কোরবানির হাট মাতাবে ‘ভৈরব’, ‘মুধমতি’ ও ‘সুখী’

প্রকাশ : 2021-07-03 20:25:28১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

কোরবানির হাট মাতাবে ‘ভৈরব’, ‘মুধমতি’ ও ‘সুখী’

‘ভৈরব’, ‘মধুমতি’ ও ‘সুখী’। নাম শুনলেই মনে হয় গ্রামের গৃহস্থ ঘরের তিন বোন। কিন্তু না, কোরবানি উপলক্ষে আদর করে লালন-পালন করা বিশালাকার তিনটি ষাঁড়ের নাম ভৈরব, মধুমতি ও সুখী। ওজন, আকৃতি ও সৌন্দর্যে তারা নজর কাড়ে সকলের। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন তাদের দেখতে। এবার কোরবানির হাট মাতাবে তারা। তবে করোনাকালে নায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে ষাঁড় তিনটির মালিক আবুল হোসেন। বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া এলাকার খামারি আবুল হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে গরু লালন-পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। তিন বছর আগে নিজের গোয়ালের একটি গাভীতে জন্ম নেয় ব্রাহমা জাতের ষাড়ের বাচ্চা। কালো কুচকুচে রংয়ের আকর্ষণীয় চেহারার সেই বাচ্চার নাম রাখেন সুখী। সুখী বড় হাতে থাকে। সুখীর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হলিস্টিয়ান ফিরিজিয়ান জাতের আরও দুটি ষাঁড়ের বাচ্চা ক্রয় করেন আবুল হোসেন। নাম রাখেন ভৈরব ও মধুমতি। সমবয়সী হওয়ায় সুখী, ভৈরব ও মধুমতির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সখ্যতা নষ্ট হয়ে যায়। আড়াই বছর আগে ক্রয় করা হলিস্টিয়ান ফিরিজিয়ান জাতের ষাঁড় ভৈরবের ওজন এখন ১৮০০ কেজি। পুরো শরীর কালো ও মাথায় সাদা চিতা এক অন্যরকম আকর্ষণীয় চেহারা দিয়েছে ভৈরবকে। তার পিছনের দুটি পা সাদা হলেও সামনের পায়ের বেশিরভাগ অংশ কালো। ৯ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট সাত ইি  উচ্চতার এই গরুর দাম হাকা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। পাঁচ ফুট ৮ ইি  উচ্চতা ও ৯ ফুট লম্বা সুখীর ওজন এখন ১৭০০ কেজি। পুরো শরীর কালো সুদর্শন এই ষাঁড়ের পেটের দিকে লালছে ভাব রয়েছে। নিজের গোয়ালের এই ষাঁড়ের দাম চেয়েছেন ৪০ লাখ টাকা।  

৯ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট ৬ ইি  মধুমতির ওজন এখন ১৫০০ কেজি। কালো শরীর, মাথায় সাদা চিতা পেট ও পায়ের নিচের অংশে সাদা রং থাকা মধুমতি অনেক শান্ত স্বভাবের। মালিক আবুল হোসেন এই মধুমতির দাম চেয়েছেন ২০ লাখ টাকা।

কোটি টাকা মূল্যের তিনটি গরুর জন্য আবুল হোসেনকে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার খাবার খাওয়াতে হয়। গরুর যতœ, গোসল ও খাবার দেওয়ার জন্য আবুল হোসেন ও তার স্ত্রী পাপিয়া হোসেন ছাড়াও রয়েছে আবুলের ছোট ভাই হাসান আলী। নিজেদের জমিতে উৎপাদিত ঘাষ, কুটা, দেশীয় ফল মুলের পাশাপাশি প্রতিদিন ১০ কেজি করে দানাদার (খৈল, ভুট্টো, ছোলা, গমসহ নানা প্রকার বীজ) খাবার খায় প্রতিটি গরু। এই তিন বছর ধরে এই গরু পালন করতে গিয়ে ঋণও করেছেন আবুল হোসেন।এক সঙ্গে বিশালাকৃতির তিনটি গরু দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমায় স্থানীয়রা। কিছুটা বিরক্ত হলেও হাসিমুখে দর্শনার্থীদের গরু দেখান খামার মালিকরা।

খামারি আবুল হোসেন বলেন, গত বছর কোরবানিতেও ষাঁড় তিনটি বিক্রির জন্য চেষ্টা করেছি। হাটেও নিয়েছি। কিন্তু করোনার কারণে উপযুক্ত ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারিনি। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারও শঙ্কায় রয়েছি। আসলে কি হবে জানি না। অনেক শখ ও ত্যাগ স্বীকার করে একসঙ্গে তিনটি ষাঁড় বড় করেছি। এতোবড় গরু বাগেরহাট ও আশাপাশের জেলায় নেই। এই গরুর পিছনে আমার পরিবারের সকলের শ্রম রয়েছে। তিনটি গরু কোটি টাকায় বিক্রি করতে চাই। ন্যায্য মূল্যে পেতে সরকারি সহায়তা কামনা করেন তিনি।

খামারের দেখভালের কাজে নিয়োজিত হাসান বলেন, ভাই-ভাবির সঙ্গে সবসময় আমিও এই গরুর পিছনে পড়ে থাকি। দুই বেলা গোসল, বাতাস দেওয়া, চার থেকে পাঁচবার খাবার দেওয়া, গোয়ালঘর পরিস্কারসহ প্রতিদিন নানা কাজ করতে হয়। আমরা এই গরুকে কোনো প্রকার হরমন বা মোটাতাজাকরণ ওষুধ সেবন কারাইনি।

গরু দেখতে আসা পাশ্ববর্তী ফকিরহাট এলাকার জিহাদ, মিরাজ শেখ ও রোকসানা বেগম বলন, প্রতিদিন সকাল-বিকেল আমরা আবুলের বাড়িতে আসি। গরু তিনটি দেখি। আমাদের খুব ভাল লাগে। আশেপাশের লোকজনও এখানে ভিড় করে। অনেকে আবার গরুর সঙ্গে ছবিও তোলে। আমাদের জানামতে এতো বড় গরু আমাদের জেলায় নেই।

আবুলের স্ত্রী পাপিয়া বলেন, তিনটি ষাঁড়ের পাশাপাশি আমাদের আরও চারটি গরু রয়েছে। এই গরুর পিছনেই আমাদের রাত-দিন যায়। অনেক কষ্ট করে গরু তিনটিকে বড় করেছি। কিন্তু করোনার কারণে মনে আনন্দ নেই। ভাল দামে না বিক্রি করতে পারলে খুবই লোকসানে পড়তে হবে। নায্যমূল্যে গরু বিক্রির জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুতফর রহমান বলেন, বাগেরহাটে দিন দিন বড় গরু লালন পালনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফ্রিজিয়ান, শাহী ওয়াল, ব্রাহমা জাতের ষাঁড় বেশি পালন করছে খামারিরা। সদর উপজেলার আবুলের গরু তিনটি আমি দেখেছি। আমাদের পরামর্শ নিয়ে সে গরু পালন করে। কোনো প্রকার হরমন বা স্টেরয়েড এই গরুর জন্য আবুল ব্যবহার করেনি। সম্পূর্ণ দেশীয় খাদ্য-খাবার দিয়ে তিনি গরু পালন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে জেলার মধ্যে বড় গরুর ক্রেতা পাওয়া একটু কষ্ট সাধ্য। তাই আমরা অনলাইন ও বড় বড় শহরে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। যাতে খামারিরা নায্যমূল্য পায় সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।