আমরাও আক্রান্ত, আমাদের নেতাকর্মীরা নিরস্ত্র ছিল: কাদের
প্রকাশ : 2024-07-30 14:53:17১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সরকার বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আইনগত দিন ভালোভাবে দেখে তা বাস্তবায়ন করবে সরকার, যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জামায়াত স্বাধীন দেশে আর রাজনীতির কোনো সুযোগ না পায়।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের যৌথসভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা দেখেছেন সোমবার (২৯ জুলাই) ১৪ দলের সভায় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা আমরা গত রাতেই গণভবন গেট থেকে অবহিত করেছি। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা জন্য বিভিন্ন দিক থেকে দীর্ঘদিন যাবত রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা, নাগরিক সমাজ দাবি তুলে আসছে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ওই সময় গঠিত গণআদালত, অতীতে গণজাগরণ মঞ্চের দাবিও ছিল জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা। এ ছাড়া দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এক রায় জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকলে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন আছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলারের নক্সে পার্টি রাজনীতি করতে পারেনি জার্মানিতে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক জামায়াত ইসলাম দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে উল্লেখ আছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ১৪ দলীয় জোটের চেয়ারপারসন, সেখানে শরিক দলগুলোর বক্তব্য, তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ, দলটির অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন সময় দেওয়া আদালতের রায় ইত্যাদি বিবেচনায় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধে ১৪ দল সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সরকার। আর বাস্তবায়নের পদ্ধতি কি হবে তার আইনগত দিক দেখে শুনে শিগগিরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে সরকার। কারণ আমরা আইনগত দিকগুলো ভালোভাবে দেখে নিতে চাই। যাতে কোনো ফাঁক-ফোকর দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে এ অপশক্তি আর কোনো সুযোগ না পায়।
তিনি বলেন, দলীয়ভাবে ঢাকা মহানগরসহ সব মহানগর, সব জেলা, সদর, সব উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীদের বিরাজমান পরিস্থিতিতে কারফিউ মেনে চলার কথা জানানো হচ্ছে। দলীয়ভাবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এটা আমাদের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশ। গুজব ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। গুজব সৃষ্টিকারীদের তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানাতে হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে কয়েকদিন যে সহিংসতা হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা নিরস্ত্র ছিল। সশস্ত্রদের দ্বারা তারা হামলার শিকার হয়েছে।’গত ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে সকালের দিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির পর ছাত্র আন্দোলনে নতুন মাত্রা পায়।
সেদিন ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় হঠাৎ করেই বিপুল সংখ্যক মানুষ রাজপথে নেমে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কারফিউয়ের মধ্যেও টানা চারদিন ধরে চলতে থাকে সংঘাত।
কয়েকদিনের সংঘাতে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির পর সরকারের সমালোচনা করে দেশ বিদেশ থেকে যে বিবৃতি আসছে এ নিয়ে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। সেতুমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনাপ্রবাহে আমরা আক্রান্ত, আক্রমণকারী নই। আমাদের নেতাকর্মীরা নিরস্ত্র ছিল। তারা সশস্ত্রদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শুনুন ফখরুল সাবেক। সব তথ্যই আমাদের কাছে আছে। কোথা থেকে নির্দেশ এসেছে, উস্কানি এসেছে৷ কারা কোথায় কোথায় বৈঠক করেছে, অর্থ জুগিয়েছে। কারা অর্থ পাঠিয়েছে, সবই আমরা জানি। সকল ষড়যন্ত্রই জাতির কাছে স্পষ্ট।’
কোনো নিরপরাধ মানুষকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়াতে গিয়ে নিরপরাধ কাউকে জড়ানো যাবে না। অতি উৎসাহিত হয়ে যাতে নিরপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়, সে বিষয়ে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি, বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ড. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।