একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক আফতাব হত্যায় ৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল
প্রকাশ : 2022-10-12 12:33:27১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক আফতাব আহমেদ হত্যা মামলায় ৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় হাইকোর্টে বহাল রাখা হয়েছে। জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্জে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর বুধবার (১২ অক্টোবর) এ রায় ঘোষণা করা হয়।
এর আগে, মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) আসামিদের আপিল শুনানির পর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই দিন ধার্য করেন।
এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অপরদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান ও হেলাল উদ্দিন মোল্লা।
একুশে পদকপ্রাপ্ত ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমেদকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয় গত ৩ অক্টোবর।
ওই দিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারানুম মিতি পেপারবুক থেকে রায়ের পুরো অংশ পাঠ করে শোনান। এর ফলে হত্যাকাণ্ডের আট বছর ১০ মাস পরে উচ্চ আদালতে বহুল আলোচিত এই মামলার আপিলের শুনানি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
২০১৭ সালে ২৮ মার্চ একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমেদকে হত্যার দায়ে পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত। পাশাপাশি অপর একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকার চার নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুর রহমান সরদার এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হলেন- নিহত আফতাব আহমেদের গাড়িচালক মো. হুমায়ুন কবীর মোল্লা এবং বিলাল হোসেন কিসলু, হাবিব হাওলাদার, মো. রাজু মুন্সী ও মো. রাসেল। এছাড়া সাত বছর কারাদণ্ড পওয়া অপর আসামি সবুজ খানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে।
এরপর মামলায় ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এর মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির খালাস চেয়ে আপিল আবেদন করা হয় হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায়। আর দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক একজন, আপিল আবেদন করেননি একজন।
২০০৬ সালে একুশে পদক পাওয়া আফতাব দীর্ঘদিন ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেতেন। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়ায়। ঢাকার পশ্চিম রামপুরার ৬৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে একটি চারতলা ভবনের তৃতীয় তলার বাসায় থাকতেন তিনি। তার দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে মনোয়ার আহমেদ থাকেন যশোরে। আর মেয়ে আফরোজা আহমেদ তার স্বামী ফারুক আহমেদের সঙ্গে থাকেন গাজীপুরে।
২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাতে নিজের বাসায় খুন হন ৭৮ বছর বয়সী আফতাব। পরদিন সকালে পুলিশ তার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে। নিহতের শ্যালক মনোয়ার আহমদ সাগর ওই ঘটনায় রামপুরা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত চলাকালে আফতাবের গাড়ি চালক মো. হুমায়ুন কবীরসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে আসামি হাবিব, বিল্লাল ও হুমায়ুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।
জবানবন্দিতে আসামিরা আদালতে বলেন, টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করার সময় বাধা দেওয়ার কারণেই আফতাবকে হত্যা করা হয়। তদন্ত শেষে পরের বছর ২৫ মার্চ আদালতে আফতাব আহমেদের গাড়িচালক মো. হুমায়ুন কবিরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন র্যাব-৩-এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আশিক ইকবাল।
২০১৪ সালে ঢাকা তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় বিভিন্ন সময় ২০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।