আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইআরআইয়ের ৮ সুপারিশ

প্রকাশ : 2025-11-06 17:04:57১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইআরআইয়ের ৮ সুপারিশ

বাংলাদেশে নির্বাচন পূর্ববর্তী পরিস্থিতি নিয়ে মূল্যায়ন শেষে আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে তারা নির্বাচন কমিশন, সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য নির্বাচনী অংশীজনদের জন্য আট দফা সুপারিশ দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সুপারিশগুলো যদি নির্বাচনের আগে ও পরে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে তা বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

১. জুলাই চার্টারের বাস্তবায়ন চূড়ান্ত করা

রাজনৈতিক দলগুলোকে দ্রুত জুলাই জাতীয় চার্টার চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। এর মধ্যে সময়সীমা নির্ধারণ, বাকি মতবিরোধ সমাধান এবং গণপরিষদের সামনে গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি ঘোষণা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অস্থায়ী সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে যৌথভাবে কাজ করে গণভোটের জন্য একটি স্পষ্ট ও বৈধ কাঠামো তৈরি করতে হবে। গণভোটের উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া ও প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে ধারাবাহিকভাবে অবহিত করা আস্থা গঠনে সহায়ক হবে।

২. নাগরিক শিক্ষা জোরদার ও গণতান্ত্রিক সংস্কার সমর্থন

নাগরিকদের মধ্যে জুলাই চার্টার ও সংশ্লিষ্ট সংস্কার সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। এজন্য নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মাধ্যমে শক্তিশালী নাগরিক শিক্ষা কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন। সংবিধান, নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং সংস্কারের প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে, বিশেষত প্রথমবারের ভোটার, নারী, যুব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে।

৩. নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা

রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ এখনো সীমিত। রাজনৈতিক দলগুলোকে নারী প্রার্থী মনোনয়ন, নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ ও সংরক্ষিত আসনের বাইরেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে ভোটার ও প্রার্থী হিসেবে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

৪. প্রার্থী নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা

দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ হতে হবে। প্রভাব, পক্ষপাত বা জোরজবরদিহিমুক্ত প্রক্রিয়ায় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে সহিংসতা প্রতিরোধ এবং নারী প্রার্থী ও প্রচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. নিরাপত্তা পরিকল্পনায় সমন্বয় বৃদ্ধি

নির্বাচন কমিশনকে সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এর লক্ষ্য হবে স্থানীয় উত্তেজনা প্রশমন ও নির্বাচনী সহিংসতা প্রতিরোধ। স্পষ্ট যোগাযোগ কাঠামো ও যৌথ প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা গড়ে তোলা জননিরাপত্তা এবং ভোটারদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

৬. নাগরিক পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি

নির্বাচন কমিশনকে নাগরিক পর্যবেক্ষক অনুমোদনের স্পষ্ট ও উন্মুক্ত মানদণ্ড প্রকাশ করতে হবে। যোগ্যতা নির্ধারণ, মূল্যায়ন প্রক্রিয়া ও পর্যালোচনার সময়সীমা স্পষ্ট করতে হবে। অনুমোদিত পর্যবেক্ষকরা যেন নিরপেক্ষতা বজায় রাখেন এবং কোনো দলের প্রতি আনুগত্য না দেখান—এটা নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া কমিশনকে তাদের সঙ্গে নিয়মিত ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় ও উদ্বেগ সমাধানে কাজ করতে হবে।

৭. রাজনৈতিক তহবিলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা

নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহ ও প্রচার ব্যয়ের তথ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিতে হবে। এই স্বচ্ছতা নাগরিক, গণমাধ্যম ও সমাজসংগঠনগুলোকে অর্থের প্রবাহ পর্যবেক্ষণে সহায়তা করবে। ভুল রিপোর্টিং বা অনিয়মের জন্য কঠোর দণ্ডনীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগ প্রয়োজন।

৮. স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পরিবেশ প্রচার

নির্বাচনকালীন সময়ে গণমাধ্যমকে পেশাগত মান ও সম্পাদকীয় স্বাধীনতা বজায় রাখতে হবে। সাংবাদিকদের ওপর রাজনৈতিক বা আর্থিক চাপমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নাগরিক সমাজ ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে ভোটারদের তথ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর তথ্য চিহ্নিতকরণে কাজ করবে, যাতে ভোটাররা বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আইআরআইয়ের প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, এই সুপারিশগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আরও স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।