করোনা মোকাবিলায় জাতীয় ঐকমত্যের আহ্বান বিএনপির
প্রকাশ : 2021-04-09 19:43:34১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
করোনা সংক্রমণের সংকট কাটিয়ে উঠতে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে মোকাবিলা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, করোনা মোকাবিলায় সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা, অব্যবস্থাপনা দেশের ১৬ কোটি মানুষকে একটি অনিশ্চিত গন্তব্যে নিয়ে চলছে। জাতির এই চরম দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আমরা জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমাদের আবারও আহ্বান, আসুন আমরা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগী হই।
শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত আরএমজি সেক্টরে কয়েক হাজার গার্মেন্টস বন্ধ হয়েছে। ৪০ লাখ শ্রমিকের জীবন-জীবিকা আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে ১০ লাখ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। অর্থের অভাবে ঢাকা ছাড়ছে শত শত পরিবার।’
‘তাই সরকারের প্রতি আহ্বান, আসুন মানুষ বাঁচাই-দেশ বাঁচাই। আমরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের পরিবার-পরিজনদের সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং যারা মারা গেছেন, তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আমরা চাই এ মহামারিতে আর যেন একটি প্রাণও না ঝরে পড়ে’—যোগ করেন ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, দেশে করোনা মহামারি এক ভয়াবহরূপ পরিগ্রহ করেছে। সরকারের উদাসীনতা, অগ্রাধিকার নির্ধারণে ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা, রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের অপকৌশল হিসেবে করোনা সংক্রমণের তথ্য গোপন ও সীমাহীন ব্যর্থতা আজ পুরো দেশকে এক বিপদসংকুল পথে নিয়ে চলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও প্রস্তাব রাখছি, এখনও সময়ে আছে, সর্বদলীয় কমিটি গঠন করেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করেন— তাহলেই শুধুমাত্র এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। একটা কথা আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, এই যে বিশাল চ্যালেঞ্জ, তা জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া সম্ভব নয়।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হলে আমরা যেটা এর আগেও বলেছি যে, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি সকল স্তরের মানুষকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষকে এই যে ব্যাধি, এই ব্যাধির যে ভয়াবহতা. সেই সম্পর্কে তাদেরকে ধারণা দিতে হবে এবং তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। আসুন, আমরা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগ নেই মানুষ বাঁচাই, দেশ বাঁচাই।’
তিনি বলেন, ‘এখন যেটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, মানুষের জীবন ও জীবিকাকে রক্ষা করা। আমরা সরকারকে আহ্বান করবো, আজকে প্রতিটি ইনফরমাল সেক্টারের যারা উদ্যোক্তা আছেন, তাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণ প্রণোদনা দিতে হবে।’
বাইডেনের জলবায়ু সম্মেলনের উদ্যোগকে স্বাগত বিএনপির
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরির ঢাকা সফরের ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ফখরুল বলেন, ‘সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত বাইডেন প্রশাসন এই জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টাকে সম্পূর্ণ অগ্রাধিকার দিয়ে, গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বের ৪০টি দেশের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি আলোচনা করবেন এবং তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে অবশ্যই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা অবশ্যই মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই উদ্যোগকে সমর্থন করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, ৪০টি দেশের নেতাদের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের আলোচনা থেকে একটি পথ বেরিয়ে আসবে, একটা স্ট্র্যাটেজিক পলিসি তৈরি হবে। তাতে আমরা ভবিষ্যতে এই পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবো।’
বর্তমানে বিএনপির ৫ হাজার নেতাকর্মী করোনাক্রান্ত, চার শতাধিক মারা গেছেন
বর্তমানে সারাদেশে বিএনপির পাঁচ হাজার নেতাকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপিতে খুবই বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের অত্যন্ত সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সেলিমা রহমান, ডা. জাহিদ হোসেন এবং রুহুল কবির রিজভী করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছেন।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সারাদেশে করোনায় বিএনপির চার শতাধিক নেতাকর্মী মারা গেছেন। আর পাঁচ হাজার নেতাকর্মী করোনা আক্রান্ত আছেন। এটা গত ২-৩ দিন আগের খবর। আমরা থানা-ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, খন্দকার আহাদ চৌধুরীসহ অনেকেই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।’
‘আবারও বিএনপির ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হবে’ উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘গত বছরের মতো বিএনপির সামর্থ্য অনুযায়ী ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের পক্ষ থেকে যেসব সেবা দেওয়া হয়েছিল, সেটি এবারও চলমান থাকবে।’