কাউনিয়ায় ১৭টি তিস্তার বালুচরে এখন সবুজ ফসলের সমারোহ
প্রকাশ : 2025-04-22 18:59:32১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক

চির যৌবনা প্রমত্তা তিস্তা নদী রংপুরের কাউনিয়া অংশে ক্রমাগত প্রবীণ হয়ে আজ মৃতপ্রায়। নদীর বুকে খর¯্রােতা পানির প্রবাহ আর দেখা মেলে না। বর্তমানে ঢেউহীন তিস্তার বুকজুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য বালুচর। সেই বালু চরে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফলাচ্ছে নানা অর্থকারী ফসল। নদী মাত্রিক এলাকা হিসেবে কাউনিয়ায় তিস্তা নদীর বুক জুড়ে জেগে উঠা ১৭টি চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিভিন্ন ফসলের সবুজ পাতা দোল খাচ্ছে।
সরেজমিনে তিস্তা নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বালু চর গুলোতে সবুজের সমারোহ। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের বুক চিড়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি থৈ-থৈ করলেও শুষ্ক মৌসুমে নদীর চর সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কৃষকরা নানা ফসল উৎপাদন করে থাকেন। তিস্তার ভাঙ্গন ও বন্যার পানিতে সম্বল হারানো মানুষ গুলো এখন ঘুরে দাঁড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফসল উৎপাদনে। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা এখন বিস্তীর্ণ বালুচরে আগামীর স্বপ্ন বুনছেন নদী পাড়ের মানুষ। চরগুলোতে ভুট্টা, সরিষা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়া, মরিচসহ প্রায় ১০ ধরনের ফসল চাষ করছে চরের কৃষক। আর সেই রূপালী বালুচরে দোল খাচ্ছে সবুজ ফসল। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ছারাই চরের মানুষ গুলো এখন ঘুরে দাঁড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভবনার ফসল গোলায় তুলতে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চরের জমিতে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকে বলছেন তিস্তার বালুচর এখন আর অভিশাপ নয়। বালুচরের জমি গুলোতে বিভিন্ন ফসলের সবুজ পাতা গুলো সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে। আর সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের স্বপ্ন। বন্যার ধকল কাটিয়ে শত শত কৃষক ফসলের মাঠে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে রংপুরের কাউনিয়ায় জেগে ওঠা তিস্তা নদীর ১৭টি চরে চলতি মৌসুমে উৎপাদন হবে প্রায় ২০ কোটি টাকার ফসল। ঢুসমারা চরের কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা নদীর সাথে যুদ্ধ করে ফসল ফলাই। গেল বন্যায় আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েগেছে। কৃষি বিভাগ কি কি ক্ষতি হয়েছে তার তালিকা নিয়ে গেছে, কিন্তু কোন প্রণোদনা দেয়নি। চরের জমিতে সোনার ফসল ফলিয়ে আমরা শহরের মানুষের মুখে তুলে দেই, কিন্তুশহরের মানুষ বা কর্মকর্তাগণ আমাদের খোজ রাখে না। আলুর দাম নেই, ডিজেল ও সারের দাম বেশি হওয়াসহ দাদন ব্যবসায়ীদের সুদ পরিশোধের পরে কাংক্ষিত লাভ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। কৃষি বিভাগ থেকে শতশত কৃষককে প্রনোদনা দেয়া হয়, কিন্তু কোন ধরনের কৃষক পাচ্ছে তা দেখার কেউ নেই। এ বিষয় গুলো যদি সরকার দেখত তাহলে প্রকৃত কৃষকের উপকার হতো। পাশাপাশি তারা সুদ মুক্ত কৃষি ঋণের দাবি করেন। তিস্তার বুকে জেগে উঠা ছোট বড় চর গুলোতে অনেক আশা নিয়ে রবি শষ্যসহ বাদামের চাষ করা হয়েছে। গত বছর ভরত পানি ছেরে দেয়ায় তাদের বাদাম তলিয়ে নষ্ট ও অনেকের বাদাম ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তারপরেও অনেক আশা নিয়ে বর্তমানে বাদাম চাষ করা হয়েছে। জানাগেছে তিস্তা নদী প্রায় ১১৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গাইবান্ধার ওপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে মিলিত হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশ ছোট্ট ভূখন্ডের বৃহৎ জনগোষ্ঠী। আমাদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। যার সফলতায় তিস্তার পানির সুষ্ঠু ব্যবহার অপরিহার্য। আমরা আশাবাদী, তিস্তা নদী যেন ফিরে পায় তার হারানো ঐতিহ্য। সর্বোপরি তিস্তা নদী যেন হয় মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন।