এ অভিযান অব্যাহত থাকুক
প্রকাশ : 2021-08-05 13:55:21১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ফসলি জমি কিংবা বাগানে যখন আগাছা জন্মাতে থাকে, তখন তা উপড়ে না ফেললে পুরো জমির ফসল বা বাগানের গাছ ধ্বংস হয়ে যায়। ফসলের পরিবর্তে আগাছাই দখলে নেয় পুরো জমি বা বাগান। এজন্যই কৃষক তার ফসলি জমিতে নিড়ানির ব্যবস্থা করে থাকে। ফসল রক্ষার জন্য এটা তাকে করতেই হয়।
আমাদের সমাজের প্রতি ক্ষেত্রে আজ আগাছার বেড়ে ওঠা প্রকট আকার ধারণ করেছে। রাজনীতি, সামাজিক কর্মকান্ড, এমন কি সাংস্কৃতিক অঙ্গনও এখন আগাছাদের লীলাভ‚মিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে শো-বিজের কতিপয় নারী-পুরুষের যেসব কীর্তি-কলাপের খবর সংবাদমাধ্যমে একর পর এক উঠে আসছে তাতে বিবেকবান মানুষেরা শিউরে উঠছেন। নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় কিংবা প্রযোজনার নামে কিছু নষ্ট মানুষ ও মেয়েমানুষের ন্যাক্কারজনক কাজকারবার সবাইকে স্তম্ভিত করে দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে- আমাদের শো-বিজ কি দুরারোগ্য কোনো ব্যাধিতে আক্রান্ত।
গত ৪ আগস্ট র্যাবের হাতে বমাল গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের উঠতি অভিনেত্রী ও নানা কারণে আলোচিত-সমালেচিত পরীমনি। খবরে বলা হয়েছে, ওইদিন বিকাল থেকে রাত অবধি প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যাব। র্যাব কর্মকর্তারা তার বাসায় গেলেও দরজা খুলছিলেন না পরীমনি। বরং ফেসবুক লাইভে এসে তিনি নানারকম কথাবার্তা বলছিলেন। তাকে সাহায্যের আহবান জানাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও ফোন করে তার বিপদের কথা জানিয়ে সাহায্য চেয়েছিলেন বলে খবরে বলা হয়েছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। র্যাব তার বাসায় প্রবেশ করে আবিস্কার করে মদের গোডাউন। পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, তার বাসার সর্বত্র ছিল বিপুল পরিমান মদের মজুদ। বেডরুম, ড্রয়িংরুম, ডাইনিংরুম, এমন কি ওয়াশরুমেও ছিল মদের বোতলের স্টক। সে সাথে র্যাব তার মোবাইল ফোন থেকে বেশকিছু পর্নোভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করেছে। পরীমনিকে আটকের পর তার সহযোগী রাজ মিাল্টি মিডিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজকেও আটক করা হয়েছে। এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত তাদেরকে র্যাবের হেড কোয়ার্টার্সে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পরীমনির নামে মাদক ও পর্নোগ্রাফি প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। নজরুল রাজের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা হতে পারে বলে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টির পাশাপাশি আমাদের শো-বিজের একটি অংশের মধ্যে নৈতিকতার চরম অধঃপতনের বিষয়টিও প্রকাশ করে দিয়েছে। কথিত মডেল পিয়াসা, মৌ এবং অভিনেত্রী পরীমনি সেই অধঃপতিত অংশের প্রতিচ্ছবি। এরা রাতারাতি অগাধ বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ার আশায় বেছে নিয়েছিল অবৈধ পথ। শরীর ও নিষিদ্ধ ব্যবসার মাধ্যমে বিলাসী জীবন যাপনের নেশায় এরা উন্মত্ত হয়ে উঠেছিল। আর সেজন্য বেছে নিয়েছিল সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম নাটক-সিনেমা জগত। ‘শো-বিজ তারাকা’ নাম ভাঙিয়ে এরা গড়ে তুলেছিল রমরমা নিষিদ্ধ ব্যবসা।
একটি কথা স্বীকার না করে উপায় নেই যে, আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রান্ধ্রে প্রবেশ করেছে অনৈতিকতার জীবানু। পরীমনি, পিায়াসা, মৌদের আসর গুলজার করত এ সমাজেরই কিছু বিত্তবান অধঃপতিত মানুষ। পরীমনিরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সেসব বিত্তবান ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তির ক্ষমতাকে ব্যবহার করত। পরীমনি পিয়াসারা আইন শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর আওতায় এসেছে এটা স্স্তির খবর। আমরা চাই এদের পেছনে যারা গডফাদার রয়েছে, যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে, তাদের মুখোশও এম্নোচন করা হোক। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। না হলে ব্যাপারটি দাঁড়াবে আগাছার মাথা কেটে শিকড় রেখে দেয়ার মতো; যা থেকে আবারো পরীমনি-পিয়াসাদের মতো আগাছা গজিয়ে আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশকে বিনষ্ট করে দিতে পারে। তাই সরকার যে অভিযান শুরু করেছে তা অব্যাহত থাকুক, দেশবাসীর প্রত্যাশা সেটাই।