কাউনিয়ায় ৬ দরিদ্র মেধাবী শত বাঁধা ডিঙ্গিয়ে ওরা এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে
প্রকাশ : 2022-01-07 19:43:36১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
জন্ম থেকে অভাব ওদের নিত্য সঙ্গী। দরিদ্রতা ওদের ভাগ্যের পরিহাস। নানা প্রতিকুলতার সাথে লড়াই করে জীবন যুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন ওদের চোখে মুখে। এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করেও উচ্চ শিক্ষা কিভাবে গ্রহন করবে, অর্থের যোগান হবে কী ভাবে সে চিন্তা ওদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সমাজের বিত্তবানদের একটু সহানুভুতিই পেলে কাউনিয়ার ৬ অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীর আলোকিত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন পূরন হবে।
নার্গিস আক্তার ঃ এক বেলা পেটে ভাত জোটেতো আরেক বেলা নাই। শখের বসে শৌখিন কাপড় জুটতো না ভাগ্যে। দরিদ্রতা আর নানা প্রতিকুলতার সাথে যুদ্ধ করে কাউনিয়ার ইমামগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে নার্গিস আক্তার। সে জেএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ ৫ পেয়েছিল । উপজেলার নাজিরদহ নয়াটারী গ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন ইব্রাহিম খলিল ও গৃহিনী মোছাঃ মনিরা বেগমের কন্যা সে। ওরা ৩ বোন কোন ভাই নেই। ৬ শতক বাড়ি ভিটা ছাড়া আর কোন জমি-জমা কিছু নেই তাদের। বাবার মসজিদে মুয়াজ্জিনের সামান্য টাকায় চলে সংসার, সে ও তার বোনের পড়া লেখার খরচ যোগাতে বিভিন্ন বাড়িতে প্রাইভেট পড়িয়েছে সে। মেয়ের অনেক স্বপ্ন লেখাপড়া শিখে বড় হবে। কিন্তু সেই স্বপ্নের অর্থের যোগান হবে কি ভাবে ? আর্থিক সহযোগিতা না পেলে নার্গিস আক্তারের শিক্ষার প্রদীপও নিভে যেতে পারে। তার স্বপ্ন পুরনে এখন বড় বাঁধা দারিদ্রতা। এ বাঁধা ডিঙ্গিয়ে সেই স্বপ্ন পুরন হবে কিনা সে চিন্তাই এখন সারাক্ষন নার্গিসের। সে বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চায়। সমাজের বিত্তবানরাই পারে তার স্বপ্ন পুরন করতে।
আকলিমা খাতুন ঃ কাউনিয়া উপজেলার ইমামগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে জিপি এ-৫ পেয়েছে আকলিমা খাতুন। উপজেলার নাজিরদহ বালাটারী গ্রামের মৃত আজগর ও নারী শ্রমিক রোকেয়া বেগমের এর কন্যা সে। চরম অর্থ সংকটের মাঝেও এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। পিইসি ও জেএসসিতে সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। দরিদ্রতার সাথে লড়াই করে এসএসসি পাস করলেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহন নিয়ে এখন দুচিন্তায় পড়েছে আকলিমা। তার শিক্ষার খরচ জুটবে কিভাবে এচিন্তায় বিভোর তার শ্রমিক মাতা। সে এতো দিন পড়াশুনার খরচ চালিয়েছে বিভিন্ন কারুকাজ খচিত টুপি সেলাই করে । রাস্তার ধারে নানার বাড়ি ভিটাতে বসবাস করছে তারা। সামনে এগিয়ে যাওয়ার নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে সে। মা শাহানাজ বেগম মেয়ের সাফল্যে খুশি হলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। মেয়ে চায় বিবিএস করে শিক্ষক হতে, কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে কিভাবে তা সম্ভব। সংসারে একজন মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল মা-মেয়ের সংসার। তিনি মেয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।
মোঃ আবু তালেব ঃ দারিদ্রতা ও অর্থ সংকট দমিয়ে রাখতে পারেনি কাউনিয়া উপজেলার চর নাজিরদহ গ্রামের দিনমজুর আঃ খালেকের ুুত্র আবু তালেব কে। চরম অর্থ সংকটেও আবু তালেব এবার এসএসসি পরীক্ষায় কাউনিয়ার নাজিরদহ একতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দরিদ্রতার সাথে লড়াই করে এসএসসি পাস করলেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহন নিয়ে এখন দুঃচিন্তায় পড়েছে আবু তালেব। মা আজিরন বেগম জানায় বাড়ী ভিটা ছাড়া কোন জমি জিরাত নেই তাদের। ওরা ৩ ভাই বোন সবাই পড়ালেখা করে। অভাবের মাঝেও সব প্রতিবন্ধকতাকে পদদলিত করে ভালো কলেজে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আবু তালেব। ছেলের সাফল্যে খুশি হলেও মা আজিরন তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। আবু তালেব চায় শিক্ষক হতে, কিন্তু দরিদ্র পিতা-মাতার পক্ষে কিভাবে তা সম্ভব। তিনি ছেলের জন্য সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।
মেহেদী হাসান ঃ উপজেলার নাজিরদহ গ্রামের ভুমিহীন পিতা মোঃ আতাউর রহমানের পুত্র মেহেদী হাসান প্রমান করছে ইচ্ছা শক্তি থাকলে সফলতা সম্ভব। মেহেদী হাসান নাজিরদহ একতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। শ্বশুরের দেয়া সাড়ে ৬ শতাংশ জমিতে নিজস্ব বসতভিটা ছাড়া আর কিছু নেই তাদের। মেহেদী জানায় ছোট বোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। পিতা স্থানীয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেন। যে ভাতা টুকু পান তা দিয়ে ২ ভাই বোনের পড়ালেখার খরচ ও ৪ জনের সংসার চলে কোন রকমে। তাই আমার উচ্চ শিক্ষার খরচ যোগান দেয়া আমার বাবার পক্ষে অসম্ভব। তাই অভাবের সংসারে অর্থ জোগান ও পড়ালেখার খরচ জোগাতে সে প্রাইভেট পড়িয়ে এ পর্যন্ত এসেছে মেহেদী। মা মর্জিনা বেগম জানায়, তার ছেলের স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু ভুমিহীন পিতার পক্ষে ছেলের স্বপ্ন পুরণ করা কী সম্ভব?
আদুরী আক্তার ঃ পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় থাকলে যে সাফল্যের চরম শিখরে পৌছা যায় তার প্রমান রেখেছেন ভুমিহীন ভ্যান মকছুদার রহমানের কন্যা আদুরী খাতুন। সে ইমামগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে নাজিরদহ ভূমিহীন পল্লী উদাসী বিল) গ্রামের বাসিন্দা। সে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ১ ভাই ১ বোন পিতা-মাতা সহ ৪ জনের সংসার। ভ্যান চালক পিতার আয়ে চলে ৪ জনের সংসার। মেয়ে চায় ডাক্তার হতে কিন্তু টানাটানির সংসারে মেয়ের আশা পুরণ করা কী সম্ভব। বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পুরুণ হতে পারে আদুরীর।
ররিউল ইসলাম রাসেল ঃ শ্রমিক হারুন অর রশিদের পুত্র মোঃ রবিউল ইসলাম রাসেল কঠোর পরিশ্রম করে ইমামগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। বন্ধুদের নিকট বই ধার নিয়ে ও নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে এতদুর আসলেও উচ্চ শিক্ষার ব্যায় নিয়ে দুচিন্তায় পড়েছে সে। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে রাসেল তৃতীয়। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাই বিশ্ব বিদ্যালয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ালেখা করছে। আর ছোট দু'ভাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। দিন মজুর পিতার পক্ষে ৪ ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ বহন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছেলে চায় বিসিএস দিয়ে সরকারি কলেজের শিক্ষক হতে। তাই তার মা রাবেয়া বেগম ছেলের উচ্চ অর্জনে বিত্তবান মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।