আসুন ভেদাভেদ ভুলে জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করি: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : 2021-03-26 19:41:55১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

আসুন ভেদাভেদ ভুলে জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করি: প্রধানমন্ত্রী

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এ শুভ মুহূর্তে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিন শুক্রবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর প্যারেড স্কয়ারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক মূল প্রতিপাদ্যের ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার শেষ দিন ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।  সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এ শুভ মুহূর্তে আসুন প্রতিজ্ঞা করি সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা আমাদের জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করবো। দক্ষিণ এশিয়াকে উন্নত-সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবো।

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আমরা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছি। বিগত ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনের ত্যাগের কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেসা মুজিব, তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও ১০ বছরের শেখ রাসেল, দুই ভ্রাতৃবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, চাচা শেখ আবু নাসেরসহ সেই রাতের সব শহীদকে স্মরণ করেন।

স্থিতিশীল দক্ষিণ এশিয়া গড়তে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান
স্থিতিশীল দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে হলে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ দেশ। একটি স্থিতিশীল এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে হলে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা যদি পরস্পরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি তাহলে আমাদের জনগণের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী।

এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর দর্শনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী ছিলেন। বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি তিনি স্বপ্ন দেখতেন অর্থনৈতিক মুক্তির। এজন্য পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ও সমতার ভিত্তিতে সহযোগিতার ওপর তিনি জোর দিতেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত শুধু আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রই নয়, ভারতের সঙ্গে আমাদের রয়েছে ঐতিহাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্যগত ও ভৌগোলিক সেতুবন্ধ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের সঙ্গে ভারতের সরকার ও সেদেশের জনগণ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচারের মুখে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য করেছিল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ত্যাগের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত মিত্র বাহিনীর যৌথ অভিযানের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এ যুদ্ধে ভারতের এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সৈন্য শহীদ হয়েছেন। আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণের যে আত্মত্যাগ, সাহায্য-সহযোগিতা তা কখনও ভুলবার নয়। আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে সে অবদানের কথা স্মরণ করি।

৭৫ পরবর্তী সময়ে ভারতে আশ্রয় পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ভারতের জনগণ ও সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পিতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমরা দু’বোন জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যাই। আমাদের দেশে ফিরতে বাধা দিলে আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ি। আমার পরিবার ও আমার ছোট বোন শেখ রেহানাকে ভারত সরকার আশ্রয় দেয়।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে স্বাধীনতা সম্মাননা, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননাসহ ২২৫ জন ভারতীয় নাগরিককে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত করার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের সঙ্গে বর্তমানে আমাদের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীজির ‘প্রতিবেশী সর্বাগ্রে’ নীতির প্রশংসা করি। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনা ভাইরাসের টিকা পাঠানোর মাধ্যমে মোদীজির এ নীতিরই প্রতিফলন ঘটেছে।

বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে ব্যবসায়-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত আমাদের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার।

সম্প্রতি ফেনী নদীর উপর মৈত্রী সেতু চালুর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি ফেনী নদীর উপর মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। এ রাজ্যগুলো এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও চট্টগ্রাম বিমান বন্দর ব্যবহার করতে পারবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আসায় ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমাদের মধ্যে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে আমাদের আয়োজনকে মহিমান্বিত করেছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মর্যাদাশীল ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০২০’- এ ভূষিত করায় শেখ হাসিনা ভারত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি মনে করি তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করার মাধ্যমে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একজন যোগ্য নেতা ও গান্ধীজির প্রকৃত অনুসারীকেই সম্মানিত করলো।

অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেওয়া ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০২০' পুরস্কার গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা।  

অনুষ্ঠানের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লোগো উন্মোচন করা হয়।

আলোচনা পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।  

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর পরিবেশনায় বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে নবনির্মিত রাগ ‘মৈত্রি’ পরিবেশনা, ‘পিতা দিয়েছে স্বাধীন স্বদেশ, কন্যা দিয়েছে আলো’ শীর্ষক থিমেটিক কোরিওগ্রাফি, ‘বিন্দু থেকে সিন্ধু’ শীর্ষক তিনটি কালজয়ী গান, ঢাক-ঢোলের সমবেত বাদ্য ও কোরিওগ্রাফি সহযোগে ‘বাংলাদেশের গর্জন: আজ শুনুক পুরো বিশ্ব’ এবং সবশেষে ফায়ার ওয়ার্কস ও লেজার শোর প্রদর্শন করা হবে।