এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে
প্রকাশ : 2021-08-23 14:29:09১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
অবশেষে প্রশাসন ও মেয়রের দ্বন্দ্বে বরিশাল মহনগরীতে সৃষ্ট অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির অবসান হয়েছে। গত রবিবার রাতে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারের বাসায় দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক এবং শেষে আন্তরিকতাপূর্ণ নৈশভোজের মধ্য দিয়ে অবসান হয়েছে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির। খবরে বলা হয়েছে, বৈঠকে দুই পক্ষই নমনীয়তা প্রদর্শন করে এবং ভুল বোঝাবুঝি থেকে ওই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল বলে জানিয়েছে। বৈঠকে মেয়র ও তার কর্মী-অনুসারিদের বিরুদ্ধে ইউএনও ও পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। অপরদিকে মেয়রের পক্ষ থেকে ইউএনওর বিরুদ্ধে মামলার ব্যাপারেও অনুরূপ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে। জানা গেছে, ঢাকা থেকে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে বিভাগীয় কমিশনার এ সমঝোতা বৈঠকের উদ্যোগ নেন। বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যাওয়ায় বরিশালবাসীর মধ্যে যেমন স্বস্তি ফিরে এসেছে, তেমনি সচেতন মানুষের উদ্বেগেরও অবসান হয়েছে।
বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে টাঙানো কিছু ব্যানার- ফেস্টুন নামানো নিয়ে মূলত ওই পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছিল। সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারি এবং ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মী ওগুলো অপসারণ করাকালে ইউএনও তাতে বাধা দেন। এক পর্যায়ে সেখানে অবস্থানরত আনসারদের সাথে কর্মীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ গুলি চালালে আহত হয় বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয় ইউএনও ও পুলিশের পক্ষ থেকে। ঘটনার পর অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সংবাদমাধ্যম বিবৃতি দিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ এবং মেয়রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তা সচেতন মহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। কেননা, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশন কোনো শ্রমিক সংগঠন নয় যে, তারা এমনভাবে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে পারে। বেশ কয়েক জন সাবেক সচিব অ্যাসোসিয়েশন সভাপতির বিবৃতিকে সরকারি কর্মচারি প্রবিধানমালায় বর্ণিত আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেছেন।
যতদূর জানা গেছে, একজন প্রতিমন্ত্রীর সাথে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। এটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। নানা কারণে নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব লেগে থাকে। রাজনৈতিক নেতাদর সে দ্বন্দ্বে না জড়ানোই প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উচিত। কিন্তু এখানে এটা পরিস্কার যে, বরিশালের ইউএনও প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ হয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন; যা শুধু অনাকক্সিক্ষতই নয়, অনভিপ্রেতও বটে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা যদি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে কোনো এক পক্ষের শিখন্ডি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে সরকার সংকটে পড়বে। সাদিক আবদুল্লাহ একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে তিনি ইউএনওর চেয়ে অনেক উঁচু পদমর্যাদার অধিকারী। প্রঙ্গত উল্লেখ্য যে, সিটি কপর্েূারেশনের যিনি নির্বাহী কর্মকর্তা তিনিও প্রশাসন ক্যাডারের লাক এবং একজন উপসচিব। সেখানে সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট সচিব পদমর্যাদার ইউএনও মেয়রের মতো একজন উচ্চ পদস্থ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার দুঃসাহস কোথা থেকে পেল, তা একটি বিরাট প্রশ্ন। বরিশালের ইউএনও যা করেছে তা শুধু শিষ্টাচার লঙ্ঘনই নয়, আইন বিরাধীও বটে। এ ধরনের কর্মকান্ডকে তাই হেসে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।
রাজনীতি সচেতন মহল সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি আমলাদের বাড়াবড়ির বিষয়টিকে সরকারের জন্য অশনি সংকেত হিসেবেই দেখছেন। এটা ঠিক যে, সরকারকে প্রশাসন চালাতে আমলাদের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই বলে তারাই চালকের আসনে বসে মাতুব্বরী করবে, তা কোনো মেতেই হতে পারে না। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে থোড়াই কেয়ার করার যে মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে চলেছে, তা শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
বরিশালের ঘটনাটির সুষ্ঠু সমাধান সবাই চেয়েছেন। আপাতত তা হয়েছেও। তবে যে ইউএনও তার অধিক্ষেত্র বহির্ভূত কাজ করে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম দিল, তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। নাহলে সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক বিষয়ে নাক গলানোর প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এই ঘটনার বিচার করে প্রশাসনের ক্যাডারদের এটা বুঝিয়ে দিতে হবে যে, তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি; মালিক-মোক্তার নয়। তাদের দায়িত্ব সরকারের পক্ষে স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মকান্ড দেখভাল করা। রাজনৈতিক দলাদলি বা বিভেদে অংশগ্রহণ বা ইন্ধন যোগানো তাদের কাজ নয়। সে সাথে অ্যাডমিনিস্ট্রটিভ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির রাজনৈতিক বিবৃতির জন্য তাকেও জবাবদিহির মুখোমুখি করা দরকার। যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সাহস না পায়।