কৃষক ও ভোক্তার চাপা ক্ষোভে উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ

প্রকাশ : 2022-04-16 10:41:12১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

কৃষক ও ভোক্তার চাপা ক্ষোভে উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল সমৃদ্ধ, সুখি সোনার বাংলা। দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার মান কতটুকু উন্নত  হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সম্প্রতি যে বিষয়টি সাধারণ মানুষের জীবনে অসহনীয় হয়ে উঠেছে তা দ্রব্যমুল্য। আবহমান কাল ধরে বাংলার ঐতিহ্য মাছে-ভাতে বাঙ্গালীর যেন মাছ-ভাত আনতেই গলদঘর্ম হচ্ছে। সঞ্চয় দুরুহ, বাজারের ব্যাগ অর্ধেক পূর্ণ করতেই মানিব্যাগ রোগাহেতু।

সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের মহাকাশ যাত্রার বিপরীতে সাধারণ মানুষের আয় যেন পাতালমুখী। করোনা ভাইরাসের কারণে সমগ্র বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেয়েছে তা অস্বীকার করার কোন পথ নেই। দারিদ্রের হার ২০.৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ ছুঁয়েছে। যদিও অর্থনীতিবিদরা এই অবস্থাকে সাময়িক দারিদ্র বলেছেন, তবে ইহার রেশ কাটাতে সাধারণ মানুষের সময় প্রয়োজন। প্রথম লকডাউনে সাধারণ মানুষ সঞ্চয় ভেঙ্গে খেয়েছে, পরবর্তী লকডাউনে মানুষ ঋণ করেছে। মধ্যবিত্তদের টিসিবি লাইনে উপস্থিতি তা প্রমাণ করে দেয়। 

সিন্ডিকেটের হাতে বন্দী দেশের পণ্য বাজার একথা এখন ওপেন সিক্রেট। জনগনের টাকায় সরকার মন্ত্রীদের সুবিধা প্রদান করছেন, আমলাদের বেতন দিচ্ছেন। তাহলে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে জনগন এদের থেকে কতটুকু সেবা পাচ্ছে? দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করলেও দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারের থেকে আমাদের পণ্যমূল্য বেশি। ব্যবস্থাপনার ভাষায় প্ল্যান বি বলতে একটি টার্ম আছে, যেখানে সম্ভ্যব্য পরিকল্পনা কাজ না করলে তার বিকল্প পরিকল্পনা থাকে। আমাদের দেশ তবে কেন একটি পণ্যের জন্য একটি দেশের উপর নির্ভর করবে? একটি পণ্যের জন্য একাধিক বাজার খোলা রাখলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম মূল্যে পণ্য ক্রয় করা যায়, যাকে ব্যবসায়ের ভাষায় বলে ক্রেতার দর কষাকষি। উদাহরণ স্বরূপ ধরা যাক গত বছরের পেঁয়াজের মূল্যের কথা। ভারত ভিত্তিক পেঁয়াজ আমদানী আমাদের পেঁয়াজের বাজারকে উত্তপ্ত করেছিল, এক্ষেত্রে আমরা যদি বিকল্প বাজার থেকে নিয়মিত পেঁয়াজ আমদানী করতাম তবে হয়ত এই বিরূপ পরিস্থিতি এড়ানো যেত। নিজে খেয়ে না বাঁচলে প্রতিবেশীকে সাহায্য করা যায় না ইহাই নির্মম সত্য এবং এই সত্য প্রমাণিত।

দেশের সবজির বাজারে এখন বিষফোঁড়ার মত আতঙ্ক মহাসড়কের চাঁদাবাজি। পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগ স্বীকার করেছে এর সত্যতা। গোয়েন্দা বিভাগের প্রতিবেদন বলছে উত্তরবঙ্গ থেকে রাজধানীতে পণ্য আনতে অন্ত্যত আটটি স্থানে চাঁদাবাজি হয়। এই চাঁদাবাজির মূল হোতা স্বয়ং পুলিশ এবং রাজনৈতিক নেতারা। এখন প্রশ্ন দাড়াচ্ছে পুলিশ সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়ে কেন সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে, অপরপক্ষে সরকার দলীয় নেতার কেন সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে রাবণরূপ ধারণ করেছে?

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। বর্তমানে জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান বেশি, কিন্তু কৃষি খাতে এখনো দেশের সিংহভাগ মানুষের আয়ের সংস্থান করছে। হাওর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে কৃষি। বছর বছর এদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বাড়ছে না কৃষি জমি। অপরিকল্পিত নগরায়ন, নদী ভাঙ্গান, কৃষি জমিতে শিল্প কারখানা স্থাপনের ফলে হ্রাস পাচ্ছে কৃষি জমির পরিমাণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি জমি হ্রাস পাওয়াতে কমছে উৎপাদন। কৃষিতে গবেষণা করে উচ্চফলনশিল বীজ আবিষ্কার করলেও আমরা আমদানী নির্ভর দেশ। পণ্য আমদানীতে বৈশ্বিক রাজনীতির প্রভাব রয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির দাবার কোটের চাল একটু পরিবর্তন হলেই অসাধু ব্যবসায়ীরা লিপ্ত হয় দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায়। পণ্যের বিকল্প বাজার অনুসন্ধান কিংবা পণ্য মূল্য সহনীয়  পর্যায়ে রাখতে বাংলাদেশের  যথাযথ অধিদপ্তর বা মন্ত্রনালয় কখনোই তাদের ভূমিকা পালন করতে পারেনি। মন্ত্রীদের হাস্যরসে জনমনে ক্ষোভ জমে, সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরী হয় তা বুঝতে যেন মন্ত্রীরা অপটু। 

বাংলার কৃষকেরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে জমিতে ফলায় সোনার ফসল। বিরূপ প্রকৃতি, সার ও বীজের উচ্চমূল্য এদেশের কৃষকের সাথে যেমন বিরূপ আচরণ করে তার চেয়ে ভয়ংকর সিন্ডিকেট। ক্ষেতে যে তরমুজ ৮০ টাকা ঢাকায় তা ৪০০-৫০০ টাকা। লাভের টাকা যাচ্ছে কাত পকেটে? না লাভবান হচ্ছে কৃষক, না লভবান হচ্ছে ক্রেতা। বাজারের সবটুকু লাভ যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পকেটে। এদেশের কৃষক পণ্যের সঠিক দাম না পেলে মহাসড়কে পণ্য ফেলে প্রতিবাদ জানায়, ক্রেতারা যেয়ে লাইন ধরে টিসিবির লাইনে। নিত্য পণ্যের বাজারে যথাযথ মনিটরিং-এর মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে সরকার এই কামনা করি। সাধারণ মানুষ ভাল থাকলে ভাল থাকবে বাংলাদেশ। গড়ে উঠবে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।