এ বছরে বাংলাদেশ হারাল বহু গুণীজনকে

প্রকাশ : 2021-12-30 10:56:18১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

এ বছরে বাংলাদেশ হারাল বহু গুণীজনকে

বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় থমকে গেছে জনজীবন। ২০২০ সালের মতো ২০২১ সালেও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে বাংলাদেশের অনেক বিশিষ্টজনদের। আবার অনেকেই স্বাভাবিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সংগীত ও অভিনয়শিল্পীসহ নানা পেশার মানুষ।

২০২১ সালে বাংলাদেশ হারিয়েছে বহু গুণীজনকে। বিদায়ী তালিকায় মানুষদের মধ্যে আছেন হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম), ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জয়নাল হাজারী, রফিকুল ইসলাম, হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ আবুল মকসুদ, আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান (এটিএম শামসুজ্জামান), সারাহ বেগম কবরী, ফকির আলমগীর, মিতা হক, মুশতারী শফী ও খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদসহ অনেকেই।

হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম)

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম) ২০২১ সালের ৪ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এইচ টি ইমাম স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। পরে ২০১৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা বিষয়ে তিনি একাধিক বই লিখেছেন।

এইচ টি ইমাম ১৯৩৯ সালের ১৫ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার চাকরির সুবাদে রাজশাহীতে বেড়ে উঠেন তিনি। শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে রাজশাহী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ

বাংলাদেশের সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মওদুদ আহমদ ২০২১ সালের ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেন এই আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাদের একজন।
 
১৯৪০ সালের ২৪ মে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমদ ছিলেন চতুর্থ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর ব্রিটেনের লন্ডনের লিঙ্কন্স ইন থেকে ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। লন্ডনে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে উচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন। তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৭-৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন মওদুদ আহমদ। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হলে এক বছরের মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতা নেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ১৯৮৫ সালের নির্বাচনে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জাতীয় পার্টির সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এর পরের বছরই তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়।

১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং জেনারেল এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।

১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে মোট পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হন তুখোড় এ রাজনীতিক। মওদুদ আহমদ ছিলেন পল্লীকবি জসীম উদদীনের জামাতা।

জয়নাল হাজারী

জয়নাল আবেদীন হাজারী ছিলেন একজন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭১ সালে ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের পরামর্শে রাজনগর এলাকায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন।

১৯৪৫ সালের ২৪ আগস্ট ফেনী শহরের সহদেবপুরের হাবিবুল্লাহ পণ্ডিতের বাড়িতে আব্দুল গণি হাজারী ও রিজিয়া বেগমের সংসারে জন্ম নেন জয়নাল হাজারী। চলতি বছরের ২৭ ডিসেম্বর রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন জয়নাল হাজারী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার দেড় দশক পর দলীয় পদে ফেরেন জয়নাল হাজারী। ২০১৯ সালে ফেনীর এই নেতাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা করা হয়।

রফিকুল ইসলাম

একুশে পদকপ্রাপ্ত নজরুল গবেষক বাংলা একাডেমির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর মারা যান। ফুসফুসের জটিলতায় ভুগে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের মতলব (উত্তর) উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রফিকুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন।

২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ২০১২ সালে সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়া একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নজরুল একাডেমি পুরস্কারসহ নানা সম্মানে ভূষিত হন রফিকুল ইসলাম।

সৈয়দ আবুল মকসুদ

লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। আবুল মকসুদ গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের জন্য সুপরিচিত। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা ৪০টিরও বেশি। ‘জার্নাল অব জার্মানি’ তার লেখা ভ্রমণকাহিনী। এছাড়া বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান তিনি।

১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। তার বাবা সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মা সালেহা বেগম। শৈশব থেকে আবুল মকসুদ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা পড়ার সুযোগ পান।

আবুল মকসুদের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৪ সালে এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। এটি ছিল পাকিস্তান সোশ্যালিস্ট পার্টির মুখপত্র। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সমর্থিত সাপ্তাহিক ‘জনতা’য় কাজ করেন কিছুদিন। একাত্তরে মুক্তযুদ্ধকালে তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ বার্তা সংস্থায় (বাসস)।

হাসান আজিজুল হক

স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকজয়ী প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগে রাজশাহীর বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। হাসান আজিজুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি লেখালেখি করে গেছেন। তিনি একাধারে গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন।

হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোহাম্মদ দোয়া বখশ্ ও মা জোহরা খাতুন। জীবনের বেশিরভাগ সময় তার কেটেছে রাজশাহীতে। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে দর্শনে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ২০২১ সালের ২৫ মে মারা যান। পাকস্থলীর সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে ভ্যান্টিলেশনে নেওয়া হয় এ কবিকে। সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি তার।

হাবীবুল্লাহ সিরাজীর জন্ম ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলায়। তিনি একাধারে কবিতা, উপন্যাস ও শিশুসাহিত্য রচনা করেছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ দেশি-বিদেশি নানা পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। ২০১৮ সালে সরকার তাকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব দেয়।

এ টি এম শামসুজ্জামান

আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান (এটিএম শামসুজ্জামান) চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মারা যান। পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা নিয়ে কয়েক মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পর সূত্রাপুরের নিজ বাসভবনে নেওয়া হলে সেখানে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই বরেণ্য অভিনেতা।

একজন অভিনেতা, পরিচালক ও লেখক হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন এটিএম। অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছয়বার। এর মধ্যে দায়ী কে? (১৯৮৭) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে; ম্যাডাম ফুলি (১৯৯৯), চুড়িওয়ালা (২০০১) ও মন বসে না পড়ার টেবিলে (২০০৯) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা বিভাগে এবং চোরাবালি (২০১২) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেতা বিভাগে পুরস্কার পান। ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আয়োজনে তিনি আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৫ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন নন্দিত এ অভিনেতা।

সারাহ বেগম কবরী

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী মারা গেছেন চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

চট্টগ্রামের মেয়ে কবরীর পারিবারিক নাম মিনা পাল। ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় কবরীর। ১৯৬৫ সালে অভিনয় করেন ‘জলছবি’ ও ‘বাহানা’য়, ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’। ১৯৭০ সালে ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বিনিময়’ ছবিগুলো। স্বাধীনতা-পরবর্তী ১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবিতে তার অভিনয় দর্শকদের স্মৃতিতে এখনো অমলিন। ১৯৭৫ সালে নায়ক ফারুকের সঙ্গে ‘সুজন সখী’ ছবিতে অভিনয় করে ছাড়িয়ে যান আগের সব জনপ্রিয়তাকে। পরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে যাওয়ার।

ষাট ও সত্তরের দশকের তুমুল জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা কবরী রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সবশেষ সরকারি অনুদানের ‘এই তুমি সেই তুমি’ চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন ঢাকাই ছবির এ ‘মিষ্টি মেয়ে’।

ফকির আলমগীর

প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর ২০২১ সালের ২৩ জুলাই মারা যান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গণসঙ্গীত ও দেশীয় পপ সঙ্গীতে ফকির আলমগীরের ব্যাপক অবদান। তিনি ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।

১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেসা। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে শিল্পী একজন শব্দসৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন।

মিতা হক

২০২১ সালের ১১ এপ্রিল মারা যান রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হক। প্রথমে করোনা আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও কয়েকদিন পরে হার্ট অ্যাটাক হয় মিতা হকের। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

মিতা হক ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রয়াত অভিনেতা খালেদ খানের স্ত্রী। তার চাচা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক ও রবীন্দ্র গবেষক ওয়াহিদুল হক। মেয়ে জয়িতাও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী।

বুলবুল চৌধুরী

গত ২৮ আগস্ট মারা যান কথাসাহিত্যিক ও লেখক বুলবুল চৌধুরী। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে রাজধানীর পুরান ঢাকায় নিজ বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। গাজীপুরের সন্তান বুলবুল চৌধুরী লেখালেখি ছাড়াও সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। দৈনিক সমকালসহ কাজ করেছেন বিভিন্ন দৈনিকে।

রাবেয়া খাতুন

চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি একুশে পদক বিজয়ী বাংলাদেশি লেখক রাবেয়া খাতুন মারা যান। বেশ কিছুদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে বনানীতে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরে মামা বাড়িতে রাবেয়ার জন্ম। পৈতৃক ভিটা মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে হওয়ায় বিদ্যালয়ের গণ্ডির পর তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।

ব্যক্তিগত জীবনে সম্পাদক ও চিত্রপরিচালক এটিএম ফজলুল হকের সঙ্গে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয় ১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই। তাদের চার সন্তানের মধ্যে রয়েছেন ফরিদুর রেজা সাগর, কেকা ফেরদৌসী, ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা কাকলী।

কর্মজীবনে রাবেয়া খাতুন রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মেঘের পর মেঘ’ অবলম্বনে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র মেঘের পরে মেঘ।