কাউনিয়ায় পানা টেনে মাছ মারা মৎস্যজীবীরা হতাশ

প্রকাশ : 2025-11-19 18:04:03১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

কাউনিয়ায় পানা টেনে মাছ মারা মৎস্যজীবীরা হতাশ

বাঙ্গালী ঐতিহ্যের সাথে মিশে ছিল গ্রাম বাংলায় শাখা নদী, নিচু জলাশয়, খাল-বিলে পানা টেনে মাছ ধরা উৎসব। সেই সাথে পানাটেনে মাছ মেরে জীবীকা নির্বাহ করতো মৎস্যজীবীরা। নদী ও জলাশয় গুলোতে প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে রিং ও চায়নাদুয়ারী জালের অবাধ ব্যবহারে হারিয়ে যাচ্ছে দেশী প্রজাতির মাছ। পানা টেনে মাছ না পেয়ে মৎস্যজীবীরা হতাশ।

সরেজমিনে বিভিন্ন জলাশয় এলাকায় গিয়ে বয়স্ক মানুষের কাছ থেকে জানা গেছে, বর্ষার পর শীতের আগমনে পানি যখন কমে আসে, তখন গ্রামের সৌখিন মানুষ ও মৎসজীবীরা দলবেঁধে কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ হেঙ্গা জাল দিয়ে (রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায়) টেনে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে আসে। এই প্রক্রিয়ায় মাছগুলো পানা ও অন্যান্য আগাছার মধ্যে আটকা পড়ে। এটি শুধু মাছ ধরার একটি কৌশলই নয়, বরং এটি একটি আনন্দদায়ক উৎসবও বটে। যেখানে এলাকার মানুষ, এমনকি শিশুরাও আনন্দ উল্লাসের সাথে অংশগ্রহণ করে। মানাস নদী পাড়ে কথা হয় মৎস্যজীবী রনজিৎ দাসের সাথে, তিনি জানান যখন নদীতে পানি কমে যায় তখন দলবদ্ধভাবে কচুরিপানা বা অন্যান্য আগাছা টেনে মাছ ধরা হয়। পানা টেনে একটি নির্দিষ্ট দিকে নিয়ে আসা হয় এবং এর ভিতরে লুকানো মাছগুলো বেরিয়ে আসে এবং জালে আটকা পড়ে। এটি গ্রামীণ বাংলায় একটি জনপ্রিয় মাছ ধরার কৌশল। বিশেষত শীতকালে নদী নালা খাল বিলে পানি কমে গেলে এলাকার গ্রামে গ্রামে দল বেধে কচুরি পানা টেনে মাছ মারা উৎসব শুরু হয়। মানাস নদীতে মৎস্যজীবীরা কচুরী পানা টেনে মাছ মেরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। তেমনি কাউনিয়ায় উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের নিলামখরিদা সদরা জামতলা গ্রামে মানস নদীতে পানি কমে যাওয়ায় মাছ মেরে জীবন নির্বাহকারী কয়েকজন কচুরি পানা টেনে মাছ মারতে দেখা যায়। কচুরিপানা টেনে মাছ মারা সোহরাব, প্রশনজিৎ দাস, সত্যজিৎ দাস বললে, একটা সময় ছিল যখন মানাস নদীতে প্রচুর দেশী মাছ পাওয়া যেত, কিন্তু কালের বিবর্তনে মানাস নদীর ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে অধিক হারে কিটনাশক, রাসায়নিক সার, রিং ও কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহারের ফলে দেশীয় মাছ প্রজনন নষ্ট হয়ে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সাথে দেশের জলাশয় গুলোতে মাছ চাষ করায় এখন আর দেশী মাছ পাওয়া যায় না। দেশী মাছ আহরন করে আমরা যারা জীবন জীবিকা নির্বাহ করতাম তাদের অনেকেই এই পেশা ছেরে অন্য পেশায় চলে গেছে। আগে মানাস নদীসহ যেকোন খাল বিলে পানা টানলেই বিভিন্ন দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। এখন সারাদিন পানা টেনেও ১কেজি মাছ পাওয়া যায় না। তারপর ও অন্য কোন উপায় না থাকায় এই পেশা ধরে রেখেছি। সরকারকে এই পেশার মানুষ গুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে ও দেশীয় মাছ রক্ষায় নদী নালা খাল বিল গুলোকে উন্মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, কোন ভাবেই পানি প্রবাহ বন্ধ করে মাছ চাষ এবং রিং ও কারেন্ট জাল ব্যবহার বন্ধ করার ব্যবস্থা করা।