কাউনিয়ায় তিন মন্ত্রীর আশ্বাসের বানী নিরবে কাঁদে

প্রকাশ : 2022-08-18 19:33:57১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

কাউনিয়ায় তিন মন্ত্রীর আশ্বাসের বানী নিরবে কাঁদে

উত্তরের জেলা নীলফামারী দিয়ে প্রবেশ করে রংপুরের কাউনিয়া হয়ে গাইবান্ধার সাঘাটার ভেতর দিয়ে এঁকে বেঁকে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদী মিলেছে ব্র²পুত্র নদে গিয়ে। ভারতের গজল ডোবার থেকে শুরু করে নীলফামারী জেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে তিস্তা নদী। প্রায় ১১৫ কিঃ মিটার তিস্তা নদী থেকে সৃষ্টি হয়েছে অনেক শাখা নদী। কাউনিয়ায় ৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার পাশ দিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত। তিস্তা নদী ভাঙ্গনে কাউনিয়ার মানচিত্র থেকে অনেক আগেই শুভাঘাট শনশনাটারী নামের ২টি গ্রাম বিলিন হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে প্রায় শতাধিক বাড়িঘর ও ৩শ হেক্টর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন। তিস্তার ভাঙ্গন, ফসল হানী, বন্যা আর শুকনা মৌসুমে পানি কম, এসব থেকে পরিত্রান পেতে নদী পাড়ের মানুষের দাবী স্থায়ী বাঁধ নির্মান, নদী খনন ও পানির ন্যায্য হিস্যাসহ তিস্তা মহপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন। 

প্রতিবছর তিস্তার ভাঙ্গনে শতশত বাড়ি-ঘর আর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদী পারের মানুষ। তিস্তা নদীতে যখন পানির প্রয়োজন তখন থাকে হাটু পানি আর বালু চর, আর যখন পানির প্রয়োজন নাই তখন ভাসিয়ে দেয় ফসল আর ঘর-বাড়ি। বন্ধু রাষ্ট্র ভারত গজল ডোবায় বাঁধ নির্মাণ করায় এবং পানির ন্যায্য হিস্যা না দেওয়ায় শুস্ক মৌসুমে তিস্তা নদী পানি শূন্য হয়ে কংকালসারে পরিণত হয় আবার বর্ষা মৌসুমে পানি ছেরে দেয়ায় দেখা দেয় বন্যা আর নদী ভাঙ্গন। তিস্তার তলদেশে অজ পাথর, নুড়ি, বালী আর পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায় তিস্তার বুক ফুলে বর্ষা মৌসুমে তিস্তার পানি আছরে পড়ে নদীর দুই ধারে। সে কারনে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার মানুষ হয় গৃহ হারা, জমি হারিয়ে অনেকে হয় পথের ভিখেরী। খড়া মৌসুমে পানির অভাবে ইরি বোরোসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ করতে পারেনা নদী তীরের মানুষেরা। নদী তীরবর্তি মানুষ সাহায্যে চায় না, চায় বাঁধ নির্মান, নদী খনন ও পানির ন্যায্য হিস্যা। শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা জানান, নিজপাড়া, তালুকশাহবাজ, চরগনাই, বিশ্বনাথসহ বেশ কিছু গ্রামের মানুষ নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় বহুবছর থেকে আবেদন, নিবেদন, মানববন্ধন করে কোন কাজ হয়নি। 

আসাদজ্জিামান চৌধুরী তোতা জানান, গাজিরহাটে একটি অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি আশ্বাস দিয়েছিলেন নদী ভাঙ্গন রোধে যা যা করনিয় তা করা হবে। সেই আশ্বাসের কোন বাস্তবায়ন নাই। আশ্বাসের বানী নিরবে কাঁদে। কবে হবে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ তার কোন সঠিক ব্যাখ্যা নেই। শুকনো মৌসুমে নদীকে ঘিরে বেঁচে থাকা হাজার হাজার মৎস্য জীবি হয় বেকার, টেপামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল জানান, তার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়। চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশী ভাঙ্গনের শিকার তার ইউনিয়ন। এটির স্থায়ী সমাধান দরকার। বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান, নিজপাড়া ও তালুকশাহাবাজ গ্রামে পরিষদের ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যাক্তিগত অর্থায়নে বাঁশ দিয়ে পাইলিং তৈরী করে নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ করা হয়েছে। তবে স্থায়ী সমাধান না করলে প্রতিবছর এ সমস্যা থেকেই যাবে। নির্বাহী অফিসার তাহ্মিনা তারিন জানান, ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি এবং মন্ত্রীমহদয়কেও বিষয়টি জানিয়েছি। 

উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া জানান, ভাঙ্গন রোধে ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে প্রায় ৫লাখ টাকা দিয়েছি প্রয়োজনে আরো দিব, কিন্তু এটির স্থায়ী সমাধান দরকার। কৃষি নির্ভর রংপুর বিভাগের মানুষের কৃষি আর মৎস্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে জরুরী ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধ নির্মান, ড্রেজিং আর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এটি এখন সময়ের দাবী।