আদমদীঘিতে মুহতামীমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় বন্ধ করা হলো শ্রেণি ক্লাস ও চাকুরী গেল ৫ শিক্ষকের 

প্রকাশ : 2024-10-03 17:09:05১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

আদমদীঘিতে মুহতামীমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় বন্ধ করা হলো শ্রেণি ক্লাস ও চাকুরী গেল ৫ শিক্ষকের 

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা সদরের ফয়জিয়া হামিয়ুচ্ছুন্নাহ্ দারুল উলুম ক্বাওমিয়া মাদ্রাসার মুহতামীমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করায় চাকুরী হারালো ৫ শিক্ষক। এছাড়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ওই মাদ্রাসার কিতাব বিভাগ। কিতাব বিভাগ বন্ধ করে দিয়ে মাদ্রাসার প্রায় ৫২ জন ছাত্রকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। গত বুধবার বেলা ১১ টায় মাদ্রাসার সভাকক্ষে এক জরুরী মিটিং এর মাধ্যমে এ সিন্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিতাব বিভাগের ওই ছাত্ররা মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। চাকুরী হারানো ৫ শিক্ষক হলো মাওঃ হাফিজুর রহমান, মাওঃ আহসান হাবীব, মুফতি আবু হুরাইরা, মাওঃ ইউনুছ আলী, মাওঃ আল আমিন। 

জানা যায়, উপজেলা সদরের ফয়জিয়া হামিয়ুচ্ছুন্নাহ্ দারুল উলুম ক্বাওমিয়া মাদ্রাসার মুহতামীম ইব্রাহীম দীর্ঘ দিন যাবৎ মাদ্রাসায় ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছিল। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করে আসছিল ওই মাদ্রাসার কিছু শিক্ষক ও ছাত্ররা। গেল কয়েকদিন পূর্বে ওই মাদ্রাসারা মুহতামীমের বিরুদ্ধে ছাত্ররা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করলে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সিদ্ধান্তে ওই মাদ্রাসার মুহতামীমকে সাময়িক বরখাস্ত করে রাখা হয়। পরে মাদ্রাসার মুহতামীম ইব্রাহীম বেশ কিছু ছাত্রকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিলে গত ০১লা অক্টোবর ওই মাদ্রাসার ছাত্ররা পুনরায় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। ওই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদের কারণে গত ২রা অক্টোবর বুধবার মাদ্রাসা সভাকক্ষে মুহতামীমসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে একটি জরুরী মিটিং ডাকা হয়। উক্ত মিটিং চলাকালে প্রতিবাদকারী ছাত্র ও অভিভাবকদের কথা না শুনে মাদ্রাসার বাহিরে বের করে দিয়ে গেটে তালা মেরে মিটিং সম্পন্ন করে। এছাড়া ওই মিটিংএ মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রতিবাদের ইন্ধনদাতা চিহ্নিত ৫ শিক্ষক ও কিতাব বিভাগ বন্ধ করে দিয়ে ওই বিভাগের মোট ৫২ ছাত্রদের মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 

এব্যাপারে চাকুরীচ্যুত শিক্ষক মাওঃ আহসান হাবীবসহ অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা মাদ্রাসার মুহতামীম ইব্রাহীম হুজুরের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যাহারের বিরুদ্ধে কথা বলেছি তাই আমাদের চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। তারা আরোও বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান যদি এ ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদ্রাসার শ্রেণি বন্ধ করে দেয় তাহলে ভবিষ্যতে অভিভাবকরা ওই মাদ্রাসায় ছাত্র ভর্তি করাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করবে। এছাড়া ওই মাদ্রাসা থেকে যেসব ছাত্রদের বের করে দেয়া হয়েছে তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে।

মাদ্রাসার সহ-সভাপতি ও সান্তাহার পৌরসভার সাবেক মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, গত বুধবার মাদ্রাসায় মিটিং এর পূর্বেই মাদ্রাসার কিতাব বিভাগ বন্ধের সিদ্ধান্ত ছিল। ওই কিতাব বিভাগে মাত্র ১৫ জন ছাত্র ছিল। কিতাব বিভাগের ১৫ জন ছাত্রের জন্য ৫জন শিক্ষক নিয়োগ ছিল যাহা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আমরা সেদিক চিন্তা ভাবনা করে ওই কিতাব বিভাগ বন্ধটি সাময়িক বন্ধ করে রাখা হয়েছে। মাদ্রাসার মুহতামীমের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ছাত্র-শিক্ষকদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে অনেক কিছুই হয়। তবে মুহতামীম সাহেব তার ভুল বুঝতে পেলে ক্ষমা চেয়েছেন। 

ফয়জিয়া ক্বওমি মাদ্রাসার সভাপতি আলহাজ্ব বেলাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি মাদ্রাসার কিতাব বিভাগ বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।