কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংস্কৃতিকর্মীরা, সমাবেশ এস এম সুলতানকে উৎসর্গ
প্রকাশ : 2024-08-11 17:41:49১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক নতুন এক দেশের আহ্বানে শনিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশ করেন দৃশ্যমাধ্যম শিল্পী সমাজ, আলোকচিত্রী সমাজ, বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীগণ, বাংলাদেশ সংগীতশিল্পী সমাজ (গেটআপ স্ট্যান্ডআপ) সংগঠনগুলো।
শুরুতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে স্বৈরাচার পতন হয়েছে সেই বিষয়টি আরও একবার জানানো হয়।ছাত্র-জনতাসহ রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সকলকে বিপ্লবী অভিনন্দনও জানানো হয়। এছাড়া সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনা করা হয়।
এর আগে আয়োজক সংগঠনগুলো ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে একাধিক কর্মসূচিও পালন করেছিল।
এবারের সমাবেশে ‘রক্তাক্ত জুলাই’-এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রীয় খুন ও সন্ত্রাসের কারণে যারা শহীদ ও গুরুতর আহত হয়েছেন, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া এবং আহতদের পুনর্বাসন করার দাবি করা হয়।
শেখ হাসিনার পতন-পরবর্তী সব ধরনের হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞেরও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার বিভাগীয় নিরপেক্ষ তদন্তের জোর দাবির পাশাপাশি আহত নাগরিকদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও নিরাপত্তার দাবি তোলেন তারা।
সমাবেশে আয়োজকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী ঋতু সাত্তার। তিনি বলেন, শহীদদের স্মরণে স্থাপন করতে হবে শহীদ মিনার। নৃশংস রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, অগ্নিসংযোগ, হামলা, ধ্বংস ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত রয়েছে একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহল; যারা আমাদের এই বিজয়ের সকল অর্জন ম্লান করে দিতে চায়৷ কিন্তু সময়টা রাষ্ট্র পুনর্গঠনের। আমরা বিশ্বাস করি, এই নতুন বাংলাদেশ সকল জাতির, সকল বর্ণের, সকল ধর্মের, সকল লিঙ্গের একটি বৈষম্যহীন জনপদ হয়ে উঠবে। আন্দোলনে আমরা ছাত্রদের ওপর যেমন ভরসা রেখেছি, ঠিক তেমনি রাষ্ট্র পুনর্গঠনে তাদের পাশে থেকে পাহাড় থেকে সমতলে সর্বজনের প্রতিনিধিত্বমূলক বৈষম্যহীন সম্প্রীতির নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।
এর আগে সূচনা বক্তব্যে কিউরেটর ও লেখক আমিরুল রাজিব বলেন, আজ এস এম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী। সুলতান তার সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। এই সমাবেশ তাকেই উৎসর্গ করছি। আমরা মানুষের সঙ্গে সমব্যথী হতেই আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরা শিল্পী সমাজ কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করি না। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতাও চাই।
এই আয়োজনে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, এই গণঅভ্যুত্থানে যে বিজয় এসেছে, তাকে ধরে রাখতে হবে। কোনোভাবেই যেন সেটি নস্যাৎ না হয়। আমরা স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা থেকে বেরিয়েছি। আবার কোনো স্বৈরশাসনে পড়তে চাই না।
সঙ্গীতশিল্পীদের পক্ষে বক্তব্য দেন প্রবর রিপন। তিনি বলেন, আমরা শিল্পীরা মানুষের পাশে থাকতে চাই। আমরা শুধু স্বাধীনতা চাই। মন খুলে গান করতে চাই। আমাদের স্বাধীনতা যদি কেউ হরণ করতে চান, এই শহীদেরা আবার ফিরে আসবে। তারা আমাদের লাঠি হাতে প্রতিবাদ শিখিয়ে গেছে।
হাতিরঝিলের এম্ফি থিয়েটার মঞ্চটি কনসার্টের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান তিনি। এর পাশাপাশি গানের কপিরাইট রয়্যালিটির জায়গাগুলো নিশ্চিত করার দাবি এই গায়ক।
থিয়েটারকর্মীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন কাজী রোকসানা রুমা। তিনি বলেন, এখন যে সরকার এসেছে, তাদের কাছে আমাদেরও কিছু দাবি আছে। আমরা সেই দাবি সরকারকে জানাতে চাই।
বিভিন্ন জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা এবং নাট্যদলের কার্যালয়ে হামলার নিন্দা জানিয়ে এগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি তোলেন তিনি।
সমাবেশে শিল্পীরা সমবেতকণ্ঠে ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ গানগুলো পরিবেশন করেন। এছাড়া সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন তারা।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন, জাকিয়া বারী মম, নূরুল আলম আতিক, সঙ্গীতশিল্পী তানজীর তুহিন, আরমিন মুসা, লাবিব কামাল গৌরব, কামার আহাম্মদে সাইমন, চাঁদনী, মারিয়া নূর, সাফা কবীর, মুমতাহিনা টয়া, গোলাম কিবরিয়া তানভীর, জয় শাহরিয়ার, সাবেরী আলম, রুকাইয়া জাহান চমক, সুমন আনোয়ার, নিশাত প্রিয়ম, এলিনা শাম্মিসহ অনেক তারকা উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ মিনারে অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সবাই শাহবাগের চারুকলা অনুষদের সম্মুখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাটে আসেন। এখানে সংগীত পরিবেশনা করেন শিল্পীরা। এর মধ্যদিয়ে তারা কর্মসূচির ইতি টানেন।