আরও তিনটি প্রাদেশিক রাজধানী তালেবানের দখলে
প্রকাশ : 2021-08-09 08:22:32১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
আফগানিস্তানে তালেবান বাহিনীর হাতে দেশটির আরও তিনটি প্রাদেশিক রাজধানীর পতন হয়েছে। এ নিয়ে তালেবান তিন দিনের মধ্যেই পাঁচটি প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিল। এর মধ্যে গতকাল রোববার এক দিনেই কুন্দুজ, সার-ই-পল ও তাকহার প্রদেশের রাজধানী দখলে নেয় তারা। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে এ কথা জানানো হয়।
তালেবানের দখলে নেওয়া পাঁচটি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে কুন্দুজ (প্রদেশ ও রাজধানীর নাম একই) সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৫ ও ২০১৬ সালেও এই শহরের দখল নিয়েছিল তালেবান। তবে বিদেশি সেনাদের সহায়তায় সরকারি বাহিনী তখন কুন্দুজ পুনরুদ্ধার করেছিল। আফগানিস্তানে মোট ৩৪টি প্রদেশ রয়েছে।
এর আগে গত শনিবার দেশটির জাওজান প্রদেশের রাজধানী সেবারঘানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করে তালেবান। আগের দিন শুক্রবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ নিমরোজের রাজধানী জারাঞ্জ দখলে নেয় সশস্ত্র সংগঠনটি। গতকাল রোববার দেশটির উত্তরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কুন্দুজ ও সার-ই-পলের পতন ঘটে। পরে সন্ধ্যায় তাকহারের রাজধানী তালুকানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। স্থানীয় আইনপ্রণেতা ও বাসিন্দারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ তিনটি এলাকা দখলে নিতে গিয়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াই হয়েছে তালেবান যোদ্ধাদের।
এএফপি জানায়, কুন্দুজের একজন বাসিন্দা পুরো শহর চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে বলে বর্ণনা দিয়েছেন। আফগানিস্তানজুড়ে তালেবানের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে তিন দিনে পাঁচটি প্রাদেশিক রাজধানী শহরের পতন দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
কুন্দুজ দখল নিয়ে তালেবান আজ একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে তালেবান বলেছে, মারাত্মক লড়াইয়ের পর মুজাহিদিনরা আল্লাহর রহমতে কুন্দুজের রাজধানী দখল করেছেন।
স্থানীয় সূত্র ও সাংবাদিকেরা আল-জাজিরাকে নিশ্চিত করেছেন যে প্রাদেশিক রাজধানী কুন্দুজে বর্তমানে তালেবান যোদ্ধারা অবস্থান করছেন। তালেবানের পৃথক আরেক বিবৃতিতে বলা হয়, মুজাহিদিনরা সার-ই-পল শহর দখল করেছেন। সেখানকার সরকারি ভবন ও স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তাঁরা।
সার-ই-পলের নারী অধিকারকর্মী পারভিনা আজিমি বলেছেন, সরকারি বাহিনীর সদস্যরা তিন শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরের ব্যারাক থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি বিমান এসেও নামতে পারেনি।
আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, সরকারি বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো পুনর্দখলের জন্য তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, কমান্ডো বাহিনী সাফাই অভিযান শুরু করেছে। জাতীয় রেডিও, টিভি ভবনসহ কিছু এলাকা সন্ত্রাসী তালেবান মুক্ত করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, কাবুলের উত্তরাঞ্চল ধরে রাখতে না পারা সরকারের দীর্ঘমেয়াদি টিকে থাকার জন্য গুরুতর প্রমাণিত হতে পারে। আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলকে দীর্ঘদিন ধরে তালেবানবিরোধী শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
গত শুক্রবার তালেবান প্রথম দক্ষিণ-পশ্চিমের ইরান সীমান্তের কাছে নিমরোজের জারাঞ্জ দখল করে। এরপর জাওজানের সেবারঘানের নিয়ন্ত্রণও চলে যায় তাদের হাতে। পশ্চিমে হেরাত প্রদেশের উপকণ্ঠ ও লস্করগাহ, দক্ষিণে কান্দাহারেও তীব্র লড়াই চলছে। তালেবানের অগ্রগতির মধ্যে গত শনিবার সরকারি বাহিনীর জন্য স্বস্তি হয়ে এসেছে সেবারঘানে তালেবান লক্ষ্যবস্তুর ওপর মার্কিন বিমান হামলার বিষয়টি।
২০০ তালেবান নিহত
আফগানিস্তানের জাওজান প্রদেশের রাজধানী সেবারঘানে তালেবান যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলায় দুই শতাধিক তালেবান নিহত হয়েছে। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এমনটাই জানিয়েছেন। গতকাল বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ফাওয়াদ আমান টুইট করে বলেন, সেবারঘানে তালেবান যোদ্ধাদের জমায়েত ও গোপন আস্তানা লক্ষ্য করে বিমানবাহিনী হামলা চালায়। এ হামলায় ২০০ জনের বেশি তালেবান নিহত হয়। এতে তালেবানের বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও যানবাহন ধ্বংস হয়েছে।
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বি-৫২ জঙ্গি বিমান দিয়ে তালেবান লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। মার্কিন বিমানবাহিনীর এ হামলায় ব্যাপক হতাহতের শিকার হয়েছে তালেবান।
সপ্তাহব্যাপী সংঘর্ষের পর শনিবার সেবারঘানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করে তালেবান। আগের দিন গত শুক্রবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ নিমরোজের রাজধানী জারাঞ্জ দখলে নেয় সশস্ত্র সংগঠনটি। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তালেবান যোদ্ধাদের হাতে আফগানিস্তানের দুটি প্রাদেশিক রাজধানীর পতন হয়।
আফগানিস্তানে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে
তালেবানের হামলায় গত বছরের তুলনায় এ বছর বেসামরিক মানুষ নিহতের হার ৮০ শতাংশ বেড়েছে। আফগানিস্তানের স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ১ হাজার ৬৭৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৪৪ জন।