একজন নরসুন্দরের সংগ্রাম
প্রকাশ : 2023-09-03 17:49:35১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
কালের বির্বতনে বগুড়ার আদমদীঘির গ্রামাঞ্চল ও হাট-বাজারে আর জৌলুশ নেই নরসুন্দরদের। আগের দিনে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বলুন আর শহরের হাট-বাজারেই বলুন বা রাস্তার পাশে বা গাছতলায় বলুন যেখানে সেখানে বসে খৌরকর্ম করত নরসুন্দর বা নাপিতরা। কোন কোন এলাকায় এদের শীল বলেও অবহিত করা হতো। পেশার ধরন পরিবর্তন হওয়ায় অনেক স্থানে এদের আর দেখা যায় না। তবে যারা আজও আধুনিক সেলুনের ব্যবস্থা করতে পারেনি তারা রয়ে গেছে রাস্তায় বা গাছ তলায়। আবার কেউ কেউ দক্ষতার অভাবে পুরনো নিয়মে পেশাকে আজও আকড়ে ধরে আছেন।
এদের একজন বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সুদিন গ্রামের পবন চন্দ্র শীল। হাট বাজারে খোলা আকাশের নিচে বসে পুরোনো দিনের মতো চুল দাড়ি কামানোর প্রথাকে আঁকড়ে ধরে রুজি রোজগারের সন্ধানে আজও ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে চলে তার সংসার। পবন চন্দ্র শীল সাথে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের আদমদীঘি উপজেলা সদরের ট্রাক অফিসের সামনে রাস্তার পাশে এ প্রতিনিধির কথা হলে তিনি বলেন, সংসারের অভাব অনটনের কারনে দোকান দিতে পারিনি। প্রায় ৩৫বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে বসে আপন মনে এই পেশা আঁকড়ে ধরে আছি। যুব সম্প্রদায়ের কেউ আর তার কাছে খোলা আকাশের নিচে বসা কাঠের চেয়ারে বসে চুল দাড়ি কামাতে আসে না। সেলুনে যেতে যারা টাকার ভয় করে সেই মানুষগুলো চুল দাড়ি কামানোর জন্য তার কাছে আসে। উপজেলা সদর ইউনিয়নের সুদিন গ্রামের প্রবন চন্দ্র শীল বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই ক্ষুর, কেচি নিয়ে বাবার হাত ধরে এ পেশায়নেমে পড়েছি। এ পেশায় নিজেকে দক্ষ কারিগর হিসাবে গড়ে তুলতে আর অভাবের সংসারের হাল ধরতেই লেখাপড়া করতে পারিনি। ছোট বেলা থেকে অভাব অনটন সাথে নিয়ে কোন রকমে এই কাজ করে আজও বেঁচে আছি। এ কাজে অনেকের ভাগ্যের অনেক পরিবর্তন হলেও তার ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি বলেও জানান তিনি।
এ প্রজন্মোকে উদ্দেশ্য করে উপজেলার তালসন গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি গোসাই চন্দ্র পাল জানান, জমিদার আমলে হিন্দু সম্প্রদায়ের শীল পরিবারের সদস্যরা নরসুন্দর বা নাপিতের কাজ করতো।জমিদার আমলে এ পেশার বৈশিষ্ট্য ছিল রমরমা। তখন তারা হাট বাজারে দল বেঁধে কাজ করতো। এলাকা ভেদে বিয়ের দিন বা আগের দিন বর ও কনের বাড়িতে নরসুন্দরদের ডাক পড়তো। সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে তাদের একটা অংশ গ্রহণ ছিল। কালের বির্বতনে নরসুন্দর পেশার এখন ধরণ বদলেছে। এ পেশায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় এখন আর সেই আগের দিনের মত এ পেশার আর বাদ বিচার নেই। কোন বিশেষ শ্রেণীর মানুষ এখন আর এই পেশায় নেই। বরং সকল সম্প্রদায়ের কেউ না কেউ এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। আধুনিক সভ্যতার এ যুগে নরসুন্দরা তাদের সেই পুরানো পেশা পরিবর্তন করে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় তাদের জীবন ধারা অনেক পাল্টে গেছে। সেই সাথে হাট বাজারে কাঠের টুল কিংবা চেয়ারে বসে নাপিতদের চুলদাড়ি কামানোর পুরনো দিনের কর্ম প্রায় হারাতে বসেছে।
নরসুন্দর পবন চন্দ্র শীল আরো বলেন,ছোট বেলায় বাবার সাথে হাটে গিয়ে ফিড়েয় বা ইটে বসে চুল কেটেছি। বাবার মৃত্যুর পর আজ এই পেশা ধরে আছি। তার বাবা মারা যাবার কিছু দিন পর মাও মারা যান। স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তান নিয়ে চলছিল তার সংসার। গত দুই বছর আগে তার স্ত্রী মারা গেছে। স্ত্রীর মৃত্যু পর এখনও সে বিয়ে করেনি। বর্তমানে তার সংসারে এখন দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। সে সকালে ঘুম থেকে উঠে সারা দিনের রান্নাবান্না ও সংসারের অন্যান্য কাজ শেষে নিজকর্মে বেরিয়ে পড়ে। শত কষ্টকে উপেক্ষা করে জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে পবন চন্দ্র শীল আজও বাবা দাদা পেশা ধরে রেখেছেন।