ইউরোপে পোশাক রফতানি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাংলাদেশের

প্রকাশ : 2023-01-18 13:36:11১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

ইউরোপে পোশাক রফতানি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাংলাদেশের

 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অঞ্চলের বাজারে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পোশাক রফতানি বেড়েছে বাংলাদেশের। ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রেতারা বাংলাদেশের পোশাকের দিকে ঝুঁকছেন বেশি। 

ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব মন্দায় সার্বিকভাবে ইউরোপের ক্রেতারা অন্যান্য দেশের পোশাক পণ্য কেনা কমিয়ে দিলেও সেই তুলনায় বাংলাদেশের পোশাক কেনা কমায়নি।  গত বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর এই ১০ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রেতারা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি পোশাক কিনেছেন।


পরিসংখ্যান সংস্থাটি আরও বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্ব থেকে ৮৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে; যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। এই ১০ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিয়েছে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের; যা ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় ৪১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক আমদানির উৎসের অবস্থানে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রথম অবস্থান থাকা চীন থেকে গত বছরের প্রথম ১০ মাসে ২৫ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক কিনেছে। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চীন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক আমদানি বেড়েছে ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। যা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির চেয়ে অনেক কম। অবশ্য চীন ২৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ শেয়ার নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) সবচেয়ে বড় পোশাক সরবরাহকারীর অবস্থান ধরে রেখেছে। 

ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর এই ১০ মাসে তুরস্ক থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পোশাক কিনেছে ১০ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি।

ভারত থেকে তারা পোশাক নিয়েছে ৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। এছাড়া অন্যান্য শীর্ষ সরবরাহকারীদের মধ্যে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মরক্কো, শ্রীলঙ্কা এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানি যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ৩৩ দশমিক ০৫ শতাংশ, ২৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ১৮ শতাংশ এবং ৩১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে ১১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।
এর মধ্যে জার্মানিতে রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে স্পেন এবং ফ্রান্সে আমাদের রফতানি যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ৩৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার এবং ১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

অন্যদিকে, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে পোল্যান্ডে আমাদের রফতানি ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমেছে। এছাড়া ‘যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি ৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যার প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়েরে তুলনায় ১ দশমিক ১১ শতাংশ। একই সময়ে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রফতানি যথাক্রমে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার এবং ৭৭৪ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

অবশ্য প্রচলিত দেশের পাশাপাশি ১৭টি নতুন দেশে অন্তত চার হাজার মিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি হয়েছে। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি আগের বছরের একই সময়ের মধ্যে ৩২ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে জাপানে রফতানি ৪২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৭৫৪ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ভারতেও রফতানি উল্লেখযোগ্যভাবে ৫০ শতাংশ বেড়েছে, যার পরিমাণ ৫৪৮ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক পণ্যের দাম ছিল ২৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রফতানি আয়ের নতুন রেকর্ড অর্জনে সহায়তা করেছে তৈরি পোশাক খাত। একই সঙ্গে তা নভেম্বরে হওয়া রেকর্ডকেও ভেঙেছে। ডিসেম্বরে ৯ শতাংশের কিছু বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে রফতানি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা একক মাসের হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।