কারফিউ ও ইন্টারনেটহীন জীবনে কীভাবে সময় কাটালেন তারকারা

প্রকাশ : 2024-07-29 13:09:52১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

কারফিউ ও ইন্টারনেটহীন জীবনে কীভাবে সময় কাটালেন তারকারা

সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়ায় গত ১৯ জুলাই দিবাগত রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয় সারাদেশে। একইসঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মোতায়েন করা হয় সেনা সদস্য। পরবর্তীতে অবশ্য কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এদিকে কারফিউ জারির শুরু থেকে সারাদেশে বন্ধ রাখা হয় ইন্টারনেট সেবা।

এ পরিস্থিতিতে সব অফিস-আদালত, অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনোদনের ডিজিটাল মাধ্যম ও অনলাইনে শিক্ষাপ্রদানসহ সবই বন্ধ ছিল কয়েকদিন। যদিও পরবর্তীতে প্রথমে ব্রডব্যান্ড ও পরে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সেবা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক-টিকটক-হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে কারফিউ জারি ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধের মুহূর্তে সময় কাটানো এবং এই পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম, চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক, চিত্রনায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দীঘি ও চিত্রনায়ক নিরব হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহজাদা সেলিম রেজা―

চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম :
গত কয়েকদিন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় স্মার্টফোন কিংবা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসগুলো খুব একটা ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। আগেও খুব একটা টেলিভিশন দেখা হয়নি, তবে এখন খবরগুলো দেখা হয় বলে জানালেন এ জনপ্রিয় নায়িকা।

বিদ্যা সিনহা মিম বলেন, আমার খুব একটা টেলিভিশন দেখার অভ্যাস নেই। তবে এখন গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো দেখি। বাকি সময় পরিবারের সবার সঙ্গে গল্প করি, আড্ডা দেই ও অবসরে বই পড়ি। আসলে কোনোকিছু তো প্ল্যান করে হয় না। এ পরিস্থিতিও কারও কাম্য ছিল না। তো যখন হয়েই গেল, দেখলাম আগে বিভিন্ন সময় কিছু বই নেয়া ছিল। সেখান থেকেই সময় অনুযায়ী বই পড়ে সময় কাটছে।

তিনি বলেন, আমার সময়গুলো উপভোগ্য বলা যায়। বাসার পাশে কয়েক গলি পরই কাজিন ও ফ্রেন্ডসদের বাসা। কারফিউ শিথিলের সময় ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে সবাই একত্র হই, তারপর আড্ডা দেই; বেশ মজা হয়। আর সবশেষ বলতে চাই, সবাই আগের স্বাভাবিক লাইফস্টাইল চাই। শিগগিরই যেন আগের অবস্থায় ফিরতে পারেন বলেও জানান এ তারকা।

চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক:
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এ নায়ক প্রথমেই কয়েকদিন আগের সহিংসতায় দেশের সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভাঙচুর, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলন করতেই পারেন। কিন্তু আন্দোলনের নামে এক শ্রেণির মানুষ দেশের সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, সেসব আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এতে লাভ কী হলো, নিজ দেশের সম্পদেরই তো ক্ষতি হলো।

সাইমন সাদিক বলেন, আন্দোলনের নামে অগ্নিসংযোগ করায় গত কয়েকদিন দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল; এখন কিছুটা স্বাভাবিক। এ জন্য প্রতিদিনই বিভিন্ন ব্যবসাখাতের মোটা অংকের টাকা লোকসান হয়েছে। বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। এসব কারখানা, প্রতিষ্ঠানে আপনার-আমারই ভাই-বোন কাজ করে খায়। কিন্তু তা বন্ধ থাকায় অলস-বেকার সময় কাটাতে হয়েছে। দিন শেষে আমাদের দেশের মানুষেরই ক্ষতি হয়েছে।

ইন্টারনেটের কারণে যদিও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, কিন্তু ভাবনার বিষয় হচ্ছে―আমরা কি আদৌ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের যোগ্য? এই ফেসবুকে যে যার মতো করে গুজব ছড়াচ্ছে। যা থেকে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সবার মনে ভ্রান্তি ধারণা হচ্ছে। একপর্যায়ে তাণ্ডব শুরু হচ্ছে। একটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সুন্দরভাবে যে ব্যবহার করা যায়, তা যেন আমরা জানিই না। এর ইতিবাচক দিক থাকলেও আমরা নেতিবাচকটাকেই যেন বেশি কাছে টেনে নিয়েছি।

মাঝের কয়েকদিন সময় কাটানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সবার চোখই শুধু পত্রিকা ও টেলিভিশনে। আমি নিয়মিত টেলিভিশনের খবর দেখেছি, পত্রিকা পড়েছি। এখানে পরিবারের সঙ্গে সময় কেটেছে। পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি।

সবশেষ এ অভিনেতা বলেন, আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ, শান্তিতে থাকতে ভালোবাসি। কিন্তু কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ভর করে গত কয়েকদিন দেশে যা হয়েছে, তা আসলে সরকার বা আমাদের কারোরই প্রত্যাশা ছিল না। সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা, কারফিউ জারি করাসহ যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা আমাদের ভালোর জন্যই করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, সরকারের হস্তক্ষেপে শিগগিরই আমরা আবার আগের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে যাব।

চিত্রনায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দীঘি:
স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় আমার। শিল্পী হওয়ায় শিল্পের কাজের জন্য এদিক-সেদিক যাওয়া-আসা, কাজ নিয়ে কথা বলেই সময় কেটে যায়। কিন্তু যখন কারফিউ জারি এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হলো, তখন তো বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। বাসাতেই সময় কাটাতে হচ্ছে বলে জানালেন দীঘি।

এ অভিনেত্রী বলেন, বাসায় আগে থেকে কিছু সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ ছিল। এখন অবসরে সবাই মিলে সেসব দেখছি। এর ফাঁকে প্রতি ঘণ্টার খবর দেখা হচ্ছে। আবার বইও পড়ছি। এর বাইরে কাছের মানুষজনের সঙ্গে ফোনে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। কে কোন পরিস্থিতিতে আছে, কীভাবে সময় কাটছে তাদের―এসব খোঁজ রাখছি।

তিনি বলেন, অনেকে আবার আমাকে ফোন দিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। এই ব্যাপার আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। যারা প্রকৃত কাছের ও আপন মনে করেন, তারা এই সময়টায় নিয়মিত খোঁজ রাখছেন আমাদের।

এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সহিংসতা নিয়ে এ নায়িকা বলেন, ছোট একটা আন্দোলন নিয়ে অনেক কিছু হয়ে গেল। যাইহোক যেটা নিয়ে আন্দোলন ছিল, সেটির রায় এসেছে। শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্যই রায় হয়েছে।  শিক্ষার্থীদের সব দাবি-দাওয়া তো মেনে নেয়া হয়েছে। আমি মনে করি এখন পরিস্থিতি বোধহয় স্বাভাবিক হবে। নরমাল লাইফে ব্যাক করা আমাদের সবার জন্যই খুবই প্রয়োজন।

চিত্রনায়ক নিরব হোসেন:
প্রায় একমাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পর গত ২১ জুলাই দেশে ফিরেছেন এ নায়ক। এ কারণে আগের কয়েকদিনের পরিস্থিতি সরাসরি জানতে না পারলেও দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে অবহিত হয়েছেন তিনি। এ নায়ক বলেন, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগতভাবেও অনেকেই অনেকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। হয়তো আন্দোলনের নামে দেশে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে এমন হতো না।

তিনি বলেন, আমার জায়গা থেকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, বাসার বিলিং সিস্টেমসহ যেসব ক্ষেত্র ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তা একদমই ব্যবহার করতে পারিনি। মনে হয় এ অবস্থায় সাময়িক সময়ের জন্য আমাদের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে, খারাপ লাগছে, কিন্তু যা হচ্ছে তা আমাদের ভালোর জন্যই করছে সরকার।

এদিকে ইন্টারনেট বন্ধ এবং কারফিউ থাকায় এখন পুরোদমে পরিবারকে সময় দিতে পারছেন বলেও জানান এ তারকা। সাধারণত অন্যান্য সময় সিনেমার শুটিং, নতুন সিনেমার মিটিং, মুক্তির আগে প্রোমোশন এবং এ সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যস্ত সময় পার করতে হয় অভিনয়শিল্পীদের। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পরিবারকে খুব একটা সময় দেয়া হয় না। তবে এ তারকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর গত কয়েকদিন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন।

নায়ক নিরব বলেন, অনলাইনে কোনো সিনেমা কিংবা সিরিজ নয়, টেলিভিশনে মাঝে মধ্যে নিউজ দেখা হয়। আর অন্যান্য সময় ডিজিটাল ডিভাইস রেখে পরিবারের সঙ্গে গল্প ও আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়েছি। এতে অবশ্য পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে মেল বন্ধন তৈরি হয়।