‘গভর্নরহীন’ বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশ : 2022-07-04 14:55:23১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

‘গভর্নরহীন’ বাংলাদেশ ব্যাংক

তিন দফায় ৬ বছর ৩ মাস বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষ করে গতকাল রবিবার (৩ জুলাই) বিদায় নিয়েছেন ফজলে কবির। গভর্নর হিসেবে নতুন নিয়োগ পাওয়া আব্দুর রউফ তালুকদার আগামী ১২ জুলাই যোগ দেবেন। ফলে আজ সোমবার (৪ জুলাই) থেকে প্রায় এক সপ্তাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদটি খালিই থাকছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, গভর্নরের অবর্তমানে ডেপুটি গভর্নররা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে এ দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে রবিবার (৩ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব মো. জেহাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংককে গভর্নরের অবর্তমানে দৈনিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়।

ওই আদেশে বলা হয়েছে, গভর্নর ফজলে কবিরের মেয়াদপূর্তিতে ৪ জুলাই থেকে নতুন গভর্নর যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত দৈনন্দিন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নররা স্ব স্ব ক্ষেত্রে তাদের দৈনিক কার্যক্রম করবেন। আর ডেপুটি গভর্নর-১ আহমেদ জামাল গভর্নরের দৈনিক ডাক দেখবেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রেরণ করবেন।
 

রউফ তালুকদারকে অপেক্ষা করতে হবে যে কারণে

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের সরকারি চাকরির মেয়াদ ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত। গভর্নর পদে যোগ দিতে হলে তাকে সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিতে হবে। আগামী ১১ জুলাই থেকে তার স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন রাষ্ট্রপতির কার্যালয় অনুমোদন দিয়েছে।

সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর দ্বাদশ অধ্যায়ে ‘অবসর, ইস্তফা ইত্যাদি’ বিষয়ে বিবরণ দেওয়া আছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর যেকোনও সময় একজন সরকারি কর্মচারী অবসর নিতে পারেন। তবে অবসর গ্রহণের ৩০ দিন আগে ওই কর্মচারীকে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার ইচ্ছা লিখিতভাবে জানাতে হবে। আরও উল্লেখ আছে, এই ইচ্ছা চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং তা সংশোধন বা প্রত্যাহার করা যাবে না।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকলেও ৪ জুলাই গভর্নর পদে যোগ দিলে আব্দুর রউফ তালুকদারকে আইন লঙ্ঘন করতে হবে এবং পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রেও তার সুবিধা কমবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আব্দুর রউফ তালুকদারকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ১১ জুন। এদিকে আগামী ১০ জুলাই ঈদুল আজহা উদযাপনের পর অফিস খুলবে ১২ জুলাই। ওইদিনই নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দেবেন আব্দুর রউফ তালুকদার।

আব্দুর রউফ তালুকদার ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই অর্থসচিব হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে ২০১৭ সালের অক্টোবরে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্বে আসেন। তার আগে তিনি এই বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, উপসচিব ও যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া অর্থ বিভাগের অধীনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বিসিএস ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা রউফ তালুকদার চাকরিজীবনে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আর্থিক ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন, বিশেষ করে দেশের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে। মহামারি করোনার সময় দেশের ক্রান্তিকালে অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন রউফ। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় তার পরামর্শ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বেশ প্রশংসনীয়।

অর্থ বিভাগের বিভিন্ন পদ ছাড়াও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদফতরের উপ-রেজিস্ট্রার এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিবের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে আব্দুর রউফ তালুকদারের। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে সহকারী সচিব ছিলেন তিনি।

আব্দুর রউফ তালুকদার ১৯৬৪ সালে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার তারাকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি থেকে এমএসসি ডিগ্রি নেন।

২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। এর পরদিন ১৬ মার্চ সাবেক অর্থসচিব ফজলে কবিরকে চার বছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ দেয় সরকার। পরে ২০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকে ১১তম গভর্নর হিসেবে যোগদান করেন ফজলে কবির। সে হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৯ মার্চ। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৪ দিন আগে ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিন বাড়িয়ে দেয় সরকার। যা ওই বছর ৩ জুলাই শেষ হওয়ার কথা ছিল।

ওই সময় এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি গভর্নর থাকবেন। পরে গভর্নর পদের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ৬৭ বছর বয়স করে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন করা হয়। ফলে ফজলে কবিরের মেয়াদও ২০২২ সালের ৩ জুলাই পর্যন্ত বেড়ে যায়।