ইসির চিঠির জবাব দেবে এনসিপি, তবে 'শাপলা' প্রতীকের দাবিতে অনড়
প্রকাশ : 2025-10-04 11:50:46১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক

বিবিসি বাংলা: জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে জটিলতা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দলটি শুরু থেকেই শাপলা ফুলকে তাদের নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে দাবি করে আসছে। তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংরক্ষিত প্রতীকের তালিকায় শাপলা নেই।
এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন গত ৩০ সেপ্টেম্বর এনসিপিকে একটি চিঠি পাঠায়। এতে বলা হয়, আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে কমিশনের তালিকাভুক্ত প্রতীক থেকে একটি বেছে জানাতে হবে। চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়— দলটির প্রথম পছন্দ শাপলা বর্তমানে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা-২০০৮ এর ৯(১) ধারা অনুযায়ী বরাদ্দযোগ্য প্রতীকের তালিকায় নেই, তাই এটি দেওয়া সম্ভব নয়। সেদিনই দলটি চিঠিটি হাতে পায়।
ইসির এই চিঠি পাওয়ার পরও এনসিপি তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে না বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সদস্য সচিব ও আইন সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মুসা। তিনি বলেন— চিঠি জবাব আমরা দেবো, তবে আমাদের মূল বক্তব্য অপরিবর্তিত থাকবে। আমরা শাপলা প্রতীকের ব্যাপারে অটল। শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দিতে কোনো আইনগত বাধা নেই, এটি শুধু কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়। যদি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে শাপলাকে বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত না করে বা বরাদ্দে গড়িমসি করে, তাহলে আমরা ধরে নেবো তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত।
মুসা আরও অভিযোগ করেন, কমিশন আগের কয়েকটি চিঠির নিষ্পত্তি না করেই নতুন করে প্রতীক বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে। এনসিপি তিনটি চিঠি দিয়েছিল—২২ জুন, ৩ আগস্ট ও ২৪ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে ২২ জুনের চিঠি অনুযায়ী তাদের নিবন্ধনের আবেদন প্রাথমিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়েছিল। তবে পরবর্তী দুই চিঠির ব্যাপারে কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়েই প্রতীক বাছাইয়ের ধাপে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মুসা বলেন, যে চিঠিগুলো অনিষ্পন্ন ছিল, সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না দিয়েই হঠাৎ এই ধাপে আসা আইনসম্মত হয়নি। আমরা মনে করি, কমিশন এখানে একটি কৌশলি অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা আশা করি।
প্রথম চিঠিতে এনসিপি প্রতীকের ক্রমানুসারে উল্লেখ করেছিল—শাপলা, কলম ও মোবাইল। পরে ৩ আগস্টে আবার সংশোধনী দিয়ে জানানো হয়—শাপলা, সাদা শাপলা এবং লাল শাপলা।
ইসি বলছে, কলম ও মোবাইল প্রতীক তালিকায় থাকায় এনসিপি চাইলে এগুলো নিতে পারে। কিন্তু এনসিপির ভেতরে বিকল্প প্রতীক নিয়ে আলোচনা উঠলেও শেষ পর্যন্ত তারা শাপলার দাবিতেই অনড় রয়েছে।
মুসা বলেন, সবাই কিন্তু শাপলাকে খুব ওয়েলকাম করেছে, শাপলাকে এনসিপির প্রতীক হিসেবে প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, মানুষের একটা আত্মিক বন্ধন তৈরি হয়েছে। এটা থেকে সরে এলে আমাদের নেতা-কর্মী কারো জন্যেই এটা সুখকর ব্যপার না বা এটা সম্ভব না।
তিনি আরও বলেন, আমরা দল থেকে আলোচনা উঠালেও আমাদের যারা সমর্থক রয়েছেন, শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন তারা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। ফলে বিকল্প ভাবনায় যেতে চান না বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনের ছাত্র নেতৃত্বের রাজনৈতিক দল গত এক বছর ধরেই বেশ আলোচনায় থাকলেও নিবন্ধন সংক্রান্ত নানা জটিলতার মুখে পড়তে হয় তাদের। এখন নিবন্ধনের দিকে এগোলেও প্রতীক নিশ্চিত না করায় নিবন্ধন প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
জটিলতা কোথায়
মুসা আরও উল্লেখ করেন, এখন যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে এর মাঝে জাতীয় ফল কাঁঠাল বরাদ্দ রয়েছে যেটি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মার্কা, ফলে জাতীয় ফুল দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনানুগ বাধা নেই বলছেন তারা।
বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক হিসেবে শাপলার সাথে আছে ধানের শীষ ও পাটের কুড়ি পাতা রয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, ‘প্রজাতন্ত্রের জাতীয় প্রতীক হচ্ছে, উভয় পার্শ্বে ধান্যশীর্ষবেষ্টিত পানিতে ভাসমান জাতীয় পুষ্প শাপলা, তাহার শীর্ষদেশে পাটগাছের তিনটি পরস্পরসংযুক্ত পত্র, তাহার উভয় পার্শ্বে দুইটি করিয়া তারকা।’
সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, ফ্ল্যাগ অ্যান্ড এমব্লেম অর্ডার ১৯৭২ এ বলা আছে, আমাদের জাতীয় প্রতীক হবে শাপলা। এতে ধানের শীষ ও পাটের কুড়ি থাকলে, শাপলাটাই হচ্ছে মূল।
যে কারণে সিনিয়র এই আইনজীবী মনে করেন, শাপলা কোনো একটি দলের প্রতীক হতে পারে না। এজন্য কোনো একটি দলকে শাপলা প্রতীক দেওয়া উচিত হবে না বলে মত দেন তিনি।
এছাড়া রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য নিবন্ধনের সময়ে বরাদ্দ ‘কেটলি’ প্রতীক বদলে শাপলা বা দোয়েল পাখি বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছিল।
জুন মাসে যখন প্রতীক চূড়ান্ত হয়নি তখন বিবিসিকে নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ১১৫টি খসড়া প্রতীক তালিকায় শাপলা যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি বরাদ্দযোগ্য তালিকায় ছিল না।
নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দযোগ্য প্রতীক
নির্বাচন কমিশনের বেশ কিছু কর্মকর্তার সাথে এনিয়ে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কারো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, দলটিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০চ (১) (খ)-এর নিয়ম সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে। ওই নিয়ম অনুযায়ী এই আদেশ বা বিধিমালার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোনো দলের মনোনীত সব প্রার্থীর জন্য নির্ধারিত প্রতীকগুলোর মধ্য থেকে পছন্দ করা একটি প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। বরাদ্দকৃত প্রতীকটি সেই দলের জন্য সংরক্ষিত থাকবে, যদি না দলটি পরবর্তীতে তালিকার অন্য কোনো প্রতীক নিতে চায়।
এবং ২০০৮-এর বিধি ৯(১)-এর অন্তর্ভুক্ত এমন একটি প্রতীক নির্বাচন করে কমিশনকে ৭ই অক্টোবরের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ নিবন্ধনের পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য বরাদ্দ না হওয়া প্রতীকগুলোর মধ্যে থেকে দলটিকে প্রতীক বাছাই করতে হবে।
ইসি এনসিপিকে নির্বাচনী প্রতীক পছন্দের জন্য যে ৫০টি প্রতীকের তালিকা দিয়েছে, সেগুলো হলো- আলমিরা, উটপাখি, কলম, কলস, কাঁপ-পিরিচ, কম্পিউটার, কলা, খাট, ঘুড়ি, চার্জার লাইট, চিংড়ী, চশমা, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, তবলা, তরমুজ, থালা, দালান, দোলনা, প্রজাপতি, ফুটবল, ফুলের টব, ফ্রিজ, বক, বালতি, বাঁশি, বেগুন, বেঞ্চ, বেলুন, বৈদ্যুতিক পাখা, মগ, মাইক, মোরগ, ময়ূর, মোড়া, মোবাইল ফোন, লাউ, লিচু, শঙ্খ, সেলাই মেশিন, সোফা, স্যুটকেস, হরিণ, হাঁস এবং হেলিকপ্টার। সূত্র: বিবিসি বাংলা