করোনায় কাউকে ছাড়ছে না, এবার বিপর্যস্ত বিনোদন অঙ্গন

প্রকাশ : 2021-04-09 10:49:02১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

করোনায় কাউকে ছাড়ছে না, এবার বিপর্যস্ত বিনোদন অঙ্গন

করোনাভাইরাস কাউকে ছাড়ছে না। অভিনয়শিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, পরিচালক, নাট্যকারসহ বিনোদন অঙ্গনের বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই আসছে সংক্রমিত হওয়ার খবর। এর মধ্যে আবার কারও কারও মৃত্যুর খবর শোকে মুহ্যমান করে রেখেছে এ অঙ্গনকে।

গত বুধবার বিকেলে হঠাৎ খবর ছড়িয়ে পড়ে, বরেণ্য অভিনেত্রী ও পরিচালক সারাহ বেগম কবরী করোনায় আক্রান্ত। এ খবর উদ্বিগ্ন করে তোলে তাঁর সমসাময়িক শিল্পীদের। হঠাৎ খুসখুসে কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শমতো নমুনা পরীক্ষায় দেন কবরী। ৫ এপ্রিল প্রতিবেদন হাতে এলে জানতে পারেন, তিনি করোনা পজিটিভ। দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।

 হাসপাতালে ভর্তির পর কবরীর বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। ফুসফুসের অবস্থা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও এক দিন। তবে বড় রকমের কোনো শারীরিক অসুবিধা হচ্ছে না বলে জানান তিনি। 

কবরী বলেন, ‘খাবারের স্বাদ পাচ্ছি না, তাই একটু অস্থির লাগছে। জ্বর নেই, তবে ব্যথা আছে। হাসপাতালে ভর্তির পর মোটামুটি ভালো।’ তবে গতকাল দিবাগত রাতের শেষ দিকে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। তাঁকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছে।

কবরীর সহকারী নুর উদ্দিন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘ম্যাডামকে আইসিইউ সেবা দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে। এরপরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারাও জানান, আইসিইউ রেডি করা হয়েছে। এরপর আমরা বেলা দুইটার পর সেখানে পৌঁছাই। ম্যাডামকে এখন আইসিইউতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।’

ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী মৌসুমীর পরিবারের চারজন করোনায় আক্রান্ত। তাঁর ছেলে ফারদীনের বিয়ের পরই সংক্রমণের খবরটি জানা যায়। লক্ষণ প্রকাশের তিন দিন পর পরিবারের সবার নমুনা পরীক্ষা করিয়ে জানা যায়, মৌসুমী, ছেলে ফারদীন, মেয়ে ফাইজা এবং ছেলের বউ আয়েশা করোনায় আক্রান্ত। কেবল সুস্থ আছেন ওমর সানী।

গত মাসের শেষ সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হন অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি। গত ২৫ মার্চ করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে নিজের কক্ষে আইসোলেশনে ছিলেন মিমি। কাশি ও শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের শুটিংয়ে যাওয়ার আগের দিন নমুনা পরীক্ষা করিয়ে অভিনেতা রিয়াজ আহমেদ জানতে পারেন, তিনি করোনা পজিটিভ।

 করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী এস এম মহসিন। করোনায় ৭৩ বছর বয়সী এই অভিনয়শিল্পীর ফুসফুসের ৭০ শতাংশ সংক্রমিত বলে জানান চিকিৎসকেরা। 

অভিনয়শিল্পী দম্পতি শহীদুজ্জামান সেলিম ও রোজী সিদ্দিকী করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় আইসোলেশনে আছেন। গতকাল বিকেলে সেলিম বলেন, ‘প্রথম দিকে রোজী বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার শ্বাসকষ্ট ও কাশি হওয়ায় কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। দেরি না করে করোনা পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারি, আমরা করোনায় আক্রান্ত। এখন রোজী আগের চেয়ে অনেকটা ভালো আছে। তবে তার হালকা ঠান্ডা-জ্বর ও শারীরিক দুর্বলতা আছে। করোনায় আক্রান্ত জানার পর থেকে আমরা নিয়মিত চিকিৎসা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলছি।’ 

নাট্যজন আবুল হায়াত করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কয়েক দিন চিকিৎসার পর গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন তিনি। যদিও ফেরার দিনের পরীক্ষায়ও তাঁর করোনা পজিটিভ এসেছে। গতকাল বিকেলে খবর পাওয়া যায়, নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক চয়নিকা চৌধুরীও করোনায় আক্রান্ত। গত সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হন অভিনেতা ও নির্মাতা গাজী রাকায়েত। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। গতকাল তাঁকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন সংগীতশিল্পী বুলবুল ইসলাম ও শারমীন সাথী ইসলাম দম্পতি, দিনাত জাহান মুন্নী ও কবির বকুল দম্পতি। সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদের শারীরিক অবস্থা এখনো স্বাভাবিক নয়। আর শিল্পী হাবিব ওয়াহিদ এখনো আছেন আইসোলেশনে। আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন পপগানের জনপ্রিয় শিল্পী জানে আলম, একুশে পদকপ্রাপ্ত লোকগানের শিল্পী ও সংগীতগুরু ইন্দ্রমোহন রাজবংশী।