গাছে হোয়াইট ফ্লাই’র আক্রমনে ধ্বংসের মুখে নারকেল শিল্প
প্রকাশ : 2022-01-11 21:04:09১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বাগেরহাটে নারকেল গাছে হোয়াইট ফ্লাইর আক্রোমনে নারকেলে উৎপাদন মাত্রাতিরিক্ত হারে কমে যাওয়ায় ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হতে বসেছে জেলার নারকেল শিল্পের। নারকেল গাছ বাগেরহাট জেলার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। এ জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই কম-বেশি নারকেল গাছ রয়েছে। জেলার চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি এর ওপর ভিত্তি করে জেলায় গড়ে উঠছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। তবে হোয়াইট ফ্লাই(সাদা মাছি)সহ নানা কারনে জেলায় নারকেল গাছের ফলন কমেছে ৩০ থেকে ৩৫ এর শতাংস। শুধু ফলন কমে যাওয়া নয় ২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া হোয়াইট ফ্লাই পোকার আক্রমণ এখন মারাত্মক আকার ধারন করেছে। এর প্রভাবে মরতে শুরু করেছে নারকেল গাছ। জেলায় ৪০ থেকে ৪৫ টি নারকেলের অয়েল মিল থাকলে ও এখন নানা প্রতিবন্ধকতায় তা নেমে এসেছে ৫টিতে। তবে জেলা কৃষি বিভাগ বলছে সংক্রমণ ঠেকাতে জেলা কৃষকদের কীটনাশক প্রয়োগসহ নানা পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। আর কৃষকরা বলছেন এখনই নারকেল গাছের এ সংক্রমণ ঠেকানো না গেছে ভয়াবহ আকার ধারন করবে।
সরোজমিনে জেলার সদর উপজেলার কাড়াপাড়া, ষাটগম্বুজ, যাত্রাপুর, ফকিরহাট উপজেলা ও কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নারকেল গাছের পাতার ওপর কালো আবরণ পড়েছে। পাতার নিচে রয়েছে তুলার মতো সাদা রঙ্গের পোকা। এই পোকাগুলোই বলা হয় হোয়াইট ফ্লাই বা সাদা মাছি। পোকাগুলো প্রথমে পাতার ওপর বসে। পরে পাতায় মাকড়সার জালের মতো আবরণ তৈরি করে। প্রতিদিন এর পরিমাণ বাড়তে থাকে। এর ফলে ধীরে ধীরে ওই গাছের পাতা নষ্ট হয়ে গাছ দূর্বল হয়ে পরে। গাছের ফল দেয়ার ক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে গাছে এ পোকার আক্রমণে একটি সময় গাছ মারা যায়।
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের ছরোয়ার হোসেন (মাস্টার) বলেন, “আমার ঘেরের পাড়ে (মাছের খামার) প্রায় ৫০টির মত নাইরকেল গাছ সহ আমার বাগানে ৩ শতাধিক নারকেল গাছ রয়েছে। বছরে এই গাছ থেকে আমি দেড় থেকে ২ লক্ষ টাকার নারকেল বিক্রি করেছি। গত ২ বছর ধরে আমার নাইরকেল গাছের ফলন কমতে শুরু করেছে আর যা উৎপাদন হচ্ছে তাও আবার সাইজে অনেক ছোট। এখন বছরে ৩০ হাজার টাকারও নারকেল বিক্রি করতে পারি না। “সাদা সাদা পোকের কারনে, আমাদের নারকেল গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। নারকেল গাছের মাথি (মাথা) মরে যাচ্ছে। গাছ মরে যাচ্ছে। ফলণও কমে যাচ্ছে। আমার মত গ্রামের সবার গাছের একই অবস্থা। আমরা এর প্রতিকার চাই”।
বাগেরহাট সদর উপজেলার মদিনা অয়েল মিলের মিস্ত্রী বাদল হাওলাদার বলেন, বাগেরহাটে আগে ৪০/৪৫ টি অয়েল মিল থাকলে নারকেলের ফলন কমে যাওয়াসহ নানা কারনে এখন ৫টির মত ফ্যাক্টরী রয়েছে। পোকার আক্রমনে নারকেলের ফলন কমে যাওয়ায় দাম দৃদ্ধি ও আকারে অনেক ছোট হওয়ার কারনে মালিকগনের পক্ষে লাভ করা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমিকদের পর্যাপ্ত বেতন দিতে না পারার ফলে অনেক মালিকই মিল বন্ধ করে দিয়েছেন। নারকেলের ফলন আগের মত বৃদ্ধি পেলে নারকেল শিল্প ঘুরে দাড়ানো সম্ভব বলে তিনি জানান।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে জেলায় ৩ হাজার ৬১৯ হেক্টর জমিতে নারকেল গাছের আবাদ হয়েছে। এ অর্থ বছরে জেলায় নারকেলের উপাদন হয় ৩০ হাজার ৯৩৬ মেট্রিক টন। তবে পরিমান বলতে না পারলেও বিগত অর্থ বছরের চেয়ে জেলায় নারকেল গাছের আবাদ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংস কমেছে বলে দাবী করছে কৃষি বিভাগ।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে বাগেরহাট জেলায় নারকেল গাছে হোয়াইট ফ্লাই বা সাদা মাছি ব্যাপক ভাবে আক্রমন করেছে। এটি আসলে ২০১৯ সালে দেখা যায়। বর্তমানে এর প্রভাবে জেলায় নারকেলের ফলন ৩০ থেকে ৩৫ শতাংস কমে গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ^ বিদ্যালয় থেকে একদল বিজ্ঞানী এসে সরোজমিনে বিষয়টি পর্যাবেক্ষণ করেছেন। তারা দেখেছেন প্রায় ৬১টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছে এই পোকা আক্রমণ করে। বিশেষ করে নারকেলের পরে কলা এবং পেয়ারা গাছে এই পোকা অবস্থান করে। আমরা বর্তমানে কৃষকদেরকে “ইমিডা ক্লোরোফিড জাতীয়” ঔষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। যেহেতু নারকেল গাছ অনেক লম্বা। এ কারনে ফুট পাম্প এর মাধ্যমে স্প্রে করতে হয় এবং সব গাছে একসাথে করতে হয়। আসলে এটি ভালো ভাবে দমন করতে হলে “আইপিএম” (সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা) এর মাধ্যমে দমন করা দরকার”। কিন্তু এই পোকা দমনে “আইপিএম” (সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা) এর সঠিক গাইড লাইন এখন পর্যন্ত হয়নি। “আইপিএম” (সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা) গাইড লাইন হলে এটি কার্যকর ভাবে দমন করা সম্ভব হবে।