কষ্ট ও বিষাদ ছিল শেষ সম্রাটের কবিতার উপজীব্য
প্রকাশ : 2023-11-07 12:45:11১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
মরনেকে বাদ ইশ্ক্ব মেরা বা আসর হুয়া উড়নে লাগি হ্যায় খাক মেরি ক্যোয়ি ইয়ার মে; কিৎনা বদনসিব জাফর দাফনকে লিয়ে দোগজ জামিন ভি মিলানা চুকি ক্যোয়ি ইয়ার মে।
বাহাদুর শাহ জাফর
বাহাদুর শাহ জাফর (জন্ম: মির্জা আবু জাফর সিরাজ-উদ-দীন মুহাম্মদ হিসাবে) ২৪ অক্টোবর ১৭৭৫ খ্রিষ্টাব্দে (২৭ শাবান ১১৮৯ হিজরি)দিল্লির লালকেল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দিল্লির সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ (১৮০৬-৩৭ খ্রি:) ও সম্রাজ্ঞী লাল বাঈর দ্বিতীয় পুত্র। তার ঊর্ধ্বতন বংশ তালিকা বিশতম স্তরে গিয়ে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দীন মুহাম্মদ বাবুরের সাথে মিলেছে। বাহাদুর শাহ জাফর ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের ১৯তম এবং শেষ সম্রাট।
পিতার মৃত্যুর পর বাহাদুর শাহ (দ্বিতীয়) ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। প্রকৃতপক্ষে পিতামহ সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম (১৭৫৯-১৮০৬ খ্রি:) এবং পিতা সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ উভয়ের মতো দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পেনশনভোগী ছিলেন। তিনি বার্ষিক ১ লাখ টাকা ভাতা পেতেন। পিতার মতো বাহাদুর শাহ নিজের ও মুঘল খান্দানের ভরণপোষণে ভাতা বৃদ্ধির জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু "বাদশাহ" উপাধি ত্যাগ এবং লালকেল্লার বাইরে সাধারণ নাগরিকের মতো জীবনযাপনের শর্তে তিনি রাজি হননি। এ ছাড়া সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন নিয়েও ইংরেজদের সঙ্গে সম্রাটের মনোমালিন্য হয়। সম্রাটের ক্ষমতা ও মর্যাদা খর্ব করতে নানা উদ্যোগ নেয় কোম্পানি। ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও সম্পদ সব কিছু হারিয়ে সম্রাট প্রাসাদের চার দেয়ালের অভ্যন্তরে জীবন কাটাতে বাধ্য হলেন। এ সময় অমর্যাদার মনোবেদনা ভুলে থাকার জন্য তিনি গজল ও মুশায়েরায় নিমগ্ন থাকতেন ; লালকেল্লায় সাহিত্যের আসর বসিয়ে সময় কাটাতেন। তিনি নিজেও কবিতা লিখতেন। জীবনের কষ্ট ও বিষাদ তার কবিতার মূল বিষয়। বাহাতার কবিতার ছত্রে ছত্রে দু:খ ও বিষাদের সাথে দেশ ও জাতির পরাধীনতার কথা বিধৃত। একটি কবিতায় আছেঃ "উমর দরাজ মাঙ্গঁকে লায়েথে চার দিন দো আরজুমে কাট গয়ে, দো ইন্তেজার মেঁ।" যার অর্থ "চার দিনের জন্য আয়ু নিয়ে এসেছিলাম। দু’টি কাটল প্রত্যাশায় আর দু’টি অপেক্ষায়।"
বাহাদুর শাহ জাফর পূর্বসূরি ও তার বাবা মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের ২য় সন্তান। সিপাহী বিপ্লবের শেষে ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ শাসকেরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ও রেঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠায়, এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী মায়ানমার সফরে গিয়ে তার সমাধি সৌধ পরিদর্শন করেন ।সে সময় তিনি পরিদর্শক বইতে লিখেছিলেন
"দু গজ জমিন তো না মিলি হিন্দুস্তান মে , পার তেরী কোরবানী সে উঠি আজাদী কি আওয়াজ, বদনসীব তো নাহি জাফর, জুড়া হ্যায় তেরা নাম ভারত শান আউর শওকত মে, আজাদী কি পয়গাম সে"।