একনেকে ১১৯০১ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন
প্রকাশ : 2021-05-04 14:34:41১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নসহ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৯০১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার (৪ মে) একনেক সভায় প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৫ সালে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
তিনি বলেন, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলার মোট গ্রামীণ (উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক) সড়ক ২০ হাজার ৫৮৭ কিলোমিটার। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন পাকা সড়কের পরিমাণ ৮ হাজার ৯৪২ কিলোমিটার। অবশিষ্ট কাঁচা সড়ক ১১ হাজার ৬৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১ হাজার ৮১৭ কিলোমিটার উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতির সঞ্চালন করা হবে। এছাড়া গ্রামীণ জনগণের জন্য গ্রাম, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা হবে।
একনেক সুপারিশে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলার ৩৪টি উপজেলার সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় হ্রাস এবং কৃষি ও অকৃষি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এজন্যই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া বাকি প্রকল্পগুলো হলো :
১. ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ/ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন (১ম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। অনুমোদনের পর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৩ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।
২. সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘সাইনবোর্ড-মোরেলগঞ্জ-রায়েন্দা-শরণখোলা-বগী সড়কের (আর-৭৭৩) ১৭তম কিলোমিটারে পানগুচি নদীর উপর পানগুচি সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। একনেকে অনুমোদনের পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন ২০২৫ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। এই প্রকল্পটিতে বৈদেশিক ঋণ পাওয়া যাবে ৩৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
৩. যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৪ সালে বাস্তবায়ন করবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ৬৪৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
৪. সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বহুতল ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫২৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এটি জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৪ সালে বাস্তবায়ন করবে গণগ্রন্থাগার অধিদফতর ও গণপূর্ত অধিদফতর।
৫. স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধিতে সংশোধনের জন্য একনেক সভায় তোলা হয়। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। সংশোধিত মেয়াদ বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৫৬১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্প ইডিসিএফ ও কোরিয়া ১ হাজার ৪৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বিএসএমএমইউর নিজস্ব তহবিল থেকে ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।
৬. স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘রাঙ্গামাটি জেলার কারিগর পাড়া থেকে বিলাইছড়ি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৪ সালে এটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৩৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
৭. পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ’ প্রকল্প বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন ২০২৪ সালে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
৮. পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আরও একটি ‘তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ১ হাজার ৪৫২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার প্রকল্পটি চলতি বছর থেকে জুন ২০২৪ সালে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
৯. বিদ্যুৎ বিভাগের ‘বাপবিবো’র বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ)’ প্রকল্পটি অনুমোদন পায় একনেকে। ৩ হাজার ৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকার প্রকল্পটি চলতি বছরের জুলাই থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো)। এ প্রকল্পটিতে সংস্থার তহবিল থেকে ৮০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, এডিবি থেকে ঋণ হিসেবে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং বাকি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে।