কাউনিয়ায় নিষিদ্ধ জালে অস্তিত্ব সংকটে দেশীয় প্রজাতির মাছ
প্রকাশ : 2025-07-31 17:55:03১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
সারা দেশের ন্যায় রংপুরের কাউনিয়ায় নিষিদ্ধ রিং জালের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে নদী-নালা, খাল-বিল ও প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে ক্রমেই ধ্বংসের পথে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন নদী ও জলাশয় ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি নদী-নালা, খাল বিলে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে মৎস্য অফিসে বারবার জানানোর পর লোক দেখানো ২/১অভিযান করলেও অবৈধ জাল পুরোপুরি উচ্ছেদে তেমন কোনো ভূমিকা রাখছে না। এসব জালের কারনে দিনদিন মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী, খাল-বিল ও ডোবা-নালা গুলো। ফলে বিলুপ্তি ও চরম হুমকিতে রয়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছসহ বিভিন্ন প্রকার জলজ প্রাণী। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা বাজার বিক্রি করছে ভংঙ্কর এসব জাল। কিছু মানুষ নিষিদ্ধ এসব জাল দিয়ে জলাশয়ে অবাধে মাছ শিকার করছে। প্রতিনিয়তই মাছ ধরার এমন দৃশ্য চোখে পড়লেও প্রশাসনের নজরে আসছে না। জানাগেছে ১০৮ প্রকার দেশি জাতের মাছ নিয়ে রংপুরের বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গান 'নয়া ডাঙ্গাতে মাছ উজাইছে হ্যাঙ্গা পাতায়া থইস। বহু বছর আগে গানটি রচিত হয়েছে। গানটি থাকলেও ১০৮ প্রকারের মাছ আর মিলছে না। বর্তমানে ২৫-৩০ জাতের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আর বাকি জাতের মাছ গুলো গত ২০ বছরে হারিয়ে গেছে। দেশে চায়না রিং জাল, বেহুন্দি জাল, সুতিজাল, ভেসাল জাল ইত্যাদির কারণে দেশি মাছের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এই জালগুলো ব্যবহারের ফলে মাছের আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে, ডিমওয়ালা মাছ এবং পোনা মাছও ধরা পড়ছে, যা দেশীয় মাছের প্রজাতিকে হুমকির মুখে ফেলছে। এক শ্রেণির মৎস্য শিকারি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কারেন্ট ও রিং জাল দিয়ে মাছ নিধনে। এই জালগুলো ব্যবহারের ফলে ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অধিকাংশ জলাশয় পানিশূন্য হয়ে পড়ায় মাছের বিচরণ ও বৃদ্ধি থেমে যাচ্ছে। এছাড়া কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় দূষিত হচ্ছে জলাশয়ের পানি। এতে দেশি মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া চায়না দুয়ারি জাল, মরণ জাল, কারেন্ট জাল ও রিং জাল দিয়ে মাছ শিকার করায় মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন হচ্ছে। মাছের বিড্রিং গ্রাউন্ডগুলো নষ্ট করা হয়েছে। হরিশ^র গ্রামের মুক্তা বলেন, মাত্র কয়েক বছর আগেও স্থানীয় বাজারে অনেক দেশি মাছ পাওয়া যেত। এখন সেগুলো বিরল হয়ে উঠছে। স্থানীয় দেশী মাছ ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যেখানে আগে ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হত। দেশি জাতের মাছ ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে দেশীয় মাছের সংকট এখন প্রকট। এই সংকটের মূল কারণ অবৈধ জালের অবাধ ব্যবহার। বর্ষা শুরু হতেই এসব জালের মাধ্যমে ডিম ছাড়ার আগেই পোনা মাছ নির্বিচারে ধরা হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র ভয়াবহভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নিষিদ্ধ জাল গুলোর ব্যবহারের ফলে উপজেলার মৎস্যজীবী পরিবার গুলো অসহায় হয়ে পড়েছে। উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নে সহ¯্রাধিক মৎস্যজীবী পরিবার রয়েছে। তারা সারা বছর মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, আমি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছি, এছারা নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করা বেআইনি। মাছ শিকারে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার না করার জন্য প্রচার প্রচারণা চলমান রয়েছে। আমরা বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিদুল হক বলেন, নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করা হবে।