করোনায় স্কুল কলেজ ছিল বন্ধ,রাত জেগে মোবাইলে গেমস্ নামক জুয়ার নেশায় হাজারও শীক্ষার্থী,

প্রকাশ : 2022-04-07 18:55:20১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

করোনায় স্কুল কলেজ ছিল বন্ধ,রাত জেগে মোবাইলে গেমস্ নামক জুয়ার নেশায় হাজারও শীক্ষার্থী,

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রভাবে যখন মানুষের জনসমগম থমকে গিয়েছিল অনেকটা,বন্ধ ছিল স্কুল কলেজ, ঘরে বসে থাকা স্কুল কলেজ পড়–য়া কিশোর কিশোরী জোকে গেছে স্মার্টফোনের সুন্দর সুন্দর গ্রাফিক্স গেমস্ এর দিকে। মোবাইলে পিপল বিজনেস এ চলছে জমজমাট জুয়া। সম্প্রতি নিজেদের একাউন্টের মাধ্যমে ডলার দিয়ে এসব জুয়া খেলার প্রবণতা বেড়েছে।যাদের মাধ্যমে ডলার দিয়ে জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে স্কুল কলেজ পড়–য়া কিশোর সহ সব বয়সী মানুষ।

প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে দিনের পর দিন রাতের পর রাত জেগে মোবাইল ব্যবহার করে কাটিয়ে দেয়া আমাদের কাছে একদম সহজ হয়ে গেছে। ফেসবুক, ইউটিউব, মেসেজিং করে রাতের বেশির ভাগ সময় পার করে দেয়া আমাদের প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া স্মার্টফোনের সুন্দর সুন্দর গ্রাফিক্স গেমস তো রয়েছেই, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের সময় টা কে আনন্দের সাথে কাটাতে পারি। কিন্তু এই গেম আর ডিজিটাল জুয়া কতটা ক্ষতির কারন তা কি কেও চিন্তা করতে পারে! এই গেম মাদকের চেয়েও বেশি ভয়াবহতা রয়েছে।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অবাধে চলছে এই লুডু,তিন পাতি, ঋৎবব ঋরৎব, ঈড়প, চধনড়লর, ঋৎবব ভরঃবৎং সহ অনেক খেলার নামে ডিজিটাল জুয়া। আর এই ডিজিটাল জুয়া খেলা রোধ করার মত কেউ নেই। বাজি হয় মুখে মুখে, অথবা সংকেতে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, করোনার কারনে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় ছাত্র ও যুবকরাই বেশি মেতে উঠেছে এই মরণনেশা ডিজিটাল জুয়ায়। অর্থাৎ এই অ্যাপস বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনারা অন্য কারো সাথে লুডু,তিন পাতি, ঋৎবব ঋরৎব, ঈড়প, চধনড়লর, ঋৎবব ভরঃবৎং,তাস, দাবা ইত্যাদি গেমস খেলে তাদের সাথে টাকা দিয়ে বাজি ধরতে পারেন! সাপোজ আপনি অন্য কারো সাথে লুডু খেলে ৫শ টাকা বাজি ধরলেন, খেলে যে জিতবে সে পাঁচ শত টাকা পাবে।

গাজীপুরের শ্রীপুর ূূূউপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের সোনাব গ্রামের কলেজ পড়–য়া এক ছাত্র সজিব বলেন,আমি মাঝেমধ্যে এভাবে গেমস খেলি, এতে আমার সময়টা আরো আনন্দদায়ক হয় এবং সময় খুব ভালো কাটে। তবে আমি খুব বেশি টাকা বাজি ধরি না, সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ টাকা বাজি ধরি। এতে হারলেও আপনার তেমন খারাপ লাগবে না।

কালার মাষ্টার কারখানার এক শ্রমিক সোহাগ মিয়া বলেন, অনেকেই রয়েছে যে ওয়েবসাইট বা এপস এর সাথে যেখানে অনেক কোটিপতির ছেলে মেয়েরা লক্ষ লক্ষ টাকা বাজি ধরে। যাই হোক বড় বড় লোকের বড় বড় ব্যাপার, আমরা কম টাকা বাজি ধরে খেলা করি।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রায় সব পাড়া-মহল্লা, চায়ের দোকান, পথে-ঘাটে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলেও চলছে লুডুর জমজমাট জুয়ার আসর। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেটে লুডু সফটওয়্যার ডাউনলোড করে রাত-দিন যেখানে সেখানে ৪-৫ জন জুয়ারি একটি মোবাইলে লুডু খেলছে। জৈনা বাজার নামাবাজার এলাকায়,কাচাঁ বাজারসহ বিভিন্ন চায়ের দোকানের ভিতর দিনরাত চলছে এই লুডু বাজি। এছাড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন চায়ের দোকান ও রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত এই খেলায় মত্ত থাকে বেশিরভাগ কিশোর, যুবক,কারখানার শ্রমিক ও স্কুল কলেজ পড়–য়া ছাত্র, এমনকি বয়স্করাও খেলে এই খেলা।

গাজীপুরের শেষ সিমান্ত পর্যন্ত জৈনা বাজার সরেজমিনে একাধিক স্থানে খেলতে দেখা যায় এই জুয়াড়িদের। এসব জুয়াড়ির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রিকশা, ভ্যান, অটো, ট্রলি গাড়ি, ক্ষেতখামারে কাজ করা শ্রমিক,কারখানার শ্রমিক, দোকান কর্মচারী এবং স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিদিন বিভিন্ন চায়ের দোকানে লাখ লাখ টাকার মোবাইল লুডুতে জুয়া খেলা হয়। তবে সম্প্রতি গাজীপুরে অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোন দিয়ে লুডু খেলা (জুয়া) ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চার পরিবারের চারজন, সাথে আরও দু-চারজন পরামর্শকসহ লুডু দিয়ে চলছে জুয়া খেলা। এসব লুডু বাজিতে অনেকেই আসক্ত হয়েছে। এ কারণে অনেকের পরিবারে প্রতিদিন ঝগড়াঝাঁটি লেগেই আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক জানান, শখ করে একদিন ৫শ’ টাকা বাজি ধরেছিলাম, সেই টাকা তুলতে গিয়ে এই খেলার নেশা হয়েছে।

চা দোকানদার আজিজুল মিয়া বলেন, মোবাইল এখন অনেকটা আমাদের প্রয়োাজনীয় বস্তুর মতো। তাই বড়দের মতো শিশুরাও মোবাইল ব্যবহার করে এবং এর ভালো দিকগুলো না জেনে বুঝে, এটা ব্যবহার করা আমাদের কাম্য নয়। শুধু মোবাইলে কেবল গেম খেলে শিশু সময় নষ্ট করছে না,পড়া লেখার অনেক ক্ষতি করছে এটা মোটেও ভালো দিক নয়।

মাওনা এলাকার ইমরান জানান, প্রতিদিন এই লুডু খেলেন বন্ধুবান্ধব মিলে। তবে টাকা দিয়ে না খেলে তারা খাবার বাজি ধরেন এটা নিয়ে সত্যিই অনেক পরিবারে ঝামেলা হয়।

এভাবেই লুডু বাজি আর খেলায় দীর্ঘসময় মগ্ন থাকতে জুয়াড়িরা ব্যবহার করছে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক। ফলে গাজীপুরে বেকার ও মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং এই লুডু বাজি প্রতিরোধের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন গাজীপুরের সচেতন মহল।