কাউনিয়ায় হারিয়ে গেছে গ্রামীন ঐতিহ্য হারিকেন ও কুপি বাতি

প্রকাশ : 2024-09-14 17:11:29১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

কাউনিয়ায় হারিয়ে গেছে গ্রামীন ঐতিহ্য হারিকেন ও কুপি বাতি

যান্ত্রিক আধুনিক সভ্যতায় কাউনিয়ায় হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হারিকেন। হারিকেনের স্থলে চরাঞ্চলসহ গ্রাম গুলোতে স্থান করেছে নানা রকমের বৈদ্যুতিক বাতি।

সরেজমিনে উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে দরিদ্রসহ উচ্চবৃত্তশালী কোন বাড়িতেই সেই গ্রামীন ঐতিহ্য হারিকেন বা কুপি বাতি। কথিত আছে রংপুরের মহিয়ষী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন মোম বাতির আলোতে পড়া লেখা করতেন। তারপর সময়ের বিবর্তনে সে কালের জমিদার বাড়ীতে চলে আসে হারিকেন। পরে ধীরে ধীরে সেই হারিকেন স্থান করে নেয় গ্রাম বাংলার প্রতিটি বাড়িতে। সে কাল এখন নেই। যে কালে হারিকেন ছিলো কবি ফররুখ আহমদ এর ’পাঞ্জেরী’ কবিতার নৌকার মাস্তলের আলোক বর্তিকা। সে কালে হারিকেন হাতে রাত বিরাত ছুটে চলতো ’রানার’, যে কালে কুঠিরে কুঠিরে শোভা পেতো হারিকেন ও কুপি বাতি। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার রাতের অন্ধকারের সাথী হারিকেন ও কুপি বাতি। এইতো বছর ত্রিশ আগের কথা। সন্ধা হলেই গ্রামের বাড়ী গুলোতে আলো জ্বালাবার জন্য শুরু হতো হারিকেন ধোঁয়া মোছার পালা, গাঁয়ের বধূঁরা অতি সাবধানে হারিকেনের চিম্নী মুছে ঘরে সন্ধা প্রদীপ জ্বালাতো। সেই গ্রাম বাংলায় গাঁয়ের বধূঁরা আজও আছে নেই শুধু সেই হারিকেন বা কুপি বাতি। হারিকেনের সেই দাপুটে যুগ এখন আর নেই। হারিকেনের জায়গা দখল করেছে বিদ্যুৎ বা সোলার। আধুনিকতার ছোঁয়ায় চলে এসেছে বিদ্যুৎ বাতী, সৌরবিদ্যুৎ, জেরারেটর আর চার্জার লাইট। চর ঢুসমারাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের গাঁয়ে এখন আর হারিকেন বা কুপি বাতি দেখা যায় না। যদিও বা কারও বাড়ীতে দু’একটি হারিকেন এর অস্তিত্ব মেলে তারও ঠাঁই হয়েছে বাড়ীর অবহেলিত কোনো এ কোনায় বা খড়ির মাচাঁয়। উপজেলার মোফাজ্জল হোসন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুল ইসলাম বলেন হারিকেন এর আলোর গুনের কথা। তিনি জানান হারিকেনের আলোতে পড়া লেখা করলে চোখের কোনো ক্ষতি হয় না। তাই সে কালের ছোট ছোট শিশুদের চোখের কোনো সমস্যা ছিলো না আর এখন বাহারী বিদ্যুতের আলোয় কম বয়েসী শিশুরাও চোখের নানা রকম সমস্যায় ভুগছে। কাউনিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার চর গনাই গ্রামের বৃদ্ধা জয়তুন বেওয়া জানান হারেিকনের নানা রকম আশ্চর্য গুনের কথা। তিনি বলেন তাদের সন্তানের জন্মের পর তারা সন্তানের নাভীর চিকিৎসায় হারিকেনে কাপড় গরম করে শেক দিলে ভালো হয়ে যেতো তা ছাড়াও সন্তান জন্মের পর হারিকেনে কাপড় গরম করে মায়ের পেটে শেক দিলে অরোগ্য লাভ করতো। কুপির কালি কাজল বানিয়ে শিশুর কপালে টিপ দেয়া হতো। এমনি কতো গুন আছে হারিকেনের আলোয় তা বর্ননাতীত। বিদ্যুতের আলোর ঝটকায় সেই গ্রামীন ঐতিহ্য হারিকেন আজ বিলুপ্তির তালিকায় চলে গেছে।