কাউনিয়ায় তিস্তার বুকে ধু-ধু বালুচরে এখন সবুজের সমারোহ
প্রকাশ : 2025-03-03 18:53:53১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক

ভারতের ভয়াবহ আগ্রাসন
আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি। বিশ্বকবির ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতাটি কালের বির্বতনে অচল হতে চলেছে। বৈশাখ আসার অনেক আগেই পানি নেই নদীতে। কোথাও হাটু পানি, কোথাওবা কম। তিস্তা এখন হেঁটেই পাড় হওয় যায়। তিস্তা নদী দিয়ে এখন গাড়ি চলে। খর¯্রতা নদীর এখন করুন হাল। শুকনো মৌসুমে তিস্তা শুকিয়ে মরুভুমি হয়ে যাচ্ছে। তিস্তার ন্যায্য পানির দাবিতে বছরের পর বছর সভা-সমাবেশ বিক্ষোভ করেও কোন লাভ হয়নি। তিস্তা নদীর সাথে মিশে আছে ভারত ও বাংলাদেশের বিশাল অঞ্চল। নদীটি সিকিমের হিমালয়ের ৭২০০ মিটার সুউচ্চ চিতামু হ্রদ থেকে উৎপত্তি। এই নদী দার্জিলিং এ শিভকগোলা নামক একটি গিরিসস্কটের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দুয়ার সমভূমিতে প্রবেশ করেছে। এরপর জলপাইগুড়ি পেরিয়ে নিলফামারীর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ১২৫ কিঃ মিঃ প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিনে তিস্তা নদীর চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, পায়ে হেঁটেই তিস্তা নদী পাড়ি দিচ্ছে দুই পাড়ের বাসিন্দারা। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা ধু-ধু বালুচরে সবুজের সমারোহ। নদীতে পানি সল্পতায় নৌকা না চলায় চরে উৎপাদিত ফসল বিক্রির জন্য বাজারে আনতে বহু কষ্ট করে ঘারে করে নিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে। বাজারহাটের বুড়িরহাট ও শরিসাবাড়ি থেকে পায়ে হেঁটেই বেশির ভাগ মানুষ নদী পাড়ি দিচ্ছে। ঘারে করে আলু ও মরিচ নিয়ে আসা রমজান জানান, নদীতে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আরো কম। নদীর একাধিক পথ তৈরি হয়েছে। কোথাও হেঁটেই যাওয়া যায় আবার কোথাও সামান্য একটু নদী নৌকা দিয়ে পার হতে হয়। প্রভাষক আসাদুজ্জামান শামিম জানান তিস্তায় পানি চুক্তির বাস্তবায়ন নেই। এক সময়ের খর¯্রােতা নদীতে এখন হাঁটু পানি। বর্তমানে নদীটি পানি সংকটে আজ মৃত প্রায়। নদীতে খর¯্রােতা জলের ¯্রােত আর নেই। বর্ষা শেষ হলে পানি শুকিয়ে মরুভুমিতে পরিনত হয় তিস্তা নদী। ঢেউহীন তিস্তার বুকে জেগে উঠে অসংখ্য চর। তিস্তাপাড়ে নেই আগের মত মাঝি মাল্লাদের ডাক হাক। নেই জেলেদের মাছ ধরার কর্ম ব্যস্থতা। তিস্তাপাড়ের জীবন জীবিকা যেন থমকে দাঁড়িয়েছে নিরাশার বালুচরে। নিজপাড়া গ্রামের জেলে সত্যবাবু বলেন, আগে তিস্তা নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার সুখেই চলত। এখন নিজের খাবার মাছ টুকুও জোটেনা। পানি শুন্য তিস্তায় মাছের আকাল পড়েছে। মাছ আকালে অনেক জেলে তাদের পেশা পরিবর্তন করেছেন। যারা রয়েছেন তাদেরও সংসার চলে অনাহারে অর্ধহারে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবী তাদের। ঢুসমারা চরের কৃষক কোব্বাত বলেন, বর্ষাকালে পানির প্রয়োজন নেই, তখন ব্যাপক হারে পানি ছেড়ে ভারত আমাদের ফসল ও ঘরবাড়ি ধ্বংস করে। আবার শুস্ক মৌসুমে যখন পানির প্রয়োজন তখন পানি পাই না। যৌবনে দুপাড় ছাপিয়ে দাপিয়ে চলা তিস্তা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় পায়ে হেঁটেই তিস্তা নদী পাড়ি দিচ্ছে পথচারীরা। বর্ষাকালে বন্যা আর নদী ভাঙ্গগনের মুখে পড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষ। বর্ষা শেষ হলে পানি শুকিয়ে মরুভুমিতে পরিনত হয় তিস্তা নদী। খেয়া ঘাটের মাঝি শফিকুল জানান, মুল নদীতে হাটুর নিচে পানি, যা পায়ে হেঁটেই পাড় হওয়া যায়। বাকী পুরো তিস্তা নদী ধু-ধু বালু চর। ফলে নৌকা চালানোর মত পানি নেই এখন। তাই যাত্রীর অভাবে নৌকা তুলে রেখেছি। গদাই চরের কৃষক আলামিন বলেন, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় চরে এখন বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া আখতার বলেন, গত কয়েক বছর থেকে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি প্রবাহ থাকে না। ফলে কৃষকেরা বিপাকে পড়ছে। তবে তিস্তার জেগে ওঠা চরে কৃষি বিভাগ থেকে প্রনোদনার মাধ্যেমে কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হচ্ছে।