আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইনিংস ও ৪৭ রানে প্রথম টেস্ট জিতলো বাংলাদেশ

প্রকাশ : 2025-11-14 13:58:57১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইনিংস ও ৪৭ রানে প্রথম টেস্ট জিতলো বাংলাদেশ

ইনিংস হার এড়ানোর চেষ্টায় কোনোপ্রকার ঘাটতি ছিল না আয়ারল্যান্ডের। চতুর্থ দিন আইরিশ ব্যাটাররা সেই চেষ্টা চালালেও, শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। ২৫৪ রানে অলআউট হয়ে পরাজিত হতে হলো ইনিংস ও ৪৭ রানে। ফলে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।

লাঞ্চের পর বাকি ৩ উইকেট তুলে নেন তাইজুল, হাসান মুরাদ ও নাহিদ রানা। শেষ উইকেটটি পান তাইজুল ইসলাম। বাঁ-হাতি স্পিনারের টার্ন করা বলটি ব্যারি ম্যাকার্থির ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে লিটনের গ্লাভসে। প্রথমে আম্পায়ার সাড়া না দিলেও, রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। আল্ট্রাএজে ক্যাচ নিশ্চিত হলে আম্পায়ার সিদ্ধান্ত বদল করেন। ২৫ রান করা ম্যাকার্থিকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন ৩ উইকেট শিকার করা তাইজুল।

বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে আটে নামা ব্যাটার জর্ডান নেইল ৭ চারে খেলেন ৩৮ রানের ইনিংস। একটা সময় মনে হচ্ছিল তিনিই এড়াবেন ইনিংস হার। কিন্তু সেটি আর সম্ভব হয়নি। হাসান মুরাদের বল ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে সাদমানের দুর্দান্ত ক্যাচে কাটা পড়েন তিনি দলীয় ২৫২ রানে। ফলে পতন হয় নবম উইকেটের। ৬০ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৪ উইকেট গেছে অভিষিক্ত মুরাদের ঝুলিতেই।

লাঞ্চের পর খেলা মাঠে ফিরলে নাহিদ রানাকে বোলিংয়ে আনেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আর তাতে সফলতার মুখও দেখে বাংলাদেশ। দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ানো ম্যাকব্রাইনকে বাউন্সারে বিভ্রান্ত করে শর্ট মিড উইকেটে হাসান মুরাদের ক্যাচে পরিণত করেন গতিতারকা নাহিদ। ৫২ রান করে আইরিশ এই ব্যাটার সাজঘরে ফিরলে ১৯৮ রানে অষ্টম উইকেট হারায় সফরকারীরা।

আউট হওয়ার আগে আইরিশ ইনিংসের ৪৭তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের টানা দুই বলে এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে যান অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন। দুইবারই আম্পায়ার আউট দিয়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন।

চতুর্থ দিন সকালে শুরুতেই আঘাত হানেন তাইজুল ইসলাম। তার ঘূর্ণিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়েছিলেন ম্যাথু হাম্প্রেস (১৬), টপ এজ হয়ে বল উঠে যায় ওপরে। শর্ট ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে সাদমান ইসলাম নেন ক্যাচ। ১১৬ রানে ৬ উইকেট হারায় আইরিশরা।বাংলাদেশের হয়ে এই ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট পেয়েছেন হাসান মুরাদ। ৩টি তাইজুল ইসলাম ও দুটি পেয়েছেন নাহিদ রানা।

এর আগে, সিলেট টেস্টে প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশের লিড ৩০১ রানের। জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেটে ৮৬ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করে আয়ারল্যান্ড।দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই চাপে পড়ে আইরিশরা। চাদ কারমাইকেলকে (৫) বোল্ড করেন নাহিদ রানা। পল স্টার্লিং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছিলেন। তার ৪৩ রানের ইনিংসটি কাটা পড়ে নাজমুল হোসেন শান্তর করা রানআউটে।

এরপর হ্যারি টেক্টরকে (১৮) এলবিডব্লিউ করেন তাইজুল ইসলাম। হাসান মুরাদের বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে এক্সট্রা কভারে সাদমান ইসলামের দুর্দান্ত ক্যাচ হন কুর্তিস ক্যাম্ফার (৫)। ঝাঁপিয়ে পড়ে বাজপাখির মতো বলটি তালুবন্দি করেন সাদমান।

হাসান মুরাদের দ্বিতীয় শিকার হন লরকান টাকার (৯)। বল পায়ে লাগলে আম্পায়ার শুরুতে আউট দেননি। রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। দেখা যায় বল আঘাত করতো লেগ স্টাম্পে। সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন আম্পায়ার। ৮৫ রানে ৫ উইকেট হারায় আইরিশরা।

তৃতীয় দিন চা-বিরতির পর মাত্র ৩ ওভার ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে বোর্ডে যোগ হয় ১২ রান, হারায় ১ উইকেট। ১৬ রান করে হাসান মুরাদ ফিরলে ফাইফার পূর্ণ করেন ম্যাথু হাম্প্রেস। ৮ উইকেটে ৫৮৭ রানে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ঘোষণা করলে লিড দাঁড়ায় ৩০১ রান।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিন ব্যাটিং করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে আরও ২৪৯ রান যুক্ত করে ইনিংস ঘোষণা করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৭১ রান করেছেন মাহমুদুল হাসান জয়। ডাবল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও তৃতীয় দিন মাত্র ২ রান যোগ করেই ফেরেন সাজঘরে। একইভাবে আগেরদিনের ৮০ রান নিয়ে মাঠে নামা মুমিনুল হক ২ রান যোগ করে ৮২ করেই আউট হন। ৩৪৬ রানে ৩ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

৯৯তম টেস্ট খেলতে নামা মুশফিক করেছেন মাত্র ২৩ রান। ওয়ানডে মেজাজে খেলে ৬৬ বলে ৬০ রান করা লিটন দাসও আউট হন বড় শট খেলে। দারুণ ক্যাচ নেন টেক্টর। মুমিনুল, মুশফিক ও লিটন সবাইকে সাজঘরের পথ দেখান ফাইফার পূর্ণ করা হাম্প্রেস।

৫২৩ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তুলে নেন ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি। তবে ১০০ রান করেই থামেন ম্যাকব্রাইনের বলে।

দলীয় ৫৪৫ রানে শান্তর বিদায়ের পর ৫৬১ রানে ১৭ করে আউট হন মিরাজও হাম্প্রেসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তার বলেই। চা-বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা ২৮৯ রান লিড নিয়ে। দলের বোর্ডে তখন রান ৭ উইকেটে ৫৭৫।

বিরতির পর মুরাদকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার পূর্ণ করেন হাম্প্রেস। বোর্ডে আর ১২ রান তথা ৩০১ রানের লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনে ৮০ রান করে আউট হয়েছিলেন সাদমান ইসলাম।

আইরিশদের হয় হাম্প্রেসের ৫ উইকেট ছাড়া, ব্যারি ম্যাকার্থি নেন ২ উইকেট। একটি উইকেট পেয়েছেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন।