এদের চাকর-বাকরের গুণাবলিও নেই, আমি ক্ষমা চাইছি: জাফরুল্লাহ চৌধুরী
প্রকাশ : 2021-09-10 21:09:15১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি চাকর-বাকরের কাছে ক্ষমা চাইছি। এ রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের চাকর-বাকরের গুণাবলিও নেই।’
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন৷ ছাত্র অধিকার পরিষদের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচিতি সভা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
৭ সেপ্টেম্বর ডয়চে ভেলে বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাফরুল্লাহ চৌধুরী মির্জা ফখরুল সম্পর্কে বলেছিলেন, বেচারা বাড়ির চাকর-বাকরের মতো আছে। সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে আজকের সভায় জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমার সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যে আমার রাজনৈতিক স্নেহাস্পদ ব্যক্তিরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন। তাঁদের চাকর-বাকরের সঙ্গে তুলনা করেছি। আমি চাকর-বাকরের কাছে ক্ষমা চাইছি। এ রাজনৈতিক কর্মীদের চাকর-বাকরের গুণাবলিও নেই। তাঁদের না কবজিতে জোর আছে, না মাথা ঘোরানোর অধিকার আছে। বাড়িতে চাকর-বাকরকে যেভাবে ইচ্ছা অত্যাচার করেন, একসময় ঘাড় ত্যাড়া করে বলে যে “থাকুক আপনার চাকরি, বাড়ি চইলা গেলাম।” এই রাজনৈতিক কর্মীদের একজনেরও তা নেই। চাকর-বাকর ভাইয়েরা, আপনাদের আমি ছোট করেছি, আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমি তারেক রহমানের জায়গায় জাইমা রহমানকে ক্ষমতা দিতে বলিনি। বলেছি, তাঁকে (জাইমা) রাজনীতি শিখতে দিন, রাজপথে আসতে বলেন। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে হলে রাজপথে হাঁটতে হয়। অনেকে আমার কথায় কষ্ট পেয়েছেন বলে দুঃখিত। আমার বয়স হয়েছে, এটা একদম সঠিক। কিন্তু কথায় কথায় আমাকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয় না। কারণ আমার সততা ও সাহস। আমি জনগণের পক্ষের লোক, আমার অন্য কেউ নেই।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘মাননীয় বিচারপতিগণ, কোন বইতে কার বক্তৃতা পড়ানো হবে, সেই সিদ্ধান্ত দেওয়া কি আপনাদের কাজ? তাহলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কেন রাখা হয়েছে? অথচ ছানি অপারেশনের জন্য যে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা নেওয়া হয়, তা নিয়ে কথা বলেন না। ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ২৬ জন এখনো জেলে আছেন; একটা সুয়োমোটো দিতে পারেন না?
প্রবীণ চিকিৎসক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান জাফরুল্লাহ আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার আবার ভয়ানক চক্রান্ত শুরু করেছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করে ভোটকে নতুন পদ্ধতিতে সর্বস্বান্ত করতে চাইছে। এখন সজাগ না হলে, বুদ্ধিজীবীদের সবাইকে সংগঠিত না করা হলে গণতন্ত্রের কবর তো হচ্ছেই, মাফিয়া রাষ্ট্রেরও জন্ম হচ্ছে। আমরা কেউ শান্তিতে থাকতে পারব না৷ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে৷ দেশে কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে৷’
যারা ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবচেয়ে বড় শত্রু বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান আসিফ নজরুল৷ ছাত্র অধিকার পরিষদের মধ্যে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের’ দেখতে পান বলে জানান তিনি৷ এই শিক্ষক বলেন, ‘গণরুম একটা দাসত্ব, একটা জেলখানার মতো৷ যে ছাত্ররা দেশকে স্বাধীন করেছিল, আজকে তাদের প্রতিটি হলে জেলখানা বানিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে৷ গণরুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে৷ লুটপাট, অত্যাচার ও নিপীড়ন করে যারা ক্ষমতায় থাকতে চায়, তারা পাকিস্তানের এজেন্ট৷ ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ হয়েছিল৷ এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।’
সভায় অংশ নিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি অভিযোগ করেন, ‘এখন যে শাসনে আমরা আছি, তা অদৃষ্টপূর্ব৷ খুব কঠিন ও জটিল পরিস্থিতিতে জনগণকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে৷ রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও কর্তাব্যক্তিদের পয়সা খাইয়ে এই শাসনের অংশীদার করে ফেলা হয়েছে৷ সুবিধাভোগী সবাই এই শাসন টিকিয়ে রাখতে চাইছে৷ এই ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করতে হলে ছাত্রসমাজের উত্থান প্রয়োজন৷ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি৷’
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক বলেন, ‘মানুষ যখন আগামী নির্বাচন নিয়ে সরব হয়েছেন, তখন বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর ধরপাকড় শুরু হয়ে গেছে৷ এই সরকার আতঙ্কিত বোধ করছে৷ সময় ঘনিয়ে আসছে—এটা বুঝতে পেরেছে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য মুগুরের ব্যবস্থা করতে হবে৷ জীবিত থাকতে বিনা ভোটের নির্বাচন হতে দেব না৷
ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান সভায় সভাপতিত্ব করেন৷ সংগঠনের বিগত কমিটির কার্যপরিধির নথি নতুন কমিটির নেতাদের কাছে হস্তান্তর করেন তিনি৷ এতে অন্যদের মধ্যে ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার পরিষদের নবনির্বাচিত সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোল্যা রহমতুল্লাহ, যুব অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আতাউল্লাহ, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আবদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন প্রমুখ বক্তব্য দেন৷