আদমদীঘিতে হঠাৎ ধানের দর পতন
প্রকাশ : 2021-05-10 19:13:43১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বগুড়ার আদমদীঘিতে হঠাৎ গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে মণ প্রতি বোরো ধানের মূল্য প্রায় ২০০ টাকা হারে কমে গেছে। সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর আর এ কারণেই বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষরা। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ফলন ভাল হলেও বর্তমানে বাজার দর নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এলাকার কৃষকরা। গত এক সপ্তাহ পূর্বে স্থানীয় জিরাশাইল জাতের ধান প্রকারভেদে বিক্রয় হয়েছে প্রতি মণ ১০৩০ থেকে ১০৬০ টাকা দরে। বর্তমানে সেই জিরাশাইল ধান প্রতি মণ বিক্রয় হচ্ছে মাত্র ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায়। তবে এলাকার কৃষকরা বলছেন এটা স্থানীয় ফড়িয়া মিল মালিকদের সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
জানা যায়, সোনার ফসল ঘরে আসবে দেখে, আশায় বুক বেধে ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছিল কৃষক হেলাল উদ্দিন। ধান বিক্রি করে সেই সমিতির টাকা শোধ করে আর কিছু টাকা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের পোষাক কেনার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু ধানের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি। ঈদের পোষাক কেমন করে কিনবে জানেনা সে। হেলাল উদ্দিন বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা সদর ইউনিয়নের কেশরতা গ্রামের বাসিন্দা।
কৃষক হেলাল জানান, সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে বোর ধান আবাদ করেছিল সে। আবাদও খুব ভালো হয়েছিল তার। ঈদুল ফিতরের আগে ঘরে ধান আসতে দেখে খুব খুশি হয়েছিল সে ও তার পরিবার । কিন্তু হঠাৎ ধানের দাম পড়ে যাওয়াতে নিরাশ হয়ে পড়েছেন তিনি। এই ধানের উপর চলে তার সংসার। এখন স্ত্রীর জন্য একটি শাড়ী কনতে বিক্রি করতে হবে কমপক্ষে দুই মণ ধান। ধান আবাদ করে এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে তার।
একই গ্রামের কৃষক আজিজুল বলেন, হঠাৎ ধানের দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছি আমরা। আর এখন ধানের দাম নাই, আমাদেরও দাম নাই। আমরা তো হরতাল দিতে পারি না। খালি ভোটের সময় আসলে রাজনৈতিক নেতারা আমাদের বুকে টেনে নেয়, এখন আমাদের কথা কেউ ভাবে না। আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা একটু লেখালেখি করেন আমরা তো লোকসান গুনতে গুনতে শেষ হয়ে গেলাম। প্রধানমন্ত্রী যদি এখন ধানের দামের বিষয় বিবেচনা করেন তাহলে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঠিকমত সংসার ও ধার দেনা মেটাতে পারবো।
উপজেলার নশরপুর ইউনিয়নের আরেক কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। এভাবে ধানের দাম কমতে থাকলে খুব একটা লাভের মুখ দেখবে না কৃষকরা। এতে করে ধানের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে এ অ লের কৃষকরা। তাছাড়া মনে করেছিলাম এবারের ধানের ভাল ফলনের কারণে ঈদটা হয়তো ভালো কাটবে, কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী বলেন, সরকার নির্ধারিত বাজার মূল্যে ধান সংগ্রহ শুরু করলে বাজারে ধানের মূল্য বাড়বে এবং কৃষকরাও লাভবান হবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।