একদিনেই মারা গেলেন ঢাবির দুই অধ্যাপক হারুন অর রশীদ ও মাহবুব আহসান খান
প্রকাশ : 2021-10-09 21:12:56১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
একইদিনে মৃত্যুবরণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুইজন অধ্যাপক। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তারা হলেন, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক মাহবুব আহসান খান (৫৪) এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. এ. এম. হারুন-অর-রশীদ (৮৮)।
শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশা খান আবাসিক এলাকার বাসায় মারা যান অধ্যাপক মাহবুব আহসান। এদিকে সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন অধ্যাপক অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ।
অধ্যাপক মাহবুব আহসান খানের মৃত্যুর বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মো. মনিনুর রশিদ বলেন, তার হার্টে রিং পড়ানো ছিলো। এছাড়া তার কোনো জটিল রোগ ছিলো না। ধারণা করা হচ্ছে ভোর চারটা- সাড়ে চার চারটার দিকে তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অধ্যাপক ড. মাহবুব আহসান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এক শোক বাণীতে উপাচার্য বলেন, অধ্যাপক ড. মাহবুব আহসান খান ছিলেন অত্যন্ত সৎ, বিনয়ী, নম্র ও সজ্জন চরিত্রের একজন শিক্ষক ও গবেষক। ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। শিক্ষা বিষয়ক ও শিক্ষা পদ্ধতির উন্নয়নে তার অনেক মৌলিক গবেষণা রয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. এ. এম. হারুন-অর-রশীদের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে উপাচার্য বলেন, তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিদ। ছিলেন আদর্শবান, দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক ও গবেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গুণী শিক্ষকের অসংখ্য গবেষণা প্রবন্ধ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
উপাচার্য তার শোক বার্তায় উভয় মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাদের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
হারুন-অর-রশীদ বরিশালের নলছিটির বাহাদুরপুর গ্রামে ১৯৩৩ সালের ১ মে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মকসুদ আলীও ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে কেটেছে ড. রশীদের ছেলেবেলা। দশম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই পড়ালেখা করেছেন।
দেশভাগের সময় সপরিবার ঢাকায় চলে আসেন মকসুদ আলী এবং অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন। হারুন-অর রশীদ ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় গোটা পূর্ব বাংলায় চতুর্থ হন। ১৯৫০ সালে আইএসসিতে প্রথম শ্রেণি পান। তারপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯৫২ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করলেন। ১৯৫৩ সালে স্নাতক করেন পদার্থবিজ্ঞানে। এবারও প্রথম। এক বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
পিএইচডি শেষে বিলেতের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পান। কিন্তু দেশের টানে ফিরে আসেন। বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন আণবিক শক্তি কমিশনে (১৯৬২ থেকে ’৬৭)। ১৯৬৭ সালে যোগ দেন ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। পরে পরিচালক হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর ফিরে আসেন দেশে।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। একই সঙ্গে বোস সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হন। দুবছর এই পদে ছিলেন। ১৯৮৫ সালে অবসরের আগ পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
হারুন-অর-রশীদ ১৯৭২, ১৯৮৬ ও ১৯৯৩ সালে নোবেল মনোনয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উপমহাদেশের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী নোবেলজয়ী আবদুস সালামের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। একসঙ্গে গবেষণাও করেছেন। বিখ্যাত কোয়ান্টাম তত্ত্ববিদ সত্যেন বোসেরও স্নেহধন্য ছিলেন ড. রশীদ।
২০০৯ সালে পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ওপর ইংরেজি ও বাংলায় পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন তিনি।সংবাদ বিজ্ঞপ্তি