গণভোটের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ মানুষ বুঝতে পারছে না : মির্জা ফখরুল
প্রকাশ : 2025-11-22 15:48:12১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর)’ পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি তুলে এতদিন জনগণকে ভুল পথে পরিচালিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, “একটা রাজনৈতিক দল সমানে চিৎকার করেছে…পিআর দিতে হবে, পিআর না হলে নির্বাচন হবে না। অনেক হুঙ্কার- টুংকার হয়েছে, তাই না? এখন আবার সুর নরম হয়ে গেছে।
“এখন দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের জন্য সব চতুর্দিকে দৌড়, ঢাক-ঢোল চলছে। এই জিনিসগুলো ঠিক না। মানুষকে যেটা বলবেন, সেটা সঠিকভাবে বলা উচিত এবং সেই পথে যাওয়া উচিত। কিন্তু মানুষকে বোকা বানিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করা ইসলাম ধর্মের কোথাও বলেছে, এটা আমার জানা নাই।”
শনিবার দুপুরে কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষায় কেয়ারটেকারগণের দেশ ও জাতি গঠনের অগ্রণী ভূমিকা’ শীর্ষক এ সভা আয়োজন করে মউশিক কেয়ারটেকার কল্যাণ পরিষদ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এখানে কিছুক্ষণ আগে একজন বললেন যে, জামায়াতের টিকেট কাটলে জান্নাতের টিকেট কাটা হবে। এটা কোথায় আছে? আমাকে বলুক তারা, দেখিয়ে দিক।
“এটা ঠিক না। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়ে নেওয়া, এটা কখনোই ইসলাম বলে না। এই কথাগুলো আমি এজন্যই বলছি যে, এগুলো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে; কথাগুলো বলছে সবাই। এই কথাগুলো আজকে জনগণের সামনে আসা উচিত, বেশি করে আসা উচিত।”
তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে—এই মহল, তারা কিন্তু আপনার রাজনৈতিক অঙ্গনে দাঁড়াতে পারছিল না। আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব তাদেরকে সুযোগ করে দেন রাজনৈতিক অঙ্গনে আসার।
“ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ—আইডিএল নামে প্রথম তারা এসেছিল। তারপরে যারা কাজ করেছেন…আমাদের সঙ্গেও কাজ করেছেন, আমরাও তাদেরকে নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে গত ১০ বছর কিন্তু আমরা তাদের এই ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পরাজিত করার জন্য দৃশ্যমান কোনো কাজ দেখিনি।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে শুনতে পাই, ছাত্রলীগের মধ্যে তারা ঢুকেছিল শুনেছি… অর্থাৎ ছাত্রলীগ সেজে তারা সেখানে ছিল। এই ধরনের কাজ তো আমরা করতে পারি না। আমরা সরাসরি সামনা সামনি লড়াই করেছি।”
‘গণভোটের কথা কেউ বুঝবে না’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এই যে পিআর, এটা ক’জন বোঝে? আপনারা তো সাধারণ মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করেন। এটার সঙ্গে দেশের মানুষ পরিচিত না; তারা বোঝে—ওয়ান ম্যান ওয়ান ভোট। একজন ব্যক্তি দাঁড়াবে, তার মার্কা থাকবে, আমি ভোট দেব। এটাই আমরা সবসময় সেই আদিকাল থেকে দেখে আসছি।
“ এখন আপনি এটাকে পরিবর্তন করবেন। তার জন্য গণভোট করবেন। গণভোটে থাকবে আবার ‘হ্যাঁ’, ‘না’ । এখন গণভোটের নাকি চারটা প্রশ্ন থাকবে। চারটা প্রশ্ন একটা গণভোটের ব্যালটে থাকবে। এটা এখন পর্যন্ত কেউ বুঝতেই পারছে না, শেষ দিন পর্যন্ত বুঝতেও পারবে না। দেখবেন, শেষদিন পর্যন্ত কেউ বুঝতেও পারবে না।”
তিনি বলেন, “আমি উনাদের সঙ্গে যখন আলাপ করছিলাম, আমি বললাম যে, আপনারা এইভাবে জিনিসগুলোকে আনেন যেন মানুষ আস্তে আস্তে ধাতস্থ হতে পারে। পরিবর্তন তো আমরা চেয়েছি। বিএনপি ২০১৬ সালে, প্রথম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ দিয়েছিলেন।
“অর্থাৎ ২০২০ সালে, ২০৩০ সালে কীভাবে দেশ চলবে—সে সম্পর্কে তিনি ধারণা দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, প্রধানমন্ত্রী দুইবারের বেশি হওয়া উচিত না; এগুলো তিনিই দিয়েছিলেন। এরপরে ২০২৩ সালে আমরা প্রথমে ২৭ দফা এবং পরে অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে আমরা ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি…ওখানে সংস্কারের সবকিছু আছে। সুতরাং আমরা সংস্কার চাই, সংস্কার চেয়েছি।”জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সুপারিশগুলো সরকারের কাছে দিয়েছে তা ‘ঠিক হয়নি’ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
‘নির্বাচন প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার একটা সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে। আসুন, আমরা সবাই মিলে অন্তত এই জায়গাতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই যে, একটা সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন। সকলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন করে আমরা একটা গণতান্ত্রিক সরকার ও গণতান্ত্রিক পার্লামেন্ট গঠন করি।
“যার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সমস্ত সমস্যাগুলোকে তুলে ধরতে পারব। পার্লামেন্টে আলাপ হবে। সেই পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত হবে; সেটাই হবে জনগণের সিদ্ধান্ত।”
মউশিক কেয়ারটেকার কল্যাণ পরিষদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা করা হবে।ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর প্রিন্সিপাল শাহ মো. নেছারুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জুবাইদুর রহমান, মাহফুজুর রহমান।