এবার আম ভাঙা শুরু ১৫ মে
প্রকাশ : 2021-05-06 20:12:22১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
আমের রাজধানী রাজশাহীতে এবার আম ভাঙা শুরু হচ্ছে আগামী ১৫ মে। এই দিন থেকে শুরু হচ্ছে আম পাড়ার আনুষ্ঠানিকতা। এ দিন থকে পর্যায়ক্রমে সাত ধাপে বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু পরিপক্ক আম গাছ থেকে পাড়া হবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসেকর সম্মেলনকক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ মে) দুপুরে আয়োজিত এক বিশেষ সভায় আম পাড়া নিয়ে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আব্দুল জলিল।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৫ মে থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া শুরু হবে। তবে কোনো আম আগে পাকলে স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাতে হবে। এরপর পরিদর্শন শেষেই গাছ থেকে নামানো যাবে আম।
রাজশাহীতে সাধারণত সবার আগে পাকে গুটি জাতের আম। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার আগামী ১৫ মে থেকে এই আমটি নামাতে পারবেন চাষিরা। আর উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রানিপছন্দ ২৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা নামানো যাবে ২৫ মে থেকে এবং খিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে থেকে নামানো যাবে। এছাড়া ল্যাংড়া আম ৬ জুন, আম্রপালি এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। আর সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আম।
অপরিপক্ব আমের বাজারজাত ঠেকাতে গেল কয়েক বছর ধরেই রাজশাহীতে আম নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। এবারও সিদ্ধান্ত নিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষ থেকে অনলাইন প্লাটফর্মে জুমমিটিং করা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা চলাকালে আম পাড়া নিয়ে তারিখ নির্ধারণের পক্ষে-বিপক্ষে তাদের নিজস্ব মত দেন অংশগ্রহণকারীরা।
তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই যদি কোনো বাগানে আম পেকে যায় তাহলে চাষি তা নামাতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিষয়টি লিখিতভাবে ইউএনও’কে জানাতে হবে। তারপর ইউএনও সরেজমিনে বাগান পরিদর্শন করবেন। বাগানে তিনি প্রাকৃতিকভাবে আম পাকা দেখলে তা নামানোর অনুমতি দেবেন। এরপরই আম নামিয়ে বাজারে পাঠাতে পারবেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা এমন সিদ্ধান্তই হয় ওই সভা থেকে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, গত কয়েক বছর থেকে আম নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়ার কারণে ঢাকাসহ সারাদেশের ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তারা নিশ্চিত ছিলেন যে, কোনো রাসায়নিক মিশিয়ে রাজশাহীর আম পাকানো হয়নি, এটা প্রাকৃতিকভাবেই পেকেছে। ফলে রাজশাহীর আমের সুনাম অক্ষুণ্ন ছিল। তাই এবারও থাকবে।
তিনি বলেন, আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করা না হলে বাগানে প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি করা হতো। কেউ যেন আগেভাগে অপরিপক্ব আম নামাতে না পারেন সেজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হতো। কিন্তু এতো জনবলও তাদের নেই। সব দিক বিবেচনায় আম নামানোর ক্ষেত্রে তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হলো। তবে আগে পাকলে অবহিতকরণের মাধ্যমে আম নামানোরও সুযোগ থাকলো।
এদিকে চলতি বছর ঘন কুয়াশা ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও তাপদাহসহ প্রাকৃতিক বৈরিতায় গাছ থেকে আপনা আপনি ঝরে পড়ছে বাড়ন্ত আম। এতে রাজশাহীর বাগানগুলোতে কমেছে আমের পরিমাণ। তাই উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয়ে আছেন চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগ বলেছে, বাড়তি ফলন না হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্যা নেই।
বৈশাখজুড়েই খাঁ খাঁ করছে রোদ। সঙ্গে বইছে লু হাওয়া। এমন সময়ে গুটি বড় হয়ে গাছের শাখা প্রশাখায় দোল খাচ্ছে সবুজ আমের থোকা। এখন কেবল পূর্ণতার অপেক্ষা। তাই এরই মধ্যে রাজশাহীর বাগান মালিকদের মনেও স্বপ্নের ডালপালা ছাড়াচ্ছে।
কিন্তু এবার আমের মৌসুমে শুরুর পর থেকেই গুটি ঝরেপরাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে স্থানীয় আম চাষিদের। এলাকা ভেদে ঝড়ো হাওয়া, অতি শিলাবৃষ্টি ও সর্বশেষ বৈশাখী তাপদাহে গাছের ফল প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। আর প্রাকৃতিক বৈরিতা, পোকাদমন ও বাগানে নিয়মতি পরিচর্যায় এ বছর বেড়েছে খরচ। সে তুলনায় বাগানে পর্যাপ্ত আম না থাকায় উৎপাদন নিয়ে ব্যবসায়ীরা এখন শঙ্কিত।
যদিও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গাছে গাছে এখনও পর্যাপ্ত আম আছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সূত্র মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৭৩ হেক্টর বাড়িয়ে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন।
তাপদাহ কেটে গেলে আর নতুন কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্য হবে না বলেও মতামত রাজশাহী কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের।