এবার কমপ্লিট লকডাউন, যে যেখানে আছে সেখানেই থাকবে

প্রকাশ : 2021-04-09 21:55:15১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

এবার কমপ্লিট লকডাউন, যে যেখানে আছে সেখানেই থাকবে

দেশে করোনা মহামারির সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন মৃত্যু ও আক্রান্তের রেকর্ড সৃষ্টি করে চলেছে। কিন্তু তারপরেও জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের ‘পূর্ণাঙ্গ লকডাউন’ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই সময়ে জরুরি সেবা দেওয়া ছাড়া সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। 

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের জন্য কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হবে। এটা হবে কমপ্লিট লকডাউন। এই সময়ে সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত সব বন্ধ থাকবে। দেশের মানুষ যে যেখানে আছে, সেখানেই থাকবে। 

শুক্রবার গণমাধ্যমে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল (বৃহস্পতিবার) ৭১তম লোকপ্রশাসন কেন্দ্র অনুষ্ঠিত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বলেছেন, মানুষদের বাঁচাতে আমাদের আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারই প্রেক্ষিতে সরকার ভাবছে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন দেওয়া হবে। যাকে বলে ‘কমপ্লিট লকডাউন’। এটা সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। মানুষদের একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আমাদের প্রক্রিয়া চলছিল। তারই অংশ হিসেবে আমরা মার্চে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলাম, এপ্রিলে আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিলাম। এখন আমরা ১৪ তারিখ থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন দেব। এই সময়ে সরকারি-বেসরকারি, অফিস-আদালত সব বন্ধ থাকবে। গার্মেন্ট শিল্প, কলকারখানা সব বন্ধ থাকবে। সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র জরুরি সেবায় জড়িতরা কাজ করবে। তবে জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাইরে আসতে পারবে না। সরকার আশা করছে, সবাই সহযোগিতা করবে। সংক্রমণ কমাতে এর বিকল্প নেই। 

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী ১৩ তারিখের মধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপণ জারি হবে। এ ছাড়া লকডাউন পরবর্তীতে বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী ২০ তারিখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

এদিকে সারা দেশে উদ্বেগজনকভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়তে থাকায় বুধবার রাতে কোভিড ১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩০তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা সভাপতিত্ব করেন। 

সভায় বেশকিছু সুপারিশ গৃহীত হয়। সেখানে বলা হয়, সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত ১৮টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও করোনা নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। এগুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না, সংক্রমণের হার বাড়ছে। বিধিনিষেধ আরও শক্তভাবে অনুসরণ করা দরকার। অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন ছাড়া এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে সভায় মতামত ব্যক্ত করা হয়। 

বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও মিউনিসিপ্যালিটি এলাকায় পূর্ণ লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। দুই সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। শয্যা সংখ্যা, আইসিইউ সুবিধা, অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচেষ্ট। ডিএনসিসি হাসপাতাল আগামী সপ্তাহের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সরকারি পর্যায়ের এই কার্যক্রমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাসপাতালের রোগী ভর্তির বাড়তি চাপ থাকায় অতি দ্রুত আরও সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।

সংক্রমণের হার বাড়ার কারণে করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়ছে, রিপোর্ট পেতেও সময় লাগছে। যারা পরীক্ষা করতে আসছেন তাদের একটা বড় অংশ বিদেশগামী যাত্রী। বিদেশে অভিবাসী কর্মজীবী মানুষ ছাড়া অন্যান্য যাত্রীদের বেসরকারি পরীক্ষাগারে পাঠাতে পারলে সরকারি ল্যাবরেটরিতে চাপ কিছুটা কমবে। বিদেশে অভিবাসী কর্মজীবী মানুষ ছাড়া অন্যান্য যাত্রীদের পরীক্ষা বেসরকারি পরীক্ষাগারে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। এতে করে রোগীদের পরীক্ষা ও রিপোর্ট দ্রুত প্রদান করে আইসোলেশন নিশ্চিত করা যাবে, যা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, টিকা দেওয়ার কার্যক্রম যুক্তরাজ্যে ফলপ্রসূ হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও টিকা কর্মসূচি সফল করতে টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে বেসরকারিভাবে টিকা আমদানি করে টিকাদানের সুপারিশ পুনরায় করা হলো। 

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। একই মাসের ১৮ তারিখে দেশে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। অর্থাৎ ২৬ মার্চের ছুটি থেকে শুরু হয়ে সাপ্তাহিক নিয়মিত ও সাধারণ ছুটি মিলিয়ে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস, যান চলাচল বন্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই ছুটি ৩১ মে পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হয়। সেই সময়ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও হাসপাতালসহ জরুরি সেবা বিভাগগুলো এই ঘোষণার আওতামুক্ত রাখা হয়।