কাউনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মাটির পাতিলে রান্না

প্রকাশ : 2021-08-19 16:22:38১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

কাউনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মাটির পাতিলে রান্না

একটা সময় ছিল যখন গ্রাম বাংলার প্রতিটি গৃহস্থ পরিবারে স্বাস্থ্য সম্মত মাটির তৈরী পাতিলে রান্না হতো। যান্ত্রিক আধুনিকতা আর প্লাসটিকের দৌরত্বে হারিয়ে যেতে বসেছে মানব স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী মাটির পাত্রে রান্না করা খাবার।

সরেজমিনে খোজ নিয়ে যানাগেছে বাংলাদেশ, চীনসহ বিভিন্ন দেশে প্রাচীনকালে মাটির তৈজসপত্রের বহুল ব্যবহার ছিল। গ্রাম কিংবা শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই থাকতো প্লেট, গ্লাস, সানকি, কলস, পানির জগ ও মগ, চায়ের কাপ, নাস্তার বাটি, মাটির বড় (ভাত বা ঝোল রাখার জন্য) বোল, হাঁড়ি ইত্যাদি। ঐতিহ্যবাহী ওসব পাত্রের ব্যবহার বর্তমানে নেই বললেই চলে। ফলে ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্পও প্রায় বিলুপ্তির পথে।

বিশেজ্ঞদের মতে মাটির পাত্র শতভাগ প্রাকৃতিক। এতে কোনো বিষাক্ত পদার্থ নেই। মাটির পাত্র কাদা দিয়ে তৈরি করা হয়। যাতে প্রাকৃতিক ভাবে ক্ষারীযুক্ত হয়। তাপ প্রয়োগে মাটির পাত্র খাবারের অ্যাসিডের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে এবং পিএইচয়ের ভারসাম্য বজায় রাখে। যা খাবারকে সহজপাচ্য করে। মাটির পাত্রে খাবার রাখলে দীর্ঘ সময় ধরে গরম থাকে। খাবারের পুষ্টিগুণও অটুট রাখে মাটির পাত্র। মাটির পাত্রে একধরণের ক্ষারীয় উপাদান দিয়ে তৈরি যা খাবারের অ্যাসিড প্রক্রিয়াজাতকরণে সাহায্য করে এবং হজমে সাহায্য করে, মাটির পাত্রে রান্না করা খাবারে লৌহ,ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সালফারের মাত্রা বেশি থাকে। ধীর গতিতে রান্না ও তাপ নিরোধক হওয়ায় এটা খাবারের প্রাকৃতিক তেল ও আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। মাটির পাত্রে রান্নার আরেকটি ভালো দিক হল, এতে তেল কম লাগে।

আয়ুর্বেদশাস্ত্র অনুযায়ী, মাটির পাত্র রান্না ধীর করে এবং খাবারের স্বাদ ও মান উন্নত করে। খাদ্যের পুষ্টিমান বজায় রেখে স্বাদ ও গন্ধ অক্ষুন্ন রাখে বা বাড়িয়ে দেয় মাটির পাত্র। যা অন্যান্য উপাদানের তৈজস দিয়ে সম্ভব নয়। বনিক সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুছ ছালাম জানান, প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে, সেই সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে। মূলত মাটির পাত্রের উপকারী দিকগুলো অনেকেই জানেন না বলে এর ব্যবহার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে মানুষ। মাটির তৈরি পাত্রে রান্না, খাবার সংরক্ষণ এবং খাওয়ার জন্য মাটির পাত্র ব্যবহার করলে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমে। মাটির পাত্রে খাবারের পুষ্টিগুণ অটুট থাকে। প্লাস্টিকের বোতলে পানি সংরক্ষণের পর তা পান করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করা পানি শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এতে কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে না। আবার স্বাদেরও পরিবর্তন হয় না। গবেষণায় জানা গেছে, প্লাস্টিক পাত্রে সংরক্ষণ করা পানি শরীরের টেস্টোটেরোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। মাটি ক্ষারজাতীয় উপাদান। এটি পানির পিএইচ লেভেল বজায় রাখে। মাটির পাত্রে অ্যাসিডিক খাবার রান্না করলে এর ক্ষতিকারক উপাদান নিষ্ক্রিয় করে দেয় মাটির ক্ষারীয় উপাদান। রেফ্রিজারেটর হিসেবে কাজ করে মাটির পাত্র। যখন রেফ্রিজারেটর ছিল না, তখন খাবার ভালো রাখতে মাটির পাত্রই ছিল ভরসা। 

নির্বাহী অফিসার তাহমিনা তারিন জানান, স্বাস্থ্য সম্মত খাবার আসলেই মাটির পাতিলের রান্নায়ই সম্ভব। তিনি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে মাটির তৈরী পন্য ব্যবহারের আহবান জানান।