ইতালি নেয়ার প্রলোভনে লিবিয়ায় নির্যাতণ, নিঁখোজ মাদারীপুরের অর্ধশত যুবক
প্রকাশ : 2025-02-02 18:18:41১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দক্ষিণ চরকামারকান্দি গ্রামে কমপক্ষে ৫০ যুবককে ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে আবুল কালাম মুন্সি নামে এক আদম দালালের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, দালালচক্রের সদস্যরা প্রথমে ইতালিতে উন্নত জীবনযাপনের লোভ দেখায়। নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নিয়ে আগ্রহী যুবকদের লিবিয়ায় পাঠিয়ে তুলে দেওয়া হয় সংঘবদ্ধ মাফিয়াদের হাতে। এরপর তাদের নির্যাতনের ভিডিও পরিবারকে দেখিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা মতো। এমনকি পরিবার মুক্তিপণ দিতে রাজি না হলে অনেককে দিতে হয় জীবন। মাদারীপুরে অর্ধশতাধিক যুবকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ার নিয়ে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে দালাল আবুল কালাম মুন্সির বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও জামিন নিয়ে তিনি রয়েছেন ধরাধোঁয়ার বাইরে। তবে জেলা পুলিশ বলছে দ্রুত দালালদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।
সরেজমিন জানা গেছে,মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দক্ষিণ চরকামার কান্দির মাসুম মোল্লা। গত এক বছর আগে ভাগ্য বদলের আশায় ১৪লাখ টাকায় ইটালি যাওয়ার চুক্তি হয় দালাল আবুল কালাম মুন্সির সাথে। লিবিয়ায় নিয়ে বিক্রি করে দেয় মাফিয়ার কাছে। পরে আরো ২০ লাখ টাকার জন্য মুখে গামছা বেঁধে চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। বর্তমানের পরিবারের সাথে যোগাযোগ নেই। বেচে আছে নাকি মারা গেছে তাও জানে না পরিবারের লোকজন। একই গ্রামের সোহেল আহমেদ প্রায় ১৪ মাস আগে ইটালি যাওয়ার জন্য বাড়ি ছাড়েন। টাকার জন্য তাকেও করা হয়েছে অমানবিক নির্যাতন। সোহেলকে জীবিত উদ্ধারের জন্য দালাল চক্রকে দিয়েছেন ৫১লক্ষ টাকা। এদিকে সোহাগ মোল্লা একই দালালের কাছে জিম্মি দশায় থেকে মুক্ত হতে দিতে হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। কিন্তু তারও কোন সন্ধান নেই। এদিকে সোহাগের দুই বছরের সন্তান জন্মের পর থেকেই বাবার ছবি দেখেই চলছে। কিন্তু বাবাকে আর দেখতে পাননি। দুই বছরের শিশুসহ পরিবারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে গিয়ে অনিশ্চিত হয়ে গেল তার ভবিষ্যৎ। শুধু মাসুম মুন্সি, সোহেল আহমেদ ,আর সোহাগ মোল্লা নয়। অবৈধপথে ইতালি যাবার সময় লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে জিম্মি মাদারীপুরের চরকামার কান্দির এলাকার অর্ধশত যুবক।
এই ঘটনায় দালাল আবুল কালাম মুন্সির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা বিএম রাসেল বলেন, আমাদের একই গ্রামের কমপক্ষে ৫০ জন আবুল কালামের কাছে টাকা দিয়েছিল ইতালি যাওয়ার জন্য। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে জন প্রতি ৪০-৫০ লক্ষ করে টাকা নিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের সাথেই পরিবারের যোগাযোগ নেই। বেঁেচ আছে নাকি মারা গেছে তাও জানে না পরিবারের লোকজন। এই দালালে প্রলোভনে পড়ে ভিটা মাটি হারাচ্ছে অনেকেই। নির্যাতন করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ভিটেমাটি বিক্রি করে টাকা দিয়েও মিলছে না মুক্তি।
নিঁখোজ মাসুম মুন্সীর বাবা আব্দুল রহিম মুন্সি বলেন, আমার ছেলেকে প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে আবুল কালাম মুন্সি। আমার ভিটা মাটি যা ছিলো সব বিক্রি করে এদের ৫১ লক্ষ টাকা দিছি। আমার ছেলে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তাও জানি না। আমরা এর বিচার চাই।
নিখোঁজ সোহেল আহমেদের ভাই বিএম রুবেল বলেন, আমরা দালাল আবু কালাম এর বিচার এবং আমার ভাইদের সন্ধান চাই। সে আমাদের টাকায় এেেজন্ট ব্যাংকিং এর ব্যবসা করে। শিবচর শহরে এবং ঢাকায় ফ্লাট কিনেছে।মাদারীপুরের সিনিয়র আইনজীবি আবুল হাসান সোহেল বলেন, মানবপাচার গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধ প্রমাণ করতে পারলে আাসামিদের মৃত্যুদন্ড হতে। তবে অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত আবুল কালাম মুন্সির বাড়ি গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, মাদারীপুরে মানবপাচারের ঘটনা তুলনা মুলক বেশি ঘটে। মানবপাচারের ঘটনায় মামলায় আসামী গ্রেফতারের বিষয় জেলা পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। তবে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দেন।