তাবুতে জীবনযাপন করছে। তাদের খাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে গাজার মানুষের জন্য এগিয়ে এলে খাদ্য সংকট থেকে অনাহারের ঝুঁকি বা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন গণমাধ্যমে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার মানুষের কষ্টের কথা উঠে আসছে। ইসরায়েল গাজার খাদ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করছে। খাদ্যের অভাবে বাধ্য হয়ে সেখানকার কোথাও কোথাও মানুষ ঘাস পর্যন্ত খাচ্ছে। দূষিত পানি পান করেছেন। গাজায় ত্রাণের গাড়ি প্রবেশ করলে মানুষ সাহায্যের জন্য একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। একদিকে পেটে ক্ষুধা অন্যদিকে ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা। গাজাজুড়ে এখনও হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েল বাহিনী। অসহায় শিশু-কিশোরদের ছবি দেখলে চোখে পানি চলে আসে, মনটা তাদের জন্য কাঁদে। তাই নিজের জায়গা থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য সামান্য কিছু হলেও সহায়তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।
বিথী তার উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। চাইলে এই কার্যক্রমে সামর্থ্য অনুযায়ী যে কেউ সহযোগিতা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া কেউ যদি পরিচয় গোপন রাখতে চান, তাও করা হবে। এই উদ্যোগে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে বিকাশ ও নগদ করতে পারেন ০১৮৬৭৫৭৮২৩০ নম্বরে। এছাড়া রকেটে ০১৮৬৭৫৭৮২৩০৬ নম্বরে সহযোগিতা পাঠাতে পারেন।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরও ৭৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩৪ হাজার হাজার ২৫০ জন। এছাড়া গত অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৭৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। বুধবার (২৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে এবং গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত আরও ৭৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮৬ জন আহত হয়েছেন বলে বুধবার ওই অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সা/ই