ঈদ আনন্দের ছোঁয়া নেই ওদের মনে
প্রকাশ : 2022-04-17 17:36:45১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ঈদের আর মাত্র কিয়েক দিন বাকী,এর ই মধ্যে শুরু হয়েছে পছন্দ মতো জামা কাপর কেনার ধুম। কিন্তু সমাজে এমন কিছু মানুষ বাস করে যার পরিবারের মধ্যে কোন আনন্দের ছেঁয়া নেই। নাম শফিকুল ইসলাম (সফিক) বয়স (৭), ঈদে নতুন জামা কিনবে তাই সে এলাকার ভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ময়লার স্তুপ থেকে লোহা,প্লাস্টিক এর বোতল সংগ্রহ করছে। এই সব বিক্রি করে ঈদের নতুন জামা কিনবে। সফিক এর সাথে কথা বলে জানা যায়,গ্রামের বাড়ী নেত্রকোনা জেলায়, পরিবারে ৫জন্য সদস্য,তার মধে ষফিক সবার ছোট,বড় বোন মা ভাই সবাই লোহা,প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে,বর্তমানে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার ছাইফুল মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। অভাবের তারনায় পরিবারের সবাই ৪বছর ধরে উপজেলার জৈনা বাজার বসবাস করছেন।
ঈদ আসলে সবচেয়ে বেশী আনন্দ করে শিশুরাই। স্বজনদের কাছ থেকে নতুন কাপড়, ঈদ সালামী পেয়ে প্রাণ ভরে হেসে- উল্লাসে আনন্দেই সময় কাটায় ঈদের দিন। পরিবারের সবারও একটু আলাদা নজর রাখে শিশুদের প্রতি। তবে সেই আনন্দ উল্লাস নেই সুবিধা-বঞ্চিত পথ শিশুদের মাঝে
পথ শিশুদের ঘর নেই, বাড়ি নেই, থাকার কোন জায়গা নেই, ঈদ আসে, ঈদ যায়, কিন্তু সেই ঈদ কখনই তাদের জন্য উৎসব হয়ে ওঠেনা। কারণ নেই তাদের স্বজন, তাদের না আছে নতুন জামা, নেই কোন ভালো খাবারের ব্যবস্থা। নতুন টাকার সালামী বা কে দিবে। ওদের খোঁজ খবর রাখেনা কেউ। তাদের কাছে ঈদের দিন অন্য ১০দিনের মতোই সমান।
কাওরাইদ রেল লাইনের পাশে সকাল থেকেই বসে আছে দুই ভাই আরিফ আর আলিফ। পাশেই মা পারভিন। ঈদে নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। দিন শেষে পেট ভরে একবেলা খেতে পারলে তাদের শান্তি। মা পারভিন আক্তার বলেন, মহল্লায় মানুষ নেই, মানুষের কাছে হাত পাতলে এক টাকা দুই টাকা ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। এ সময়ে অনেকেই অনেক কিছুই দেয় এবার তেমন কিছু পাচ্ছি না। আমাদের একবেলা পেট ভরে খেতে পারলেই শান্তি।
শ্রীপুর রেল লাইনের পাশে গেলে দেখা যায় চানাচুর বাদাম নিয়ে বিক্রির জন্য সড়কে ছুটাছুটি করছে বাবুল মিয়া (১২)। গাড়ি থামলেই হাত বাড়িয়ে ডাক দিচ্ছে বিক্রির আশায়। প্রচন্ড রৌদে ছুটাছুটির পর একটু বিশ্রামের জন্য পাশে গ্রিরিলের সঙ্গে শরীর ঢেলে বসে পড়েছে। সেখানে কথা হয় শিশুটির সঙ্গে। তাঁর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিশুটি বলেন,আমাদের কোন বাড়ি নাই,যে খানে রাত হয় সেখানেই থাকি,অনেক সময় রেল গাড়িতেও এবং রাস্তার পাশেই থাকি রাত হলে এখানে ঘুমায়। মাঝে মধ্যে রেল গাড়িতে উঠে চানাচুর বাদাম বিক্রি করি। আবার সন্ধা হলে চলে যাই ময়মনসিংহ।
ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের জৈনা বাজার ভাই ভাই ফিলিং স্টাশনের সামনের দেখা একদল শিশু খেলাধুলা করছে। এদিকসেদিক ছুটাছুটি করছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অনেকই সকালে এসে রাত পর্যন্ত এখানে অবস্থান করে। এবং তাদের মধ্যে নাইম, ইমরান, শফিকসহ অনেকইে বোতল লোহা কার্টন সংগ্রহ করে ভাংগাড়ির দোকানে বিক্রি করে। দিন শেষে এসব সংগ্রহ করে মানুষের কাছে চেয়ে যা পাই তা দিয়ে চাউল ডাউল কিনে খেয়ে পরে বেচে থাকে।
রাত পোহালেই বিভিন্ন বাজারের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। আবার কেউ কেউ বাজারে ঘুমায়। সকালে হলে আবার খাবার জোগানোর জন্য ছুটাছুটি করে। বোতল বিক্রি করে কিংবা হাত পেতে ১০টাকা পেলেই তাদের শান্তি।
এদিকে করোনার পরিস্থিতির কারণে অনেক পথশিশুই না খেয়ে অর্ধবেলা খেয়ে বেঁচে আছে। কেউ কেউ পথে পথে গাড়ি থামলে চানাচুর বাদাম নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিক্রির আশায়। আবার অনেক সড়কের পাশে বসে অপেক্ষা করছে কিছু পাওয়ার আশায়। ফলে সেখানে একবেলা খেয়ে থাকাটাই যাদের কষ্টসাধ্য সেখানে ঈদ নিয়ে তাদের নেই কোন মাথাব্যাথা কিংবা আনন্দেত ছোঁয়া।
তাদের মতো অসংখ্য শিশুর ঈদ পথেই কাটছে। ঈদের আনন্দ তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। সব শিশুর মতই সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমূল পথ শিশুরাও ঈদের অনন্দ-উৎসব উপভোগ করবে, তারাও ঈদের দিন আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠবে প্রত্যাশা হোক এমনটাই সবার।