ক্যাম্পাস ছেড়ে মহাসড়ক অবরোধে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা, জনদুর্ভোগ চরমে

প্রকাশ : 2024-07-06 16:39:50১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

ক্যাম্পাস ছেড়ে মহাসড়ক অবরোধে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা, জনদুর্ভোগ চরমে

সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে টানা আন্দোলন করছেন বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। প্রথম দিকে তাদের আন্দোলন নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা রাজপথে গড়াচ্ছে। শনিবার (৬ জুলাই) দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্পাস ছেড়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে জনসাধারণকে। দীর্ঘ যানজটের শিকার হতে হয়েছে যাত্রীদের। বিভিন্ন মহাসড়কে এখনো অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন আন্দোলনকারীরা।

২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে কোটা প্রথা বাতিল করা হলেও সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি রায়ে কোটা প্রথা বহাল হওয়ায় নতুন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। চার দফা দাবিতে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি নিয়ে শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। এতে শিক্ষার্থীরা রাজপথেই তাদের দাবি আদায়ের ঘোষণা দেন।

সেদিন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ থেকে সরে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার (৬ জুলাই) সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপর রোববার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ধর্মঘট করা হবে।

ঘোষণা অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ

টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের শহর বাইপাসের আশেকপুর এলাকায় অবরোধ করেন। দেড় ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে তারা মহাসড়ক থেকে সরে যান।

অবরোধের কারণে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ছাত্রসমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

এ সময় অনেকের হাতে ব্যানার ও ফেস্টুন ছিল। এ সময় তারা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘একাত্তরের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘মেধাবীদের কান্না, আর না, আর না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ

কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রেখে দ্রুত কমিশন গঠনের দাবি জানান তারা।

শনিবার (৬ জুলাই) বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল থেকে মিছিল বের হয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক সংলগ্ন মর্ডান মোড় অবরোধ করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী পদযাত্রা ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। হাতে পোস্টার আর মুখে বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন। স্লোগানে স্লোগানে প্লাকার্ড-পোস্টারের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি দাওয়া উপস্থাপন করেন।

পোস্টারগুলোতে ‘সুযোগের সমতা, সংবিধানের মূল কথা’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, নাতি-পুতি বন্ধ করো, মেধা দিয়ে দেশ দিয়ে গড়ো’, এরকম শ্লোগান দিয়ে রাজপত মুখরিত করে তোলেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ

কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেলা ১১টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান সম্বলিত ব্যানার প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের সামনে ঢাকার রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’ ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, আপোষ না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক-মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘সারা বাংলায় খবর দে-কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

মহাসড়ক অবরোধকালে অসংখ্য যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও সংশ্লিষ্টরা।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ

বৃষ্টি উপেক্ষা করে শনিবার আন্দোলন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা প্রায় আধাঘণ্টা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।

শনিবার (৬ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এ মিছিল করেন তারা। পরবর্তীতে সেখান থেকে মিছিলটি ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া বাজার হয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে এসে সমবেত হয়। সেখানে মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারাবাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘মেধাবীদের কান্না, আর না আর না’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমরা কোটা পদ্ধতি বাতিল নয়, সংস্কার চাই। সরকার কোটার নামে মেধাবী শিক্ষার্থীদের যে অবমূল্যায়ন করছে আমরা তার বাতিল চাই। এভাবে কোটা পদ্ধতি চালু থাকলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় অমেধাবীদের দখলে চলে যাবে, বেড়ে যাবে দুর্নীতি। দেশ স্বাধীন হয়েছে বৈষম্য রোধ করতে। কিন্তু কোটা পদ্ধতি সেই বৈষম্য সৃষ্টি করছে। আমরা এই বৈষম্য বন্ধের আন্দোলন করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখব।

ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

Kota4

শনিবার (৬ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। প্রায় এক ঘণ্টা এই অবরোধ চলে। এতে দুইপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রশাসনের অনুরোধে ক্যাম্পাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে জড়ো হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ক্যাম্পাসেই সমাবেশ করেন তারা। পরে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

তাঁতীবাজারে জবি শিক্ষার্থীদের অবরোধ

পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৬ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠালতলা থেকে মিছিল বের করে রায়সাহেব বাজার পেরিয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে তারা অবস্থান নেন। পঞ্চম দিনের এই কোটাবিরোধী আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেন।

এসময় স্লোগানে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মেধাবীরা আসছে রাজপথ কাঁপছে’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাই নাই’, ‘মেধাবীরা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘বাতিল বাতিল বাতিল চাই, কোটা প্রথা বাতিল চাই’। এ সময় আন্দোলনকারীর গুলিস্তানের দিকে যেতে চাইলেও পুলিশের বাধার কারণে যেতে পারেনি।