ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন দিয়ে ডেমোক্রেটদের ক্ষোভের মুখে বাইডেন

প্রকাশ : 2021-05-17 09:43:12১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন দিয়ে ডেমোক্রেটদের ক্ষোভের মুখে বাইডেন

ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে ডেমোক্রেটদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মানবাধিকার রক্ষার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেটি নিয়ে ডেমোক্রেটরা প্রশ্ন তুলছেন।

আজ রবিবার সিএনএন তাদের এক বিশ্লেষণে জানায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পরাজিত করে সামাজিক ও জাতিগত ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডেমোক্রেটিক দল ক্ষমতায় এসেছে। তাই এ সময়ে এসে ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলা এই দলটির জন্য বেশ অস্বস্তিকর। যুক্তরাষ্ট্র বর্ণবাদ ও বৈষম্যের ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে এবং ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকে গ্রহণ করেছে। লিবারেলরা মনে করেন, পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ন্যায়বিচারের একইরকম ধারণার প্রয়োগ করা। অনেকেই বর্তমানে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আচরণকে জাতিগত বিদ্বেষ হিসেবে মনে করেন।

ইসরায়েলকে চাপ দিতে বাইডেন প্রশাসনের জোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন একদল ডেমোক্রেট নেতা। তাদের মধ্যে কয়েকজন ইসরায়েলকে উস্কানি দেওয়া ও মানবাধিকার উপেক্ষা করে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য হোয়াইট হাউসের সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে ইসরায়েল যে পরিকল্পিতভাবে উচ্ছেদ করছে সেটি নিয়ে বাইডেন প্রকাশ্যে বিরোধিতা না করায় তার দলের মধ্যেই তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

শনিবার বাইডেন দুই দলের নেতাদের সঙ্গেই এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তারা প্রেসিডেন্টকে এই ইস্যুতে গভীরভাবে জড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় এপি, আল জাজিরাসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের অফিস গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান বাইডেন।

তবে লিবারেলরা বলছেন, কেবল বিবৃতিই যথেষ্ট না, ইসরায়েলের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে সরাসরি আলোচনা করা উচিত। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি যতদূর বিষয়গুলো দেখেছি এ পর্যন্ত সেখানে কোনও উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি।’

গাজায় অবস্থিত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় কেবল গাজা উপত্যকায় ১৩০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন, আহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি।

শনিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজের সঙ্গে কথা বলেন। অস্টিন এক টুইটে বলেন, ‘আমি আবারও নিশ্চিত করেছি যে, ইসরায়েল আত্মরক্ষা করছে, তাদের সেই অধিকার আছে। হামাস ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করছে আমি এর নিন্দা জানাই।’

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলার একটি সাধারণ মন্ত্র হলো, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে’। গত বুধবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনও একই কথা বলেছেন। এরপরই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ বা আইনসভার নিম্নকক্ষে লিবারেলরা এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান।

নিউইয়র্কের আইনপ্রণেতা আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘ফিলিস্তিনিদের কি বেঁচে থাকার অধিকার আছে?’ টুইটারেও বাইডেন প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন এই ডেমোক্রেট নেতা। তিনি বলেন, ‘এরপরেও বাইডেন প্রশাসন কীভাবে মানবাধিকারের পক্ষে বলে দাবি করেন?’

শনিবার মিশিগানের আইনপ্রণেতা রাশিদা ত্লাইব বিমান হামলা চালিয়ে গণমাধ্যমের অফিস গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানান। তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কথা উল্লেখ করে এক টুইটে বলেন, ‘ইসরায়েল মিডিয়া সূত্রকে টার্গেট করছে। এখনও কি বিশ্ব এই জাতিবিদ্বেষি নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ইসরায়েল যে যুদ্ধাপরাধ করছে তা দেখতে পাচ্ছে না?’

মেরিল্যান্ডের ডেমোক্রেট নেতা সেনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন জানান, পরিকল্পিতভাবে কোনো জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ফরেন রিলেশনস কমিটিতে দায়িত্ব পালন করা এই নেতা মানবাধিকার নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের যে প্রতিশ্রুতি সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, ‘যদি বাইডেন প্রশাসন আইন ও মানবাধিকারকে তার পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রাখে তবে এই মুহূর্তে এই ধরনের বিবৃতি দেওয়া মানায় না।’

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছেন ভারমন্টের সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। নিয়মিতভাবেই তিনি বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করছেন। শুক্রবার নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত এক ওপেডে তিনি লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই উচিত নেতানিয়াহু সরকারের পক্ষে কথা বলা বন্ধ করা।’

ম্যাসাচুসেটসের সেনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনও ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট রিপ্রেজেন্টেটিভ এরিক সোয়্যালওয়েলেও বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন।

লিবারেল ডেমোক্রেটরা বলছেন, কেবল ‘ট্রাম্প না হওয়া’ই বাইডেনের জন্য যথেষ্ট নয়। বাইডেনের উচিত যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন সেগুলো রক্ষা করা।