আমি সংখ্যালঘু, এখন আমার অস্ত্বিত্বের সঙ্কট

প্রকাশ : 2021-10-23 10:31:04১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

আমি সংখ্যালঘু, এখন আমার অস্ত্বিত্বের সঙ্কট

মুসলিম বলছে আমার ধর্ম শ্রেষ্ঠ ধর্ম, অন্য ধর্মকে আঘাত করা আমার ধর্মে নেই। হিন্দু বলছে ,অন্য ধর্মকে ধ্বংস করা আমার ধর্ম নয়। বৌদ্ধ বলছে আমার ধর্ম শান্তির ধর্ম। খ্রীষ্টান বলছে সহ্য আর ত্যাগ আমার ধর্ম। তাহলে ধর্মের নামে একে অপরকে হত্যা যে যারা করছে ,ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে। ধর্মের নামে নারীকে অত্যাচার করছে।

ধর্মের নামে অন্যের ধন সম্পদ লুট করছে তারা কে, কোন ধর্মের? পীরগঞ্জের হরিদাশ স্ত্রী-সন্তানের মুখ চেপে ধরে সারারাত ধানক্ষেতে লুকিয়ে ছিলেন, রামুতে বৌদ্ধরা লুকিয়ে ছিলো, পাহাড়িয়া লুকিয়ে থাকে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমার সংখ্যালঘু নাগরিক তকমা, বাংলাদেশী নই। আমরা বাংলাদেশী কখন হবো? 

 রাজনৈতিক দলগুলো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরস্পরকে দায়ী করছে। কিন্ত তাদের এই  অপ রাজনীতির  ফল ভোগ করছে সংখ্যালঘুরা । স্বাধীনতার পর থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুনে  পুড়েছে বাংলাদেশ, পুড়েছে মুক্তিযুদ্ধ । বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনা নিয়ে  যে বাংলাদেশের জন্ম, সে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুনে  পুড়েছে?

আজ পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তা নিয়ে সংখ্যালঘুরা আতঙ্কিত। প্রগতিশীলের বহু চর্বিত চর্বণ কথিত অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্ম নিরপেক্ষতা কোথায় এখন? ১৯৪৭ সালের পর এদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ২৯ শতাংশ ছিলো, এখন তা কমে বর্তমান ৯ শতাংশ।  ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি, গত পঞ্চাশ বছরে জনসংখ্যা বেড়ে ১৮ কোটি হয়েছে। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যা কেন ২৯% থেকে কমে ৯% এ নেমে আসলো? বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার এবং ৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল  সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আপোষ এর জন্য দায়ী? সংখ্যালঘুদের জন্য একটা ভারসাম্যপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা কি আদো নিশ্চিত হবে? 

এখন সংখ্যালঘুদের প্রশ্ন, আমি কি আগে বাংলাদেশী না আগে সংখ্যালঘু? বাংলাদেশের  নাগরিক হিসেবে সংখ্যালঘুদের কি নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার আছে? দেশে ঘটা যেকোনো কিছুর ভিকটিম কেন শুধু সংখ্যালঘুকেই হতে হবে? সংখ্যালঘুদের মন্দির-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব কার? খুব সহজেই সংখ্যালঘুদের কেন টার্গেট বানানো হচ্ছে?

স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন দলের সরকারের সময় রামু বা পীরগঞ্জের মানুষগুলোর মতন বহু সংখ্যালঘু  একরাতের মধ্যে নিঃস্ব হয়ে গেছে। কর্ম সুবাধে দক্ষিণ অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের উপর বহু নির্যাতন বিএনপি সরকারের সময়ে দেখেছি। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় মদদে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ভয়ংকর অত্যাচার চালানো হয়। যার হাজার উদাহরণ আছে :  পটিয়ায় ১ জনকে পিটিয়ে হত্যা, প্রথম আলো, ১৬ জুলাই ২০০১, ঘরে তালা দিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন, বাঁশখালীতে একই পরিবারের চারজন জীবন্ত দগ্ধ, ভোরের কাগজ, ২২ জুলাই ২০০১, বাঁশখালীতে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে মা-মেয়ে ও ২ শিশুসন্তানের মৃত্যু, প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০০১। 

 সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের এসবের কোন বিচার হয় নি। এর জন্য শুধুই রাজনৈতিক দল দায়ী নয়, সংখ্যালঘুদের নেত্রীত্ব দানকারী সংগঠনের দায় রয়েছে। প্রতিটি সরকারের সময় হঠাৎই কিছু ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠে, যারা এই সব সংগঠনকে ব্যবহার করে, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারকে পুঁজি করে সরকারের আপন হয়, রাজনীতি করে ও ফায়দা লোটে। আর সংখ্যালঘুদের নেত্রীত্ব দানকারী সংগঠনগুলো সব সরকারের সাথেই আপস করে চলে। আর প্রগতিশীলদের কথা নাই বা বললাম। 

সংখ্যালঘুদের অসহায়ত্ব খুবই চরমে। তাদের কাছে রাজনৈতিক বাদানুবাদের কোনো গুরুত্ব নেই। সংখ্যালঘুদের অস্ত্বিত্বের সঙ্কট।