আশুলিয়ায় ৭৯ পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি

প্রকাশ : 2024-09-09 14:14:34১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

আশুলিয়ায় ৭৯ পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি

সাভার ও আশুলিয়ায় থামছে না শ্রমিক অসন্তোষ। এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার ওই এলাকার ৭৯টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে মালিক কর্তৃপক্ষ। তবে শিল্পাঞ্চলে কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। কর্মবিরতি পালন করেছেন শ্রমিকরা।

শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, গতকাল সকালে নির্ধারিত সময়ে শ্রমিকরা কারখানায় উপস্থিত হলেও তাদের দাবি আদায় না হওয়ায় কাজ বন্ধ করে বসে থাকেন। ফলে কারখানাগুলো ছুটি দেওয়া হয়। আজ সোমবার বেশকিছু এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ায় ৭৯টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে গতকাল রোববার আশুলিয়ায় আলিফ ভিলেজ লিমিটেড গ্রুপের তিনটি তৈরি পোশাক কারখানায় ব্যাপক হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলাকারীদের অনেকে মুখোশ পরিহিত ছিল। দুপুরে আশুলিয়া ইউনিয়নের টঙ্গাবাড়ি এলাকার আলিফ ভিলেজ লিমিটেডের আলিফ এমব্রয়ডারি ভিলেজ লিমিটেড, লাম মিম অ্যাপারেলস লিমিটেড ও লাম মিম অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় আশুলিয়ার শিমুলতলীতে ইউফোরিয়া নামে একটি কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। কারখানার কয়েকজন কর্মীকে তারা মারধর করেন। সেখানে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর র‍্যাবের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল চন্দ্র। 

শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে গত কয়েক দিন নানা উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। কারখানার মালিক, শ্রমিক নেতা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নিয়েও হয় সমন্বয় সভা। পুরো আশুলিয়ায় নেওয়া হয়েছিল ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর পরও আশুলিয়া শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ থামানো যাচ্ছে না।

পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকের চেয়ে পুরুষ বেশি নিয়োগ দিতে হবে– প্রধান এ দাবিসহ আরও কিছু দাবি নিয়ে ১০ দিন ধরে অসন্তোষ চলছে শিল্পাঞ্চলে। পোশাক কারখানায় পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। তবে গত কয়েক বছরে নারী শ্রমিকের হার অনেক কমেছে। গবেষণা সংস্থা ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) পরিসংখ্যান বলছে, পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের হার এখন ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে। একসময় এ হার প্রায় ৮০ শতাংশ ছিল।

শ্রমিকরা বলেন, টানা কয়েকদিন বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করেন। তবে আজ কয়েকটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা এলেও কারখানার গেটে ছুটির নোটিশ দেখতে পান। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তবে মালিকপক্ষ না মেনে নিয়েও আবার তালবাহানা করছেন জানিয়ে শ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গতকাল সকালে বেশ কয়েকটি কারখানায় যোগ দিয়ে এক পর্যায়ে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান শ্রমিকরা। কারখানার ভেতর তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শ্রমিক নেতারা বলছেন, অন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা শ্রমিক নয়। কারা আন্দোলন করছে, তাদের খুঁজে বের করা দরকার। মালিকপক্ষ বলছে, যৌথ বাহিনীর বারবার আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা রয়েছে।

যৌথ বাহিনী বারবার আশ্বাস দিলেও কেন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না । বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, সমন্বয়ে বড় ঘাটতি রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বলতে এখন কিছুই নেই। আগে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পুলিশ ও শিল্প পুলিশকে কখনও আইনি, কখনও কৌশলগত ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। এখন সেটা একেবারেই নেই। শ্রমিক নেতাদের কথা শুনছে না আন্দোলনকারীরা। রাজনৈতিক বৈরিতাও তৈরি হয়েছে। মোটামুটি এসব কারণেই পরিস্থিতি আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

 

সা/ই